somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসেন সানন্দে আদালত অবমাননা করি: যে দুটি লেখার জন্য মাহমুদুর রহমান ৬ মাসের কারাদণ্ড পেয়েছেন, কিন্তু ক্ষমা প্রার্থনা করেন নাই

১৯ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
চেম্বার মানেই সরকারপক্ষে স্টে



অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের দেয়া মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা স্থগিত করলেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ মোজাম্মেল হোসেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া বিদেশে যেতে বাধা না দিতে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা গতকাল স্থগিত করেছেন চেম্বার জজ আদালত। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সম্পর্কে অসত্য তথ্য দিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া আদেশের স্থগিতাদেশ চান। মিথ্যা ও ভুল তথ্যের বিষয়টি চেম্বার জজ আদালতের দৃষ্টিতে আনার পরও কোনো কাজ হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের চাহিদা অনুযায়ী স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন প্রতিনিয়ত মঞ্জুর করা হচ্ছে চেম্বার জজ আদালতে। সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠতম আইনজীবী সাবেক বিচারপতি টিএইচ খানের কাছে আদালত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমার দেশকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেয়াটাই যেন চেম্বার জজ আদালতের মূল কাজ। সরকারের পক্ষ থেকে স্থগিতাদেশ চাওয়া হলেই হলো। অনেকটা মুখ দেখেই চেম্বার জজ আদালতে ইদানিং স্থগিতাদেশ দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রবীণতম এই আইনজীবী।
আদালতে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে স্থগিতাদেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন আমার দেশকে বলেন, কেউ আদালতকে মিথ্য বা ভুল তথ্য দিলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ বাতিল করে দিতে পারে। এ বিষয়ে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার রয়েছে সনদ বাতিল করে দেয়ার। তিনি বলেন, আদালতে ভুল বা মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে কোনো কিছু হতে পারে না। সত্য উদ্ঘাটন করে বিচার করাই হচ্ছে আদালতের দায়িত্ব। সুতরাং মিথ্যা বা ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোনো আদেশ হতে পারে না।
এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশনা স্থগিতাদেশ চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে দায়ের করা আবেদনে বলা হয়, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ছয় বছর সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এতে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আবেদনে আরও বলা হয়, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে সৌদি আরব যেতে দেয়া হলে তিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাবেন। জবাবে মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, আদালতকে জানানো হয়েছে চারদলীয় জোট সরকারের সময় তিনি কখনও কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন না। তখন তিনি বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত ছিলেন বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে দেয়া তথ্য সম্পূর্ণ অসত্য বলে উল্লেখ করেন তিনি। মীর নাসির বলেন, চেম্বার জজ আদালতকে জানানো হয়েছে, তিনি ১৯৯৫ সালের ২৩ ফেবু্রয়ারি থেকে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তখন জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগ একসঙ্গে তত্কালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। তিনি বলেন, মাত্র সোয়া বছর তিনি সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত ছিলেন ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ সালের উল্লেখিত তারিখ পর্যন্ত। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আরোহণের দিনই তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়। সুতরাং এসব বিষয় সরকারের ভালো জানা থাকার কথা। