
অভ্র’র আবিষ্কারক মেহেদী হাসান। তাঁর আবিষ্কৃত সফটওয়্যার যতো সহজে কম্পিউটারে বাংলা লেখার দীর্ঘ ঝক্কি-ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়েছে।
"অভ্র ভাষা হোক উন্মুক্ত "
কপি করে লেখা ---
২০০৩-সাল। বাংলা একাডেমিতে চলছে বইমেলা। সেই বইমেলায় বাংলা ইনভেনশ থ্রু ওপেন সোর্স, সংক্ষেপে বায়োস একটি সংগঠন অংশ নিয়েছিলো। সংস্থাটি বইমেলায় এসেছিলো একটি প্রদর্শনী করতে। এই সংগঠনের সদস্যরা মেলায় বাংলায় লোকালাইজ করা বাংলা লিনাক্স একটি লিনাক্স ডিস্ট্রোর প্রদর্শনী করেছিলো। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো কম্পিউটারে বাংলা লেখা সহ টাইটেল মেনু ও ট্যাবের নামকরণ বাংলায় লেখা। ওই সিস্টেমটি নজর কাড়ে সবার, পরিচিতি পায় বায়োস।
সেদিন সেই প্রদর্শনী একজন ক্ষুদে দর্শনার্থী ছিলেন মেহেদী। বায়োসের প্রদর্শনী দেখে তাঁর মাথায় আসে এক অন্যরকম চিন্তা। কিভাবে এমন একটি সহজ সমাধান বের করা যায় যার মাধ্যমে কম্পিউটারে কোন ঝামেলা ছাড়াই বাংলা লেখা যাবে।
২০০৩-এর বইমেলার সেই ছোট্ট ছেলেটিই ২০১৪ সালে অভ্র সফটওয়্যারের আবিষ্কারক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র মেহেদী হাসান।
অভ্র’র আবিষ্কারে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে মেহেদী হাসানকে। তাঁর কম্পিউটার উইনডোজ বেজড হওয়ায় লিনাক্স নিয়ে কাজ করাটা তাঁর জন্য দুরুহ হয়ে ওঠে। বাংলা লিনাক্সের ওই ফন্টটি ইনস্টল করেন তিনি। এসময়ই তাঁর চোখে পড়লো অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কিবোর্ডের ইনসার্ট ক্যারেক্টার ব্যবহার করে ওই ফন্টের ক্যারেক্টারগুলোকে বেশ ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আরো কষ্টকর ছিলো যুক্তাক্ষর লেখা।
এবার তিনি ভাবলেন, একটি কীবোর্ড এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে। তিনি ভেবেছিলেন কোথাও থেকে একটি কীবোর্ড নামিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তা আর হলো না। তিনি বুঝতে পারলেন, এমন কিবোর্ড পেতে হলে তাকে কিবোর্ড তৈরি করতে হবে। কিন্তু কীভাবে সম্ভব সেটা?
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি ইউনিকোডভিত্তিক কিবোর্ড বানানোর চেষ্টা, দুটোই সমান্তরালে চলছে।
কষ্টের ফলস্বরূপ মাইক্রোসফটের ডটনেট ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে উইনডোজের জন্য একদিন বানিয়ে ফেললেন একটি প্রোটোটাইপ। কিন্তু তাতেও হলো না সঠিক সমাধান। ভারতে আয়োজিত বাংলা ফন্ট তৈরির প্রতিযোগিতায় তাঁর পাঠানো প্রটোটাইপ বার বার ক্র্যাশ করছিলো।
সমস্যা সমাধানে তিনি ক্ল্যাসিক ভিজু্য়্যালের ওপর ভিত্তি করে নতুন আরো একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করলেন। ফলে ক্রাশের হাত থেকে মুক্তি পেলো প্রোটোটাইপটি। স্বার্থক হলো তাঁর সেই বইমেলায় বায়োসের তৈরি ফন্ট দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করা দীর্ঘযাত্রা।
অভ্র’র যাত্রা শুরুতে মেহেদী একা থাকলেও শেষে ধাপে ধাপে যুক্ত হয়েছেন অনেকেই, তৈরি হয়েছিলো অভ্র টিম। অভ্র’র ম্যাক ভার্সন প্রস্তুতকারী রিফাত উন নবী, অভ্র’র কালপুরুষ ও সিয়াম রুপালী ফন্টের জনক সিয়াম, অভ্র’র বর্তমান ওয়েবসাইট ও লিনাক্স ভার্সন প্রস্তুতকারী সারিম, ভারতের নিপন এবং মেহেদীর সহধর্মিনী সুমাইয়া নাজমুনসহ অনেকের কষ্টের ফসল আজকের অভ্র।
অনেক কারণে অভ্র কিবোর্ডকে বেছে নিয়েছেন ব্যবহারকারীরা। অভ্র দিয়ে যে কোন কি-বোর্ড লে-আউট সাজানো যায়। অভ্র’র কিবোর্ড সফটওয়্যারের সাথে দেওয়া কিবোর্ড লে-আউটের মাধ্যমে কাস্টম লে-আউট নিজের মতো বানানো যায়।
অভ্র একটি ফ্রি সফটওয়্যার, সবার সাথে সহজেই কপি শেয়ার করা যায়। অপরদিকে বিজয় এন্ড ইউজার লাইসেন্স এগ্রিমেন্ট লাইসেন্স দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
লিনাক্স ও আইওএস এ সহজেই অভ্র ব্যবহার করা যায়।
অভ্র’র যে কোন সমস্যা, অভিজ্ঞতা ও পরামর্শের জন্য ওমিক্রন ল্যাবের মাধ্যমে সব ধরনের গ্রাহক সাপোর্ট দেওয়া হয়। এসব বিষয়গুলো অভ্র’র ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়িয়ে তুলেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



