somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোন শিরোনাম নাই...

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সমাজে বর্তমানে সবচেয়ে বেশী আলোচিত বিষয় হচ্ছে অপরাধ ও দুর্নীতি। বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, বিচারপতি, আমলা, রাজনীতিবিদ সবাই কমবেশী এই আলোচনায় অংশগ্রহন করছেন ও এই ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবেলায় নিজ নিজ মতামত তুলে ধরছেন। নিরীহ মানুষ হত্যা, রাজনৈতিক খুনখারাবি, পুড়িয়ে মানুষ মারা, ধর্ষন, নারী ও শিশুদের উপর নির্দয় নির্যাতন, অ্যাসিড নিক্ষেপ, ছিনতাই, মাস্তানি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, লুটপাট ইত্যাদি আমাদের সমাজের প্রতিদিনের বাস্তবতা। নিজের স্কুলপড়–য়া ছাত্রদের হাতে সুপরিকল্পিতভাবে
শিক্ষক খুন হওয়া, পরিচিতজন ও নিকটাত্মীয়দের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়ার পর নিষ্পাপ শিশু-কিশোরের লাশ খন্ড-বিখন্ড হওয়া, পরিকল্পিতভাবে গণধর্ষন করা এবং তা নিয়ে প্রকাশ্যে উল−াস করা ইত্যাদি ভয়াবহ রোমহর্ষক ঘটনা আমাদের সামনে এই সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে বিদ্যমান গভীর সমস্যাকেই তুলে ধরে। আর এসব অপরাধের সাথে যোগ হয়েছে সীমাহীন দুর্নীতি ও
অব্যবস্থা। সেবা খাত গুলো থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যন্ত প্রত্যেকটি সেক্টরে চলছে প্রকাশ্য দুর্নীতি। এখন অনেক ক্ষেত্রেই এসব দুর্নীতি একটা পর্যায় পর্যন্ত গ্রহনযোগ্যতাও পেয়ে গেছে।
কেন আমাদের সমাজে এই অধঃপতন ? এই সীমাহীন অপরাধ ও দুর্নীতি নিয়ে আমাদের সমাজে যে আলোচনা ও বিতর্ক চলছে তা প্রায় সবক্ষেত্রেই কোনও বিশেষ ব্যক্তি, দল কিংবা শুধুমাত্র সরকারকে দায়ী করার চেষ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। যার কারণে সমাধান গুলোও হচ্ছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও তাৎক্ষণিক। বস্তুতঃ আলোচনার মূল বিষয় হওয়া উচিত কেন অবস্থা এত খারাপ হল যে সরাসরি শক্তি প্রয়োগই এখন সমাজকে নিয়ন্ত্রনের একমাত্র উপায়। কেউ কেউ মনে করছেন পুলিশ যদি শক্তভাবে আইন প্রয়োগ করে আর অপরাধীদেরকে ধরে জেলে পুরে দেয় তাহলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কেউ কেউ আবার বলছেন দ্রুত বিচার আর কঠোরতর শাস্তির কথা। এছাড়া স্বাধীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো বা ন্যায়পাল এর মত প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথাও বলা হচ্ছে। এসব প্রস্তাব এবং সমাধান গুলোকে যদি আমরা একটু গভীর ভাবে নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো যে এগুলোর অধিকাংশই সমস্যাগুলোর মূলে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সমাজে বর্তমানে অপরাধ ও দুর্নীতি কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের সমাজে অপরাধ ও দুর্নীতি গরীব-ধনী, দুর্বল-ক্ষমতাধর সকল শ্রেনীতেই আজ স্বাভাবিক জীবনপদ্ধতি হিসাবে গৃহীত হয়েছে। তাই আমরা যদি শুধুমাত্র কিছু ব্যক্তিকে অপসারন করতে চেষ্টা করি তাহলে তা হবে সমস্যার গভীরে না গিয়ে শুধু উপরিতলকে স্পর্শ করা।