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে কখনও তিনি রাষ্ট্রদূত ছিলেন না এবং কখনও তিনি ৬ বছর সৌদি আরবে ছিলেন না। তার বক্তব্য আমলে না নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল দফতরের অসত্য তথ্যকে আমলে নিয়ে চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করে দেয় বলে জানান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের আবেদনে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার কিছু বিষয়কেও গোপন করা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া বিদেশে যেতে বাধা না দেয়ার জন্য। অথচ অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে চেম্বার জজের কাছে দায়ের করা আবেদনে আইনগত প্রক্রিয়ার বিষয়টি উল্লেখ না করে গোপন করা হয়েছে। এসব ভুল বা মিথ্যা তথ্য চেম্বার জজের দৃষ্টিতে আনার পরও কোনো কাজ হয়নি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল তিনি সৌদি আরব যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে যান। সেখানে তাকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তাকে জানানো হয় ওপরের ক্লিয়ারেন্স না থাকায় তাকে যেতে দেয়া যাচ্ছে না। সৌদি আরবে তার স্ত্রী, কন্যা ও বোনের কবর রয়েছে। ওমরা হজ পালন, রাসুল (সা.)-এর রওজা জিয়ারত ও তার স্ত্রী, কন্যা ও বোনের কবর জিয়ারত করার কথা ছিল। এজন্য তাকে এক মাসের ভিসা দিয়েছিল সৌদি দূতাবাস। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে তিনি রিট অবেদন করেন।
বিদেশে যেতে বাধা দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে সৌদি আরব যেতে বাধা না দেয়ার নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের স্থগিতাদেশ চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে আবেদন করা হয় চেম্বার জজ আদালতে। গতকাল চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের আদালতে শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য দুই ছাত্রকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি জামিন দিয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ। জামিনের আদেশে বলা হয়েছিল, পরীক্ষা শেষ হলে তারা সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবার আত্মসমর্পণ করবেন। জামিন আদেশের সার্টিফাইড কপি পৌঁছার পরও অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে ফোন করা হয়েছে মর্মে জানিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের মুক্তি দেয়নি। ৬ দিন পর ১৫ ফেবু্রয়ারি চেম্বার জজ দুই পরীক্ষার্থীর জামিন স্থগিত করে দেয়। এতে চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ আদর্শ মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী মাসুম ও আলজাবের ইনস্টিটিউটের ছাত্র লুত্ফুল কবির মুক্ত অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে রিমান্ডে পুলিশের হেফাজতে না নিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দেয় হইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ। পরের দিনই হাইকোর্ট বিভাগের এই নির্দেশনা স্থগিত করে রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের আদেশ বহাল করেন চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে চেম্বার জজ আদালতে শুনানিকালে আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন বাবর অসুস্থ। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের সামনেই বলেন, বাবর মারা গেলে হত্যা মামলা কইরেন। তারপরও হাইকোর্ট বিভাগের আদেশটি স্থগিত করে পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে দিয়েছেন চেম্বার জজ। অনুরূপভাবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুকে নারায়ণগঞ্জের একটি বোমা হামলা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করে। পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডের বৈধতা নিয়ে একটি রিভিশন আবেদন করেছিলেন তিনি। হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ শুনানি শেষে তাকেও রিমান্ডে পুলিশ কাস্টডিতে না নিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়। এটিও চেম্বার জজ আদালতের কাছে গেলে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করে দেয়া হয়।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার আরিফকে রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে না নিয়ে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগ। তাকে পুলিশ কাস্টডি থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারাগারে নিয়ে আসার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করায় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের আইনজীবীকে তিরস্কারও করেছিল। সেই আদেশটিও স্থগিত করে পুলিশ কাস্টডিতেই জিজ্ঞাসাবাদে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বহাল করেন চেম্বার জজ।
