somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্টুডেন্ট নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা - মজার কিনা জানিনা

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

===
এ্যাডমিশনস অফিসে কাজ করি তখন। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের এ্যাডভাইসার হিসেবে। কোনো এক স্টুডেন্ট মেইল করেছে সে জাজ (বিচারক আর কি) হতে চায়। এই দেশে (আমেরিকায়) ল' স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি লাগে, তার পর এলস্যাট (জিআরই জিম্যাট টাইপ একটা পরীক্ষা - ল'স্কুলের জন্য-Law School Admission Test LSAT) দিয়ে এ্যাপ্লাই করতে হয়। তিনবছরের স্কুল শেষে বার পরীক্ষা দিয়ে ল'প্র্যাক্টিসের লাইসেন্স নিতে হয় তারপর ল'প্র্যাক্টিস করতে করতে ইলেক্টেড বা সিলেক্টেড জাজ হওয়া যায়। পাশ করার পরেও ১০-১৫ বছরের ব্যাপার।

তো সেই স্টুডেন্ট (সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যক্রমে সে বাংলাদেশী) তার মেইলে এমন ডিটেইল্ড কিছু লেখেনি যে তার এ্যাকাডেমিক অবস্থা কেমন। আমি যেই স্কুলে সেটা যেহেতু ল তে বেশ ভালো র্র্যান্কড স্কুল, এখানে খুবই ভালো প্রোফাইল ছাড়া এ্যাডমিশন পাবে না। বাংলাদেশী বলে আমিও ঠিক করলাম সাধ্যমতন চেস্টা ও সাহায্য করবো তাকে। তো তাকে রিপ্লাই দিলাম তার প্রোফাইল জানাতে যেন জানাতে পারি কি করতে হবে তাকে, আর বল্লাম আমিও বাংলাদেশী বলে অবশ্যই তাকে পার্সোনালি যোগাযোগ করতে যেনো সাহায্য করতে পারি। তার রিপ্লাই পেয়ে বড়ই হতাশ হয়ে গেলাম। সে মাত্র এইচএসসি পাশ করেছে। যদিও সে তার মেইলে লিখেছে টাকা পয়সা কোনো ব্যাপারনা, সে ওয়েব পেজে টুইশন দেখেছে ও এ্যাফোর্ড করতে পারবে (এ্যাডমিশন ক্রাইটেরিয়া কেন দেখলো না কে জানে)। মাশাল্লাহ ... এইদেশে ল'স্কুলের টুইশনের অংক দেখার মতন, নরম্যাল স্কুলেই ২০-৩০ হাজার ডলার/সেমিস্টার আসতে পারে, থাকা খাওয়ার কথা তো বাদই। তাকে বল্লাম যদি বিদেশে পড়তেই চায় তাহলে তো আন্ডারগ্র্যাডে পড়তে হবে, অথবা দেশে আন্ডারগ্র্যাড করে তার পর ল'স্কুলে আসতে পারবে। সে রাগ করে ফেল্লো, দেশে যদি এইচএসসি পাশ করে ল'স্কুলে ঢোকা যায় এখানেও যাবে, এবং আবার উল্লেখ করলো টাকা পয়সার ব্যপারটা - আমাকেও বাংলাদেশী পেয়ে ভাব নিলো কিনা কে জানে। আমি আর কি বলবো, বল্লাম টাকা যখন একেবারেই ব্যাপারনা, বরং আরো ভালো ল'স্কুল হাভার্ডে এ্যাপ্লাই কর। তার পরের খবর আর জানি না। তার সাথে পার্সোনালি ফলো আপের আগ্রহ জাগে নি আর।
====

