somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই না হলে গর্দভপুর জাগবে কি করে!

১৬ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের পরিস্থিতি অনেক দিকে ভালো আবার অনেক দিকে খারাপ। রাজনীতি-অর্থনীতি-খেলাধুলা-অপরাধ; সবজায়গায় ভালো সংবাদ আছে, আবার খারাপও আছে। উন্নয়নের মহাযাত্রায় দুর্নীতি, লুটপাট, অপকর্মেরও যজ্ঞ চলছে। রাজনৈতিক দল, সরকারী আমলা কর্মচারী, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী; ফায়দা নিচ্ছে না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। এরই মধ্যে উন্নতি চলছে। থেমে নেই কোন কিছুই।
অনেক বছর আগে যখন বিদেশীরা কাল্পনিক ছবি বানিয়েছে, তা দেখে বিভিন্ন দেশের মানুষ যেমন অভিভূত হয়েছে, অনেকেই আবার গালিও দিয়েছে উদ্ভট কাহিনীর জন্য। কিন্তু, যত দিন যাচ্ছে মানুষের ভবিষ্যত ভাবনাগুলোও তত সামনে আসতে চলেছে। করোনা আমাদের দেশে মহামারী আকার না নিলেও আতঙ্কিত হওয়ার অনেক কিছু আছে। আমাদের স্বাস্থ্যখাত যতই এগিয়ে যাক না কেন এখনো তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। দেশের মানুষ সচেতন হলেও অনেক কিছুতে এখনো অজ্ঞ। নিয়মের ব্যাপারে সবাই অনীহা দেখা যায় এখানে। কার্যত করোনা নিয়ে কি হতে চলেছে তা এখনো পরিস্কার করে বলা যাচ্ছে না।
এরই মধ্যে মাস্কের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেল। অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা গুনতে হলো। কিন্তু, কেউ সচেতন হয়ে কারও উপকারে এগিয়ে আসছে না। ভবিষ্যতে না হোক শুধু করোনার কারণে ইউরোপীয় দেশের মতো আমাদের দেশে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারফিউ বা জরুরি অবস্থা জারি করা হলে সাধারণের বাঁচার উপায় কি হবে!
প্রশাসনের অনেক কর্মচারী, যাদের আমরা কর্মকর্তা বলেই জানি, তাদের পা মাটিতে পড়ে না। ক্ষমতার অপব্যবহার তো বটেই, সাধারণ মানুষগুলো অনেক সময় ঘুষ দিয়েও কাজ সম্পন্ন করতে পারে না। কারণ, কোন কারণে যদি ওই প্রশাসনের ওই কর্মচারী আতে লাগে তাহলে উপায় নেই। কাজ হবে না। সাধারণের পকেটে টাকা থাকুক না থাকুক তার টাকা দিয়েই ভরণপোষণ চলে কর্মচারীদের। কিন্তু, সে তোয়াক্কা কে করে! অনেকে চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী হয়েও বিপুল ঐশ্বর্যের মালিক হয়ে যায় রাতারাতি। সে টাকা কার! সাধারণের।
অথচ এর মধ্যে দিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাথাপিছু আয়, শিক্ষার হার, জীবনযাত্রার মান, উৎপাদন; সব জায়গায় উন্নতি। কোথাও পিছনে ফিরে তাকাতে হচ্ছে না। অথচ, আমাদের আটকে দিচ্ছে দুর্নীতি, অসৎ কার্যকলাপ আর দাম্ভিক মনোভাব। কুড়িগ্রামে এক সাংবাদিককে জেলে ঢোকানো হলো, তার জামিনও হলো। সরকারী কর্মচারী জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হলো। আর কয়েকদিন গেলেই অন্য কোন বড় ঘটনায় খুব সহজেই ধামাচাপা পড়বে বিষয়টি। অতীতেও তেমনই হয়েছে। অথচ, এর বাইরে অনেক কিছু থেকে যাচ্ছে। কেউ ঘুষ খাচ্ছে, তো কেউ নিচ্ছে কমিশন। মূল উৎপাটন হচ্ছে না নেতিবাচকতার।
আমরা গদর্ভপুরেই বাস করি, আর মনে করি না জানি কি করে ফেলেছি। গর্দভপুর এ কারণে যে, আমরা এখনো হুজুগেই রয়ে গেছি। এখনো নিজের মেধা, শক্তির ওপর জোর নেই। আর অন্যের উন্নতি দেখেও হিংসা হয় আমাদের। রাজনীতিবিদরা বরাবরই কতশত আশার আলো দেখান, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা খুব অল্পই পূরণ হয়। উন্নয়ন দৃশ্যমান হলেও অদৃশ্যভাবে যে কতো লুট হচ্ছে তার হিসেব কেউ রাখছে না। শুধু যাদের পকেট ভারী হচ্ছে তারাই জানছে। আর মাথায় হাত পড়ছে সাধারণের।