গত সপ্তাহে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চিকিত্সার জন্য বিদেশ যেতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার জজ আদালত।
এছাড়া সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় জামিন পাওয়া আসামিদের না ছাড়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার জজ আদালতে স্থগিতাদেশ চায়। এতে ৩ শতাধিক মামলার আসামির জামিন চেম্বার জজ আদালত স্থগিত করে দেয়।
জরুরি অবস্থার সরকারের সময়ও হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করে দিত আপিল বিভাগ। এ নিয়ে আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আদালতের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে।
উল্লেখ্য, সুপ্রিমকোর্ট রুলস অনুযায়ী কোনো মামলা আপিল বিভাগে যাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে প্রথমে চেম্বার জজ আদালতে উপস্থাপন করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ বা নির্দেশনার বিরুদ্ধে প্রথমে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করা হয়। চেম্বার জজ সেই আবেদনের বিষয়ে যে কোনো রকমের আদেশ দেয়ার এখতিয়ার রাখেন। এছাড়া আপিল বিভাগের কোনো মামলা শুনানির তালিকাভুক্ত করতে বা শুনানির জন্য দিন ধার্য করতে প্রথমে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করতে হয়। প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে চেম্বার জজ হিসেবে দায়িত্ব দেন।

মন্তব্য প্রতিবেদন : স্বাধীন বিচারের নামে তামাশা



চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আইনের শাসন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে এই রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিন অন্তত একটি করে সেমিনারের আয়োজন করা হতো। তত্কালীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে উদগ্রীব স্বার্থান্বেষী বিদেশি মহলের অর্থায়নে এ দেশের চিহ্নিত পরজীবী শ্রেণী সেসব সেমিনার আয়োজনের দায়িত্বে থাকত। সুশাসন নামটি ফেরি করার সুবিধার্থে নতুন নতুন সংগঠনও গজিয়ে উঠেছিল সুশীল(?) সমাজের চাঁইদের সমন্বয়ে। জেনারেল মইন ও তার শাসন ব্যবস্থার অনুসারী শেখ হাসিনার যৌথ শাসনের সাড়ে ৩ বছরে দেশে প্রকৃতপক্ষে জঙ্গলের আইন চললেও আইনের শাসনের দেশি-বিদেশি ধ্বজাধারীদের টিকিটিরও আর নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। সম্ভবত তাদের বিবেচনায় শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশে আইনের শাসন ও সুশাসন উভয়ই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বাংলাদেশের জনগণ সংবিধানে প্রদত্ত সব অধিকার বিনা বাধায় ভোগ করতে পারছে। সুশীলদের(?) এ জাতীয় পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিবেচনাবোধ আমাদের মতো আমজনতার বুদ্ধির অগম্য হওয়ারই কথা। ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে আমরা বুঝি, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্তই হচ্ছে রাজনৈতিক পক্ষপাতশূন্য, বিবেক দ্বারা তাড়িত বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিচার ব্যবস্থা। ২০০৭ সালের জানুয়ারির ১১ তারিখে জেনারেল মইনের ক্ষমতা দখলের পর থেকে এ দেশের বিচার বিভাগে যে পচনক্রিয়া শুরু হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে তা দ্রুততর হয়ে এখন সেখান থেকে রীতিমত দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এই মন্তব্যের মাধ্যমে আমি এ ধরনের কোনো অসার দাবি করতে চাচ্ছি না যে, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশের আদালতপাড়ায় কোনোই রাজনীতিচর্চা হতো না, কিংবা জায়গাটি একেবারে সুবিচারের পীঠস্থানে পরিণত হয়েছিল। তবে এটুকু বোধহয় সবাই মানবেন যে, মূল্যবোধের অবক্ষয় চলমান থাকলেও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তখন পর্যন্ত অন্তত খানিকটা চক্ষুলজ্জা অবশিষ্ট ছিল। কিংবা তারও আগে শেখ হাসিনার প্রথমবারের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় উচ্চ আদালতের মেরুদণ্ড এতটাই শক্ত ছিল যে, তারা তত্কালীন দুর্বিনীত প্রধানমন্ত্রীকে Wrong Headed (বিকৃত বুদ্ধি) অভিহিত করতেও কোনো ধরনের দ্বিধা করেননি। ভাবতে অবাক লাগে, বর্তমানের বিচারপতিরা উচ্চ আদালতের একই আসনে বসলেও পূর্বসূরিদের কাছ থেকে বিচারকের সাহস, নিরপেক্ষতা, সংবিধানের প্রতি আনুগত্যবোধ কিছুই শিখতে পারেননি। সমাজের নানা স্তরের অবক্ষয় মেনে নেয়া গেলেও বিচার বিভাগের অবক্ষয় বিনা প্রতিবাদে মুখ বুঝে সহ্য করা হলে এই রাষ্ট্রের বিনাশ অনিবার্য।