এবারের কাহিনী ও একই যায়গায়, মানে এ্যাডমিশন অফিসে। এক স্টুডেন্টকে এ্যাডমিশন ইন্টারভিউ দিতে হবে। ডিপার্টমেন্টের এক প্রফেসরের সাথে আমিও সে ইন্টারভিউ নেবো। হিসপ্যানিক সেই স্টুডেন্ট পানামার হোম মিনিস্টারের ছেলে। তার প্রথম আবদার, আমাদের পানামা যেতে হবে। সে প্রাইভেট প্লেনে (চার্টার প্লেন বলে) নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করবে। মনে মনে যেতে চাইলেও না তো বলতেই হলো। যেই হোক, সে আসলো এবং সাথে করে তার মা ও বডিগার্ড নিয়ে আসলো। মাকে না হয় এ্যাডমিশন সেক্রেটারী বাইরে বসতে বললো, কিন্তু বডিগার্ডকে নাকি আসতেই হবে। এর নাকি অন্য কারনও আছে। পরে আবিস্কার হলো সে ছেলে নাকি ইংরেজীর কিছুই জানে না, বডিগার্ডের কাজ দোভাষী হিসেবে কাজ করা। এই ছেলে তো সিপিটি স্যাট টোফেলই পার হতে পারবে না, এ ভর্তি হবে কি? কি আর করার, ডিনাই করতে হলো।

======

এবারে দুটো টিএ (টিচিং এ্যাসিস্টেন্ট) হিসেবে কাজ করার সময়ের কাহিনী।

একদিন টিউটোরিয়াল ক্লাসের টপিক সাপ্লাই সাইড ইকোনোমিক্স। এতে ল্যাফার কার্ভ বলে একটা আইডিয়া আছে, যাতে ট্যাক্স রেটের সাথে ট্যাক্স থেকে রেভিনিউ এর সম্পর্ক দেখানো হয়। মানে ট্যাক্স রেট বাড়লে রেভেনিউ বাড়বে, কিন্তু একটা পর্যায়ের পর রেভেনিউ কমতে থাকবে অনেক বেশী ট্যাক্স রেটের জন্য। যাই হোক, ক্লাসে এক স্টুডেন্ট ছিলো যে গভার্নমেন্ট আইডিয়াটারই বিপক্ষে, ট্যাক্স তো দুরের কথা। এই ছাত্রী শুরু করলো কথায় কথায় তার বিতর্ক, নাক সিটকানী, কেন থিওরিটা ভুল ইত্যাদি। কিছুতেই আগাতে পারি না, প্রতিটা সেন্টেন্সের পরই সে হাত তুলে তার মতবাদ ব্যাক্ত করা শুরু করে। যেহেতু যার নামে এই আইডিয়া সেই আর্থার ল্যাফার এখনও জীবিত, তাকে ল্যাফারের ইমেইল বের করে দিয়ে বললাম তার সাথে বরং সরাসরি যোগাযোগ করো। এই আনন্দে যে ভুলেই গেলো যে এই আইডিয়াটা আসলে কেইনসের যে ছেচল্লিশ সালে মারা গেছে।


আরেকদিন ক্লাসে দেখাচ্ছি ম্যাথমেটিক্যাল ইকোনোমিক্সের কিছু টপিক, সেমিস্টারের প্রথম দিকের ক্লাস। ২ ঘন্টার সেই ক্লাসে ঘন্টাখানেক পরে বেশ কয়েকটা স্টুডেন্ট দেখি এদিকওদিক তাকায়, কি জানি ফিসফিস করছে। একটু পর একজন আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো ক্লাস তো ৫০ মিনিটের হওয়ার কথা। আমিও অবাক কারন আমাকে টিউটোরিয়াল নিতে বলেছে ২ ঘন্টার। তার পর জিজ্ঞাসা করলো এইটা কি অমুক (অন্য একটা) ক্লাস ছিলো কিনা। এইবার হাসার পালা, প্রথমত আমারটা একটা টিউটোরিয়াল ক্লাস, কোনো প্রফেসরের ক্লাস না। তার পর এইটা ম্যাথমেটিক্সের ক্লাস, পাচ মিনিটের মাঝেই বুঝার কথা এইটা তাদের ক্লাস না। এইটা বুঝতে তাদের এক ঘন্টা লাগলো কেনো কে জানে।

==

যাই হোক, আজ এখানেই শেষ। পরে হয়তো আরো কোনো অভিজ্ঞতার কথা লিখবো।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×