বাজার থেকে শুরু করে সরকারী-বেসরকারী কোন কাজ লেয়াজু ছাড়া হয় না। ভোক্তারা একদিকে যেমন নিয়মিত ঠকে, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের ঝোলা ভারি হয়। এতে যেমন আমলা-রাজনীতিবিদদের লাভ হয়, উল্টো দিকে পকেটের টাকা নষ্ট হয় সাধারণের। সরকার, প্রশাসন এবং আইন-আদালত যদি সাধারণের ভালোমন্দ না দেখে তবে সে দেশে আমপাবলিক থাকে তলানিতে। কোন দুর্যোগ-দুর্ভোগে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ, কোনকিছুতেই প্রভাবশালীদের কিছু হয় না। এভাবেই চলছে।
বছরের পর বছর নীতি নৈতিকতা বর্জন করে রক্তচোষার মতো সাধারণের সর্বস্ব লুট করছে দুর্নীতিগ্রস্তরা। রাষ্ট্রপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে। অর্থাৎ এই দলেই দুর্নীতিগ্রস্তের সংখ্যা বেশি। রাজনীতিবিদরা আজ ক্ষমতায় আছেন, কাল নাও থাকতে পারেন। তখন ক্ষমতাছাড়া ব্যাক্তিরাও সাধারণের দলে যোগ দেয়। অনেককেই আবার দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। কিন্তু, সরকারী কোন কর্মকর্তা গুরুদন্ড হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায় না। বদলি, সাময়িক বহিস্কার আর আর মাঝে মধ্যে দু-চারটে মামলা হলেও তা লুপ্ত থেকে যায়। সাধারণও জানতে পারে না অসৎ অফিসারের কি হলো। গদর্ভপুর এই হালেই চলছে।
বার বার বলা হলেও দুর্নীতি, ঋণখেলাপী, অনিয়ম থামছে না। ক্ষমতা যার হাতে একবার গেছে তার পা আর মাটিতে পড়ছে না। জিরোটলারেন্স নীতি গ্রহণ করেও দেশ কতটুকু নিয়মতান্ত্রিক হয়েছে তা ভাবার বিষয়। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিও থেমে নেই। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হলেও সেসব তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে না। উপরন্তু, কৃষক যখন পেটেভাতে বাঁচতে অল্প কিছু ঋণ নিল, তার ওপরই চড়াও হলো ব্যাংক-এনজিও।
সরকারী সম্পদ জনগণের সম্পদ বলে বিবেচিত হলেও কোন খাস জায়গায় প্রতিবেশী গৃহস্থ গাছ বুনে তা বড় করলেও সেটির ওপর তা অধিকার থাকে না। অথচ, প্রতিদিন সরকারী জায়গা কিংবা রাস্তার ধারের গাছগুলো বিলীন হচ্ছে। কারা করছে এসব কাজ। উন্নয়নের নামে রাস্তা চওড়া হচ্ছে, তাতে প্রতিক্রিয়া হিসেবে হাজার হাজার গাছও কাটা পড়ছে। কে দেবে বৃক্ষহানীর এই খেসারত।
সুশাসনের জন্য গণতান্ত্রিক দেশে সরকার গঠন হয়। সরকার জনগণের ভালো-মন্দ বিচার করে বিল পাশ করে। তাতে জনগণের উপকার হয়। এইই তো কাজ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হয় তা কতটুকু। জবাবদিহীতা না থাকায় রাজনীতিবিদ কিংবা সরকারী কর্মচারীরাও নিজেদের লাটসাহেব বলেই মনে করেন। যদিও সেই প্রথা এখনো টিকে আছে। তাহলে তো গর্দভপুর জাগবেই।
আমি ভালো মানুষ নই বলেই সহ্য করি। আর মানুষ হয়নি বলেই হয়তো গর্দভপুরে আবির্ভূত হয়েছি। এখন আর দোষ-গুণ বিচার করবার সময় কোথায়। গায়ের চামড়া গণ্ডারের মতো হয়ে গেছে। সব যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতাও আয়ত্ব হয়ে গেছে। কেউ গালি কিংবা বাক্যবাণে বিদ্ধ করলেও এখন আর জ্বালাপোড়া করে না। শুধু ভাবি, এই না হলে গর্দভপুর জাগবে কি করে!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:১৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×