এক-এগারোর পর থেকে অব্যাহতভাবে বাংলাদেশে নজিরবিহীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বেশুমার ঘটনা ঘটে চলেছে। জেনারেল মইন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিচার বিভাগের নানা দুর্বলতাসৃষ্ট অসহায় আত্মসমর্পণের সুযোগ নিয়েই এই নিপীড়ন চালাতে পেরেছেন বা পারছেন। জরুরি সরকারের সময় গুটিকয়েক সাহসী ও বিবেকসম্পন্ন বিচারককে ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচনা করলে তত্কালীন বিচার বিভাগ একটি অবৈধ ও জুলুমবাজ সরকারের সহায়তাকারীর ভূমিকায় নিঃসন্দেহে অবতীর্ণ হয়েছিল। নির্বাচিত সরকারের আমলে অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫-এ বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে :
‘অনুচ্ছেদ-৩৫ : বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ।—
১) অপরাধের দায়যুক্ত কার্যসংঘটনকালে বলবত্ ছিল, এইরূপ আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে না এবং অপরাধ-সংঘটনকালে বলবত্ সেই আইন বলে যে দণ্ড দেওয়া যাইতে পারিত, তাহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দণ্ড দেওয়া যাইবে না।
২) এক অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারিতে সোপর্দ ও দণ্ডিত করা যাইবে না।
৩) ফৌজদারি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচারলাভের অধিকারী হইবেন।
৪) কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাইবে না।
৫) কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না।
৬) প্রচলিত আইনে নির্দিষ্ট কোন দণ্ড বা বিচারপদ্ধতি সম্পর্কিত কোন বিধানের প্রয়োগকে এই অনুচ্ছেদের(৩) বা (৫) দফার কোন কিছুই প্রভাবিত করিবে না। ’
বিগত সাড়ে ৩ বছরে নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত উপরোক্ত ধারাটির প্রত্যেকটি নির্দেশনা জরুরি ও নির্বাচিত উভয় সরকারই নির্দ্বিধায় অমান্য করেছে। হাইকোর্টের একজন মাননীয় বিচারপতি বর্ণিত সোনার শিকলে বাঁধা স্বাধীন বিচার বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করার কোনো প্রচেষ্টা গ্রহণ তো দূরের কথা, নিজেরাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারকে নির্যাতনের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। বছরের পর বছর কোনো ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া কেবল সরকারের বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে দুগ্ধপোষ্য শিশু, বালক, মহিলা নির্বিশেষে অসংখ্য ব্যক্তিকে বিনাবিচারে আটক রাখা হলেও উচ্চ আদালত চোখে কালো পট্টি বেঁধে যার যার আসন রক্ষা করতে ব্যস্ত। অত্যাচারিতদের মধ্যে কেউ কেউ সৌভাগ্যক্রমে হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করলেও চেম্বার নামক ফাটকে আবার বিশাল তালা মেরে দেয়া হচ্ছে। হাইকোর্টের বিচারিক অধিকার কেড়ে নেয়ার যে প্রক্রিয়া মইনের চেম্বার জজরা আরম্ভ করেছিলেন তা শুধু অব্যাহতই নেই, বর্তমানে হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতিদের প্রদত্ত রায় নিয়ে অবমাননাকর ছেলেখেলা করা হচ্ছে। এই সংক্রান্ত একটি সংবাদ ‘চেম্বার মানেই সরকার পক্ষের স্টে’ শিরোনামে ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার অপরাধে আমার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়েছে। দেশের উচ্চতম আদালতে বিচারাধীন বিষয় সম্পর্কে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কোনো নাগরিক মন্তব্য করার অধিকার রাখেন না। আমারও সেই সুযোগ নেই। শুধু এটুকু আগাম বলে রাখছি, সত্য কথা প্রকাশের অপরাধে কারাগারে যেতে আমি বরং গৌরবই বোধ করব। কারাগার থেকে জীবিত ফিরে আসতে পারলে আবার সত্য কথা বলব এবং লিখব, প্রয়োজনে পুনর্বার কারাগারে যাব।
আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতিদের আইনের নজির দেখানোর ধৃষ্টতা আমি রাখি না। তবে পাঠকের জ্ঞাতার্থে নাসরীন কাদের সিদ্দিকী বনাম রাষ্ট্রের একটি মামলায় আপিল বিভাগ প্রদত্ত রায়ের অংশবিশেষ এখানে প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় উদ্ধৃত করতে চাচ্ছি,
‘‘A question of fact or mixed question of fact and law ought to be raised in the High Court Division for a proceeding under Article 102 of the Constitution. An appellant should not ordinarily be allowed to convert the Appellate Division into a court of first instance.