আর তাই বিতর্ক হওয়া উচিত আরো গভীর তথা মৌলিক পর্যায়ে। সমস্যার মূল খুঁজতে হলে আমাদেরকে দৃষ্টি দিতে হবে আমাদের সমাজে ব্যাপকতর পরিসরে বিদ্যমান বিশ্বাস, চিন্তা, মূল্যবোধ, প্রথা ও নিয়ম পদ্ধতিগুলোর প্রতি যেগুলোর ভিত্তিতে আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের সমাজে প্রচলিত সবচেয়ে শক্তিশালী মূল্যবোধ হচ্ছে
ভোগবাদী মূল্যবোধ। প্রত্যেকে পুরোপুরি ব্যস্ত আরো বেশী টাকা উপার্জনের ধান্ধায়। সবাই শুধু নিজের লাভ আর সুখ খুঁজছে। আর এগুলোই হচ্ছে মানুষের সকল কাজের পেছনে একমাত্র প্রেরণা। ধনী-গরীব, যুবক-বৃদ্ধ সবাই টাকা আর সম্পদ বৃদ্ধির সাবর্ক্ষনিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
ঘরে-বাইরে, অফিসে, আড্ডায় সর্বত্র একটাই আলোচনা। সকলের জীবনে একটাই লক্ষ্য যে কোন উপায়ে, যে কোন মূল্যের বিনিময়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। মানুষের জীবনে সাফল্যের মাপকাঠি হয়ে পড়েছে শুধুমাত্র টাকা। আমাদের চারদিকের পরিবেশ পরিবার থেকে শুরু করে মিডিয়া পর্যন্ত
সবাই আমাদের চিন্তার মধ্যে সর্বক্ষন একটি জিনিসই ঢোকানোর চেষ্টা করছে নিজের লাভ সেটা টাকা বা ইন্দ্রিয়সুখ যে রূপেই হোকনা কেন। যখন একটা সমাজ শুধু মাত্র ব্যাক্তিস্বার্থ আর ইন্দ্রিয়সুখের চিন্তা দ্বারা পরিচালিত হয় তখন সেখানে স্বাভাবিকভাবেই এমন সব মানসিকতা তৈরী
হবে যেগুলো যে কোন ধরনের নিয়ম-নীতি ও আইন-শৃংখলা বিরোধী। আমাদের সমাজে এখন প্রায় সবাই এসব বস্তুবাদী চিন্তাচেতনা ও মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত। এজন্য কেউ হয়তো সাধারণ ঘুষ নিচ্ছে, কেউবা আবার একটু বেশিরকম বাড়াবাড়ি করে ছিনতাই বা খুন করছে - সবার তো
একটাই চিন্তা নিজের লাভ, নিজের ষ্ট্যাটাসের আরও উনড়বতি। অনেকে আবার নিজেরা এসব অপরাধ দুর্নীতিতে জড়িত হয়না কিন্তু তারা আবার এগুলো বন্ধ করার জন্য কোন উদ্যোগে অংশগ্রহনও করে না। কেননা এতে তাদের নিজের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে তারা মনে করে অথবা তারা এর মধ্যে নিজের কোন লাভ দেখতে পায়না। আর কেউ কেউ আছেন যাদের একমাত্র চিন্তা হচ্ছে কোন রকমে এই দেশ ছেড়ে কোন একটা ধনী দেশে পাড়ি জমানো। এভাবে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই মানুষের সকল কাজের একমাত্র মাপকাঠি হচ্ছে লাভ-ক্ষতি। আর একারনেই সৃষ্টি হয়েছে
আজকের এই ভয়াবহ অত্যাচারী সমাজ। এসব ভোগবাদী চিন্তার রাজত্বই আমাদের সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে যে সমাজে মানুষ যথেচ্ছভাবে তার নিজের চাহিদা ও আকাংখাগুলো পূরণ করছে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×