somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গদবাধা জীবনে অন্য কিছুর সন্ধান

০৪ ঠা মে, ২০২০ রাত ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গদবাধা জীবন যাপন করি আমরা সবাই। জন্মের পর থেকে ঘুরে ফিরে একই কাজ। আপনি হয়তো আলাদা, কিন্তু আমি নিজেকে একজন সৈন্যই ভাবি সেনাপতি নয়। সকালে ঘুম থেকে উঠি, এই সেই করি, খাই, ঘুমাই, আবার ঘুম থেকে উঠি। একেকজন একেক ধরণের কাজ করলেও সবাই একই চক্রে ঘুরপাক খায়। এখান থেকে পালানোর উপায় নেই।
নিত্যদিনের নানান সমস্যা, আনন্দ বেদনা নিয়েই সবার বাস। কেউ রাত জেগে কাজ করে দিনে ঘুমায়, আবার কেউ এর উল্টোটা করে। কাজ ওই একই। জীবনটাও গদবাধা। ভাবছেন, ভালোই তো আছেন। কিন্তু, তা কতদিন? এই যায়। যে কোন সময় আসল বিপদ ঘটে যাবে। দেখতে দেখতে শরীরটা অকেজ হয়ে যাবে। উপায় নেই আটকানোর। কতশত মহাবিজ্ঞানী মহাগবেষক এ নিয়ে গবেষণা করেছেন, কিন্তু জীবনের বিধান উল্টানোর হিসাব তাদের আয়ত্তের বাইরেই থেকে গেছে। তবে হ্যাঁ, আপনার যে তৃতীয় চোখটি আছে তা কিন্তু অনেক কাজের। চাইলেই দেখতে পারছে যা খুশি তাই। সেটাকে কাজে লাগালে হয়তো ভালো ফল পেতেও পারেন। মর্জি আপনার।
বলছি গদবাধা জীবন নিয়ে। আমার মতো ঠিক আপনাকেও কোন মা জন্ম দিয়েছেন। যে কারণে সবুজ সুন্দর পৃথিবীটা আপনি ভোগ করতে পারছেন। আপনিও কাওকে জন্ম দিয়েছেন কিংবা দেবেন। তারাও একই কাজ করবে। এভাবেই গোটা দুনিয়ায় শত কোটি মানুষ। ওই একই চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্ব। এখানে যারা আছেন বা চলছেন সবাই অনেকটা পুতুলের মতো। সময় হলে আসে আবার চলেও যায়। আসল গন্তব্য অজানা। অনেকে এমনই মনে করেন। অর্থাৎ, গদবাধা এই জীবন থেকে মুক্তির উপায় নেই। কোন না কোন এক সময় আপনাকে এখানে ফিরে আসতেই হবে, যেতেও হবে।
শ্রোতা যদি বিরক্ত হয় তাহলে বক্তার মূল্য শূন্য। আর শ্রোতা যদি মনোযোগী হয় তাহলে সার্থক বক্তা। আমার প্রয়াসও সেখানেই। প্রতিটি সময় এমন কিছু খুঁজি যা গদবাধার থেকে একটু আলাদা। নিজেকেও তাই গদবাধা এই জীবনে অন্যরকম কিছু দিতে চাই। একটি কবিতায় রবার্ট ফ্রস্ট দুটো রাস্তা দেখেছিলেন। একটিতে অনেক লোকের চলাচল, পরিস্কার। আরেকটি কন্টকময়, অনেকটাই লোকশূন্য। অনেক চিন্তা করে সে পরের রাস্তাটি বেছে নিয়েছিলেন। জানি না কেন, তবে মনে হয়, সেও অন্য কিছু চেয়েছিলেন। যা অন্তত গদবাধা হবে না।
