===
এ্যাডমিশনস অফিসে কাজ করি তখন। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের এ্যাডভাইসার হিসেবে। কোনো এক স্টুডেন্ট মেইল করেছে সে জাজ (বিচারক আর কি) হতে চায়। এই দেশে (আমেরিকায়) ল' স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি লাগে, তার পর এলস্যাট (জিআরই জিম্যাট টাইপ একটা পরীক্ষা - ল'স্কুলের জন্য-Law School Admission Test LSAT) দিয়ে এ্যাপ্লাই করতে হয়। তিনবছরের স্কুল শেষে বার পরীক্ষা দিয়ে ল'প্র্যাক্টিসের লাইসেন্স নিতে হয় তারপর ল'প্র্যাক্টিস করতে করতে ইলেক্টেড বা সিলেক্টেড জাজ হওয়া যায়। পাশ করার পরেও ১০-১৫ বছরের ব্যাপার।
তো সেই স্টুডেন্ট (সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যক্রমে সে বাংলাদেশী) তার মেইলে এমন ডিটেইল্ড কিছু লেখেনি যে তার এ্যাকাডেমিক অবস্থা কেমন। আমি যেই স্কুলে সেটা যেহেতু ল তে বেশ ভালো র্র্যান্কড স্কুল, এখানে খুবই ভালো প্রোফাইল ছাড়া এ্যাডমিশন পাবে না। বাংলাদেশী বলে আমিও ঠিক করলাম সাধ্যমতন চেস্টা ও সাহায্য করবো তাকে। তো তাকে রিপ্লাই দিলাম তার প্রোফাইল জানাতে যেন জানাতে পারি কি করতে হবে তাকে, আর বল্লাম আমিও বাংলাদেশী বলে অবশ্যই তাকে পার্সোনালি যোগাযোগ করতে যেনো সাহায্য করতে পারি। তার রিপ্লাই পেয়ে বড়ই হতাশ হয়ে গেলাম। সে মাত্র এইচএসসি পাশ করেছে। যদিও সে তার মেইলে লিখেছে টাকা পয়সা কোনো ব্যাপারনা, সে ওয়েব পেজে টুইশন দেখেছে ও এ্যাফোর্ড করতে পারবে (এ্যাডমিশন ক্রাইটেরিয়া কেন দেখলো না কে জানে)। মাশাল্লাহ ... এইদেশে ল'স্কুলের টুইশনের অংক দেখার মতন, নরম্যাল স্কুলেই ২০-৩০ হাজার ডলার/সেমিস্টার আসতে পারে, থাকা খাওয়ার কথা তো বাদই। তাকে বল্লাম যদি বিদেশে পড়তেই চায় তাহলে তো আন্ডারগ্র্যাডে পড়তে হবে, অথবা দেশে আন্ডারগ্র্যাড করে তার পর ল'স্কুলে আসতে পারবে। সে রাগ করে ফেল্লো, দেশে যদি এইচএসসি পাশ করে ল'স্কুলে ঢোকা যায় এখানেও যাবে, এবং আবার উল্লেখ করলো টাকা পয়সার ব্যপারটা - আমাকেও বাংলাদেশী পেয়ে ভাব নিলো কিনা কে জানে। আমি আর কি বলবো, বল্লাম টাকা যখন একেবারেই ব্যাপারনা, বরং আরো ভালো ল'স্কুল হাভার্ডে এ্যাপ্লাই কর। তার পরের খবর আর জানি না। তার সাথে পার্সোনালি ফলো আপের আগ্রহ জাগে নি আর।
====