[Nasrin Kader Siddiqui vs Bangladesh 44 DLR(AD)16]”
(তথ্যসংক্রান্ত প্রশ্ন অথবা তথ্য ও আইনের বিশ্লেষণ মিশ্রিত প্রশ্ন সংবিধানের ১০২ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট ডিভিশনে উত্থাপিত হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আপিল বিভাগকে প্রাথমিক বিচারিক আদালতে পরিণত করার সুযোগ গ্রহণ করা থেকে মামলার আপিলকারীকে সাধারণভাবে নিবৃত্ত করতে হবে।)
উপরোক্ত রায়ের আলোকে এক-এগারো পরবর্তী চেম্বার জজদের রায়ের বিশ্লেষণ করা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই অত্যন্ত জরুরি। হাইকোর্ট ডিভিশন থেকে সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের রুল ও স্থগিতাদেশ জারি হওয়া মাত্র চেম্বারে সেই রায় স্থগিত করার প্রবণতা বিগত সাড়ে ৩ বছরে বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী হাইকোর্ট ডিভিশনে তথ্যের সত্যতা ও প্রাসঙ্গিকতা এবং আইনি প্রশ্ন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণের সুযোগ সঙ্কুচিত করে ইনসাফের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। কোনো মামলায় হাইকোর্ট ডিভিশন রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেয়ার পর আপিলের অবশ্যই যৌক্তিকতা থাকতে পারে। কিন্তু সরকারকে হাইকোর্ট বিভাগের রুলের জবাব দেয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে বাঁচানোর অপচেষ্টাকে আর যাই হোক আইনের শাসন বলা যেতে পারে না। এতে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও বিশ্বস্ততা ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের কাঠামোও দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের যৌথ, সাংবিধানিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিল। সেই স্বাধীনতার খোলসের আড়ালে বিচার বিভাগের এমন বন্দিদশা এদেশে আমরা আগে কখনও দেখিনি। মরহুম শেখ মুজিবের ফ্যাসিবাদী শাসনামলেও রক্ষীবাহিনীর কার্যক্রমকে বেআইনি ঘোষণা করে রায় দেয়ার মতো বিবেকসম্পন্ন ও সাহসী বিচারকরা উচ্চ আদালতে ছিলেন। এদেশের নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সেই সময় হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ পরস্পরকে সহযোগিতা করতেন। এক-এগারো দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার পাশাপাশি উচ্চ আদালতের দুই বিভাগকেও অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিপক্ষের ভূমিকায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এবং এর সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে আদালতপাড়ায় নজিরবিহীন দলীয়করণ। সামগ্রিক অবস্থার এতটাই অবনতি হয়েছে যে, উচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারকবৃন্দ তাদের নিয়োগপ্রাপ্তির সংবর্ধনার আনুষ্ঠানিক বক্তৃতায় সংবিধান ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করার পরিবর্তে দলীয় নেতানেত্রীদের বন্দনাতেই অধিকতর সময় ব্যয় করেন।
একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে মাননীয় বিচারকদের সঙ্কীর্ণ দলীয় চিন্তাধারা অতিক্রম করে কেবল সংবিধান ও দেশের আইন দ্বারা পরিচালিত হওয়া অত্যাবশ্যকীয়। আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিচার বিভাগকে দলীয়করণের যে মন্দ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে সেখান থেকে তারা নিবৃত্ত না হলে জাতি হিসেবে আমরা ক্রমেই অনিবার্য ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাব। আমাদের দেশের দুর্গতির জন্য এক সময় ব্যবসায়ীদের দায়ী করা হতো। তারপর আমলা এবং রাজনীতিকদের। একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শেষ ভরসার স্থল বিচার বিভাগ এবার কলঙ্কিত হয়েছে। বিচারপতি নিয়োগ থেকে শুরু করে বিচারকদের আচার-আচরণ, সর্বত্র অবক্ষয়ের সুস্পষ্ট চিহ্ন দৃশ্যমান। এই অনাচারের পরিণামে জাতি হিসেবে সম্মিলিতভাবে শেষ পর্যন্ত হয়তো চরম মূল্যই আমাদের দিতে হবে। বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানে অন্যায়-অবিচারের ভয়াবহ বিস্তৃতি এক সময় দোষী নির্দোষ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সব নাগরিককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে যখন ক্যালদীয়রা পবিত্র নগরী জেরুজালেম আক্রমণ করতে ধেয়ে আসছিল, সেই সময়ের নবী যেরেমিয়া আক্ষেপ করে বলেছিলেন, জাতির সঞ্চিত পাপ সমস্ত জাতিকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় (অভিশপ্ত নগরী, সত্যেন সেন)।
