এবার রোজা একটু বড় দিনেই হচ্ছে। তবে আমি যার কথা বলছি সে এই দীর্ঘ দিনে রোজা রাখার জন্য ক্লান্ত নয়। বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই করলেও কেউ দেখলে মনে করবে ষাট বছর হয়েছে কি হয় নি। উপর থেকে যতই শক্ত দেখাক ভিতরটা ক্লান্তি আর দুর্বলতায় ভরে আছে। তবে সেই ক্লান্তি যতটা না শারীরিক তার চে বেশি মানুষিক । দীর্ঘ জীবনের হিসাব না মিলাতে পাড়ার জন্যই হয়ত এই ক্লান্তি ।
আজা পঁচিশ রোজা, কয়েক দিন পরে ঈদ। বিধবা হয়েছে সাত বছর আগে, হিসাবে গড়মিল অ বোধহয় তখন থেকে শুরু। দুনিয়াতে আপন বলতে কেউ নেই বললে ভুল হবে, তার চেয়ে থেকেও নেই বললেই বেশি ভাল হয়।
আছে বলতে একমাত্র ছেলে আর তার বউমা আর এক মাত্র নাতি, আবার নেই ও। সত্যিকারে অর্থে তার আপন বলতে যারা আছেন তারা, তারই মত হতভাগ্য মা-বাবা, যাদের ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম।
তার স্পষ্ট মনে আছে একবার তার খোকার জর হওয়ায় সারা রাত জেগেছিল, আর জেগেছিল বটে তবে অই দিন টার কথা বেশি মনে পরে। সেদিন তার খোকা কথা দিয়েছিল যে সে মা কে ছেরে যাবে না। কোথায় আজ তার সেই খোকা, কোথায় ই বা তার সেই কথা।
নতুন জায়গা, শহুরে পরিবেশ, মানিয়ে নিতে পারবে না বলেই নাকি তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখা। সে বহুবার বলেছিল যে মানিয়ে নিবে, খোকার সাথে থাকার জন্য এ আর এমন কি। তা আর শুনলে কই। মাঝে মাঝে দেখা করতে আসে। তবে তা বহুক্ষণের জন্য নয়, জেলের আসামির মত সময় মেপে সেই সাক্ষাত হয়।
আজ তার খোকা, রহমতের আসার কথা, তাই যেন আজ এসব কথা আরও বেশি মনে পরছে। সকাল গেল, বিকাল গেল, ছোট্ট অথচ ভয়ানক রাত্রিটাও কেটে গেল, খোকা এলো না।
এক রাত্রে হঠাৎ তার ছোট খোকা এসে তাকে বললে, "মা দুয়া কর।" সে জিজ্ঞাস করার আগেই বলে উঠেছিল যাতে সে সবার প্রথম হয় সেই জন্য দুয়া করতে। করেছিল, খোকা প্রথম ও হয়েছিল। আজ করে, আল্লার কাছে আজও নিজের মঙ্গল কামনার আগে সে তার খোকার মঙ্গল চায়। এমনি আর কত ঘটনা আছে, এসব ভাবতে ভাবতেই সে আরও কয়েকটা টা দিন পার করে দিল।
অবশেষে উনত্রিশ রোযায় তার খোকা এলো, নাতি ও এসেছে, বৌ ও এসেছে। নাতির সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলল। চলে যেতে যেতে নাতি জেন আর মা এর কানে কিছু একটা বললে। সে কথা বৃদ্ধ শুনে নি, সোনার কথাও নয়। শুনলে হয়তবা বলে উঠতেন, "ছি এসব বলে না।"
পাঁচ বছরের বালক টি তার মা কে বেশি কিছু বলে নি শুধু বলে ছিল, " মা, আমি বিয়ে করলে কি তুমিও এখানে থাকবে।"
পরেরদিন রহমতের ঘর যেন আনন্দে মেতে উঠল।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ৮:২৯