এবারের কাহিনী ও একই যায়গায়, মানে এ্যাডমিশন অফিসে। এক স্টুডেন্টকে এ্যাডমিশন ইন্টারভিউ দিতে হবে। ডিপার্টমেন্টের এক প্রফেসরের সাথে আমিও সে ইন্টারভিউ নেবো। হিসপ্যানিক সেই স্টুডেন্ট পানামার হোম মিনিস্টারের ছেলে। তার প্রথম আবদার, আমাদের পানামা যেতে হবে। সে প্রাইভেট প্লেনে (চার্টার প্লেন বলে) নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করবে। মনে মনে যেতে চাইলেও না তো বলতেই হলো। যেই হোক, সে আসলো এবং সাথে করে তার মা ও বডিগার্ড নিয়ে আসলো। মাকে না হয় এ্যাডমিশন সেক্রেটারী বাইরে বসতে বললো, কিন্তু বডিগার্ডকে নাকি আসতেই হবে। এর নাকি অন্য কারনও আছে। পরে আবিস্কার হলো সে ছেলে নাকি ইংরেজীর কিছুই জানে না, বডিগার্ডের কাজ দোভাষী হিসেবে কাজ করা। এই ছেলে তো সিপিটি স্যাট টোফেলই পার হতে পারবে না, এ ভর্তি হবে কি? কি আর করার, ডিনাই করতে হলো।
======
এবারে দুটো টিএ (টিচিং এ্যাসিস্টেন্ট) হিসেবে কাজ করার সময়ের কাহিনী।
একদিন টিউটোরিয়াল ক্লাসের টপিক সাপ্লাই সাইড ইকোনোমিক্স। এতে ল্যাফার কার্ভ বলে একটা আইডিয়া আছে, যাতে ট্যাক্স রেটের সাথে ট্যাক্স থেকে রেভিনিউ এর সম্পর্ক দেখানো হয়। মানে ট্যাক্স রেট বাড়লে রেভেনিউ বাড়বে, কিন্তু একটা পর্যায়ের পর রেভেনিউ কমতে থাকবে অনেক বেশী ট্যাক্স রেটের জন্য। যাই হোক, ক্লাসে এক স্টুডেন্ট ছিলো যে গভার্নমেন্ট আইডিয়াটারই বিপক্ষে, ট্যাক্স তো দুরের কথা। এই ছাত্রী শুরু করলো কথায় কথায় তার বিতর্ক, নাক সিটকানী, কেন থিওরিটা ভুল ইত্যাদি। কিছুতেই আগাতে পারি না, প্রতিটা সেন্টেন্সের পরই সে হাত তুলে তার মতবাদ ব্যাক্ত করা শুরু করে। যেহেতু যার নামে এই আইডিয়া সেই আর্থার ল্যাফার এখনও জীবিত, তাকে ল্যাফারের ইমেইল বের করে দিয়ে বললাম তার সাথে বরং সরাসরি যোগাযোগ করো। এই আনন্দে যে ভুলেই গেলো যে এই আইডিয়াটা আসলে কেইনসের যে ছেচল্লিশ সালে মারা গেছে।
আরেকদিন ক্লাসে দেখাচ্ছি ম্যাথমেটিক্যাল ইকোনোমিক্সের কিছু টপিক, সেমিস্টারের প্রথম দিকের ক্লাস। ২ ঘন্টার সেই ক্লাসে ঘন্টাখানেক পরে বেশ কয়েকটা স্টুডেন্ট দেখি এদিকওদিক তাকায়, কি জানি ফিসফিস করছে। একটু পর একজন আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো ক্লাস তো ৫০ মিনিটের হওয়ার কথা। আমিও অবাক কারন আমাকে টিউটোরিয়াল নিতে বলেছে ২ ঘন্টার। তার পর জিজ্ঞাসা করলো এইটা কি অমুক (অন্য একটা) ক্লাস ছিলো কিনা। এইবার হাসার পালা, প্রথমত আমারটা একটা টিউটোরিয়াল ক্লাস, কোনো প্রফেসরের ক্লাস না। তার পর এইটা ম্যাথমেটিক্সের ক্লাস, পাচ মিনিটের মাঝেই বুঝার কথা এইটা তাদের ক্লাস না। এইটা বুঝতে তাদের এক ঘন্টা লাগলো কেনো কে জানে।
==
যাই হোক, আজ এখানেই শেষ। পরে হয়তো আরো কোনো অভিজ্ঞতার কথা লিখবো।