আমার বাবা অনেকবার বলেছেন, ‘১০-১৫ লাখ টাকা লাগলেও লোকজন ধরে একটা সরকারি চাকরি নিয়ে নাও। অথবা, আমি চেষ্টা করে একটা চাকরি নিয়ে দিই।’ আমিও নাছোড়বান্দা, তার মুখের ওপর বলে দিই, ‘প্রয়োজনে রিক্সা চালাতে বলো আপত্তি নেই। কিন্তু, ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়ার কথা বলো না।’ তিনি নিজেও সারাটা জীবন সৎ পথে থেকে ৬৫ বছর বয়সেও কাজ করে পেটে ভাতে টিকে আছেন। বিপুল ঐশ্বর্য উপার্জনের সুযোগ থাকলেও তার পথ থেকে বিচ্যুত হন নি।
তিনিই কাজ শিখিয়েছেন এমন অনেকেই রাজধানীর কোটিপতি। তারও সুযোগ ছিল। কিন্তু, ইচ্ছে ছিল না। অথচ, এজন্য তার বড় ছেলের ভীষণ মনোকষ্ট। আর আমি ছোট ছেলে খেটে খাওয়া মানুষ। বিপুল সম্পদের স্বপ্ন দেখি না। প্রয়োজনে যে কোন কায়িক শ্রমে রাজি। কিন্তু, কারও দু’আনা মেরে খেতে নারাজ। আর এ জন্যই হয়তো জীবনে ভোগ বিলাসিতা হবে না। দুবেলা কয়টা ডালভাত হলেই হয়।
কিন্তু, বিপত্তিতো এখানেই। ডালভাত রোজগার করতে গেলেই তো সেখানে ভাগ বসানোর লোকের অভাব হবে না। কারণ, দেশে চোরের অভাব নেই। আমি সৎ পথে উপার্জন করতে গেলেও সেখান থেকে মাসোয়ারা দিতে হবে। মাত্র এক শত জমির নামজারি করতে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন ভূমি কর্মকর্তা। ব্যবসা করতে গেলে ট্যাক্স ভ্যাটের বোঝা দাড়িয়ে যায়। এমনকি বাড়ির সামনে রাস্তায় যে চারটে নারকেল গাছ এবং সুপারি গাছ লাগিয়েছি তাতেও হাত দিতে নিষেধ করেছেন এলজিআরডির প্রকোশলী। ৩০ বছর আগে থেকে যে খালে ডালপালা ফেলে আমার বাপ দাদা মাছ খেয়ে আসছে তাতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন মৎস কর্মকর্তারা। সাধের কাঁঠাল এবং কামরাঙা গাছ দুটোও বড় হতে পারে না পল্লীবিদ্যুতের কর্মীদের জ্বালায়। তাই মাঝে মধ্যেই মনে হয়, চোরের দেশে চুরিই উত্তম। আমার বাপ দাদা কেন চুরি বিদ্যায় পারদর্শী হলো না, কিংবা আমিই বা কেন এখনো এ কাজে দক্ষতা অর্জন করছি না। চেষ্টা করলে কেউ অকৃতকার্য হয় না। আমিও ভাবি এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেবো কি না, পারদর্শী হওয়ার চেষ্টা করবো কি না?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৪৭