এই সময়ে সবাই ভাইরাসটি নিয়েই মাতামাতি করছে, ভয়ে কুঁচকে যাচ্ছে। অথবা, ঘরে বসে মাথা ব্যাথা ছাড়া কিছু করার নেই। বেশিরভাগেরই তাই। রাস্তায়ও নেমেছেন অনেকেই। বাঁচার কি আকাঙ্ক্ষা! মৃত্যু জেনেও, আমারও আছে। কারণ, আমিও কোন না কোনভাবে গদবাধা জীবন উপভোগ করি। ঠিক এই সময়েই আবার অন্য রকমও ভাবি। অর্থাৎ গদবাধা চিন্তার বাইরে। মরেই যাই। একবার বাসের নিচে, অন্যবার বালু বোঝাই বড় নৌকার নিচে গিয়ে খুব কাছ থেকে জীবন দেখেছি। তাই জীবনটার ওপর লোভ হয় না। আবার হয়ও। দুই মন দুই আশা নিয়েই যত জ্বালা। কিন্তু কোন উপায়ও নেই।
এক ভদ্রলোক সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঈশ্বরের নাম করতে থাকেন। অথচ, সারাটা দিনেও তার মুখ থেকে একটা ভালো কথা বের হয় না। ভালো চিন্তা তো দূরে থাক। খাওয়া বা ভোগের চিন্তাই তার কাছে মূখ্য। সে ভদ্রলোক এই কারণে যে আমি তাকে মূল্যায়ন করি। মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়াটাই তা সবচেয়ে বড় যোগ্যতা। সেও একটি গদবাধা জীবন পালন করেন যেখানে ভোগ ছাড়া তার অন্য চিন্তা আসে না। কিন্তু, প্রতিদিন ওই লোক শৌচাগারে গিয়ে রক্ত ঝরান। তাতেও তার ত্যাগের বাসনা আসে না। এও তো গদবাধা জীবনেরই একটি অংশ। ত্যাগে নয়, আসলে ভোগেই সুখ। কিন্তু কিভাবে? কোন না কোন উপায়ে ত্যাগ করতেই হয়।
আমি অধম, তাই বলে আপনি উত্তম হবেন না কেন? গদবাধা জীবনেও অনেক ভালো কিছুর সন্ধান আছে। তা খুঁজে পাওয়ার জায়গাও আছে। শ্রান্ত ভ্যানওয়ালা ভারি জিনিস বহন করে ঢালু জায়গা অতিক্রম করছেন। আপনি ঠিক তার পিছনে। গায়ে শক্তি আছে একটু ধাক্কা দিলেই বেচারা উপকার পায়। শক্তির অপচয় কিংবা কোন চিন্তা না করেই ধাক্কা দিলেন । বিশ্বাস করুন, ঢালু জায়গাটা উঠে আপনার দিকে ফিরে লোকটি যে হাসিখানা আপনাকে দেখাবে তা অন্যকিছুর বিনিময়ে পাওয়া যায় না। গদবাধা জীবনে এটুকুতেও সার্থকতা আসে। অথবা, এক ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পর গ্রহীতার আত্মীয় আপনার হাতে একটি ডাব দিয়ে যে দৃষ্টিতে তাকাবে তাতেও জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। গদবাধা এই জীবনে এর থেকে আর কি-ই-বা চাওয়ার থাকতে পারে।
এবার একটি গাছ লক্ষ্য করুন, তারও গদবাধা জীবন। একসময় তারও ধ্বংস হয়। অথচ, তার উত্তরসূরিরা তাকে টিকিয়ে রাখে। আপনি আমিও হয়তো থাকবো কারো মাঝে। কিন্তু, গদবাধা এই জীবন চলাকালীন অন্য কিছুর সন্ধান করা উচিত। যেখানে অন্তত গদবাধা জীবন নিয়ে আপনাকে আমাকে দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না।
সব থেকে সহজ রাস্তা, এতো কিছু ভাবারই দরকার নেই। যা আছে তা নিয়েই আনন্দে থাকার চেষ্টা করুন। এখানে এসে, এই লেখা পড়ে শুধু শুধ কেন আপনি গদবাধা এই জীবনের কয়েক মূহুর্ত সময় নষ্ট করবেন???

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০২০ রাত ২:৪০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×