নিয়োগ নিয়ে হেলাফেলা
মামুন নেসার: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই ঘোষণা দিয়েছিল, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আর দেয়া হবে না। অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নয়, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেই নেয়া হয় এ সিদ্ধান্ত। সে নিয়মও বড় হেলায় ভাঙা হয়েছে পরে। তবে এর আগেই অর্ধডজনের বেশি কূটনীতিক ওই নিয়মের খাঁড়ায় পড়ে দেশে ফিরে আসেন। এতে কিছুটা হলেও শূন্যতার মুখে পড়ে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলো। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তার এ নীতি ধরে রাখতে পারেননি। এখন একের পর এক চলছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। পাকিস্তানের মতো দেশে দেয়া হয়েছে এক শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ী ইয়াসমিন মুরশেদকে। কানাডিয়ান সাহায্য সংস্থা সিডার কনসালটেন্ট সেলিনা মহসীনও পেয়েছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। এই তাদের নিয়োগ নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। সার্কের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ইয়াসমিন মুরশেদ তার দায়িত্ব পালনে কোন সাফল্যের পরিচয় দিতে পারেননি। সেলিনা মহসীন মালদ্বীপে রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার দায়িত্ব ব্যক্তিগত পার্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। শাহেদ আক্তার খান দু’বছর বিরতির পর দ্বিতীয় দফা চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। সাবেক সচিব এইচএম শামসুদ্দীনকেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। করা হয় কেনিয়ার রাষ্ট্রদূত। তবে পোস্টিং পছন্দ না হওয়ায় তিনি তাতে যোগ দিচ্ছেন না বলে জানা গেছে। তাছাড়া বর্তমান সরকারের দুই সচিবকেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে। এমনকি পোস্টিংও দেয়া হয় তাদের। পরে তারা কেউই যোগ দেননি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মধ্যপ্রাচ্যে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ক্ষেত্রেও হয়েছে অযৌক্তিক বিলম্ব। অথচ গত ২০ মাসে অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে ওইসব দেশে ধারাবাহিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সরকার। বর্তমান সরকারের শুরু থেকেই কুয়েতে রাষ্ট্রদূতের পদটি রয়েছে শূন্য। ভুটানের রাষ্ট্রদূত এসএম আতিকুর রহমানকে এখন সেখানে পাঠানো হচ্ছে। গত জুলাইয়ে কুয়েত সঙ্কটের সময়ও ওই দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স ছিলেন কাউন্সিলর পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। এমনকি এ মাসের শুরুতে বহু দেন-দরবারের পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কুয়েত সফর করেন ওই চার্জ দ্য এফেয়ার্সকে নিয়েই। বাহরাইনেও দীর্ঘদিন ধরে পদটি খালি ছিল। প্রথমে নিয়োগপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব এমএকে মাহমুদ যোগদানের আগেই আবার নিয়োগ পান জার্মানিতে। স¤প্রতি সেখানে নিয়োগ পান আলী আকবর। আর সৌদি আরবের মতো দেশে, যেখানে ২০ লাখ বাংলাদেশী কাজ করেন, সেখানেও এ পদটি শূন্য ছিল তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে।
স্থবির মন্ত্রণালয়, সক্রিয় উপদেষ্টার
একান্ত সচিব
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালনার ক্ষেত্রেও গতি নয়, স্থবিরতাই ছিল গত ২০ মাসের অর্জন। উপদেষ্টার প্রিয়ভাজন বা ডানহাত হিসেবে পরিচয় দিয়ে অনেকেই ব্যক্তিগত ফায়দা লুটছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের সুনজরে যারা পড়তে পারেননি তারাই হয়েছেন বঞ্চিত। মন্ত্রণালয়ের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব। অথচ উপদেষ্টার স্নেহভাজন কিছু কর্মকর্তা ছাড়া মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ-নিম্নপদস্থ সব কর্মকর্তার মুখেই কুলুপ। ছোট নিরুপদ্রব তথ্যের জন্যও কর্মকর্তাদের নানা পর্যায়ে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা। সেগুনবাগিচায় এর আগে কোন সরকারের আমলেই পেশাদার কূটনীতিকরা এ রকম পেশাগত বিড়ম্বনার মুখে পড়েননি। উপদেষ্টার একান্ত সচিবকে নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হয়ে একান্ত সচিব হিসেবে তিনিও গড়েছেন বিদেশ সফরের রেকর্ড। এ কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন মূলত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপদেষ্টার একান্ত সচিব হিসেবে। তবে ওই মন্ত্রণালয়ের চেয়ে পছন্দ তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ড. ইফতেখার আহমদ চৌধুরীর মতো তিনিও ওই মন্ত্রণালয়ে হাতেগোনা অফিস করলেও সার্বক্ষণিক অফিস করেন সেগুনবাগিচাতেই। দুই মন্ত্রণালয়েই তার জন্য বরাদ্দ রয়েছে দু’টি বিশালায়তন কক্ষ। তার কারণেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও দালালরা যান হরহামেশা। এ কারণে ক্ষুব্ধ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সর্বশেষ রাসেউল ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কোম্পানির কর্মকাণ্ডের কারণে স্বয়ং উপদেষ্টাকেও পড়তে হচ্ছে বিতর্কের মুখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডকইয়ার্ডে বাংলাদেশী দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর প্রস্তাব নিয়ে আসে ওই কোম্পানি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ওই কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সুসংবাদের কথা জোর গলায় জানিয়ে দেন মিডিয়ায়। পরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পুরো ব্যাপারটিই ভুয়া। তখন টনক নড়ে উপদেষ্টার। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাসেউল কোম্পানির সঙ্গে কাউকে লেনদেন করতে নিষেধ করা হয়। মার্কিন মুলুকে লোভনীয় চাকরির কথা বলে এই প্রতারক কোম্পানির বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টির নেপথ্যে ছিলেন ওই কর্মকর্তা।
http://www.manabzamin.net/page1.htm