গত শনিবার সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের এক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বক্তৃতাকালে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, এক-এগারোর ভূত এখনও সুপ্রিমকোর্টে ঘোরাফেরা করছে। ভূত তাড়ানোর জন্য তিনি সেখানে মিলাদ পড়ানোরও প্রস্তাব করেছেন। একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া অবশ্য সেই এক-এগারোর ভূতকে তাড়ানোর জন্য গণ-আন্দোলনের কথা বলেছেন। এখন প্রশ্ন হলো, মাননীয় বিচারপতিরা ভূতের হাত থেকে আদৌ নিষ্কৃতি পেতে চান কিনা। আগেই বলেছি, কয়েকজন ব্যতিক্রম ছাড়া অন্যদের মধ্যে বিবেকের অস্তিত্ব দুঃখজনকভাবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রায় প্রদানকালে আইনের ব্যাখ্যার পরিবর্তে বাদীর রাজনৈতিক পরিচয় এখন অধিকতর গুরুত্ব পাচ্ছে। যে বিচারপতি বিশেষ কোনো দলের দণ্ডপ্রাপ্ত নেতাকে আইনবহির্ভূতভাবে বিরল ছাড় দিয়ে হাইকোর্ট থেকে সরাসরি জামিন দিচ্ছেন, তিনিই আবার অন্যদের ক্ষেত্রে ন্যায্য জামিন স্থগিত করছেন। এক বিচারপতি তো বিদেশি নাগরিকত্বের তথ্য গোপন করে উচ্চ আদালতে বিচারকের চাকরি নিয়ে দিব্যি দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। হারানো বিবেক ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ এদের মধ্যে জনগণ দেখতে পাচ্ছে না। নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে তারা বরং আদালত অবমাননা নামক এক দেয়াল খাড়া করে আত্মরক্ষার ব্যর্থ চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছেন। বিচার বিভাগের করুণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করেই সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের বিচার বিভাগকে কাচের ঘরের সঙ্গে তুলনা করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি এই ভঙ্গুর ঘরটির যে কোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন। যে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এক-এগারো পরবর্তী সময়ে সাহসিকতার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তিনিও নির্বাচিত সরকারের আমলের বিচার বিভাগের ভূমিকায় একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রদত্ত সাক্ষাত্কারে চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
অত্যাচারী শাসক ও ক্ষমতাবানদের নির্যাতন, নিপীড়ন, জুলুম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই একজন মজলুম নাগরিক আদালতের শরণাপন্ন হয়। পৃথিবীতে বিচারকদের ওপরই ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ্তায়ালা পবিত্র কোরআন শরিফের সুরা আল-হাদীদের ২৫নং আয়াতে বলেছেন, ‘আমি আমার রসুলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাদের সঙ্গে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে।’ আজকের বাংলাদেশের আদালতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে ক্ষমতাসীনরা প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনৈতিক নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। দুর্ভাগ্যক্রমে বিচারকদের মধ্যকার একটি বৃহত্ গোষ্ঠী ক্ষমতাসীনদের এসব অপতত্পরতার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিরোধ সৃষ্টি না করে বরং ন্যক্কারজনকভাবে তাদের সক্রিয় সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এসব বিচারকের মধ্যে কেউ কেউ আবার বাহ্যিকভাবে নাকি ধর্মপালনও করে থাকেন। ধর্মপালনকারীদের মধ্যকার ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা শুনেছি নিয়মিত নামাজও আদায় করেন। তাদের উদ্দেশ্যে সুরা আল-বাকারা’র তিনটি আয়াত উদ্ধৃত করে আজকের মন্তব্য প্রতিবেদন সমাপ্ত করব।
সুরা আল-বাকারা
(৮) আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়।
(৯) তারা আল্লাহ্ ও ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না।
(১০) তাদের অন্তকরণ ব্যাধিগ্রস্ত এবং আল্লাহ্ তাদের ব্যাধি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুত তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আজাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন।
পুনশ্চ : লেখার শুরুতেই বলেছিলাম আমার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আদালত অবমাননার একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আজই সম্ভবত আপিল বিভাগে সেই মামলার প্রথম শুনানি। পাঠক যখন আমার এই লেখা পড়ছেন তখন হয়তো আপিল বিভাগে আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার শুনানি চলছে। আজকের মন্তব্য প্রতিবেদন লেখার অপরাধে আদালত অবমাননার দ্বিতীয় মামলা মোকাবিলারও আগাম মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম। মহান আল্লাহ্ আমাদের সুপথে পরিচালিত করুন।
১৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×