somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতি বেলায় কত মন চাল খান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?

১০ ই জুলাই, ২০১০ রাত ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কেউ যখন মুসলমানদের কোন কাজের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়ে দায়িত্বে অবহেলা করে, তাদের প্রয়োজন ও অভাব সম্পর্কে উদাসীন থাকে তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহও তার প্রতি উদাসীন থাকবেন এবং তার অভাব ও প্রয়োজনের ব্যাপারে অমনোযোগী থাকবেন। -আবু দাউদ, ইবনে মাজা

হযরত আবু বকর (রাঃ) মুসলিম জাহানের প্রথম আমিরুল মুমেনিন বা বিশ্বাসীদের নেতা নির্বাচিত হলেন। নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে তিনি কাপড়ের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

আমিরুল মু’মেনিন নির্বাচিত হওয়ার পরও প্রতিদিনের মতো তিনি রুটি রুজির আশায় কিছু কাপড় হাতে ঝুলিয়ে বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। বাজারের কাছেই দেখা হয়ে যায় তার প্রিয় বন্ধু ওমর ফারুক (রাঃ) এর সাথে। আ’মিরুল মুমেনিন শুধু বিশ্বাসীদের নেতাই নন, সারা মুসলিম জাহানের শাসনকর্তা। মুসলিম বিশ্বের শান্তি শৃংখলা, নিরাপত্তা, অন্ন,বস্ত্র বাসস্থানসহ মৌলিক প্রয়োজন পূরণের নিশ্চয়তা বিধানের গুরু দায়িত্ব তার কাঁধে। আ’মিরুল মু’মেনিন যদি নিজের রুটি রুজির জন্য বাজারেই সময় কাটাবেন তবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজের তদারকি করবে কে?

ওমর (রাঃ) তাকে নিয়ে চলেন আবু ওবায়দার (রাঃ) কাছে, বায়তুলমালের দায়িত্ব তার হাতে। আ’মিরুল মু’মেনিনের জীবিকা নির্বাহে ভাতা নির্ধারণ করে দিলেন তিনি। মদীনার সাধারণ মুহাজির যতটুকু ভাতা পান রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে, রাষ্ট্রের প্রধানের পরিবারের ক্ষুধা নিবারণে ঠিক ততটুকুই নির্ধারিত হলো বায়তুল মাল থেকে।

আমিরুল মু’মেনিনের ভাতা ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্যই যেখানে পর্যাপ্ত নয়, মন চাইলেই তো আর সেখানে পিঠা পায়েস খাওয়ার সুযোগ মেলে না। তবুও আমিরুল মুমেনিনের বেগমের ইচ্ছে প্রাণপ্রিয় স্বামীকে কিছু মিষ্টান্ন তৈরী করে খাওয়াবেন। অনেক দিন থেকেই অল্প অল্প করে আটা আলাদা করে রাখেন তিনি, পর্যাপ্ত পরিমাণে জমলেই পিঠা বানাবেন।

অবশেষে ঠিকই পিঠা তৈরী হয়। পিঠা হাতে অবাক বিস্ময়ে আমিরুল মু’মেনিন তাকান বেগমের পানে। কোথা থেকে এলো পিঠে, কোথা থেকে এলো পিঠে তৈরীর উপায় উপকরণ? যেটুকু ভাতা মেলে বায়তুলমাল থেকে তাতে তো কোন বেলায় ঠিক মতো পেটই ভরে না তার।

আবু বকরের (রাঃ) পেরেশানী বুঝতে পারেন বেগম, বলেন, তিল তিল করে পিঠা তৈরীর উপকরণ জমানোর কথা। তবু শান্ত হয় না আমিরুল মু’মেনিনের মন। বিশ্বাসীদের নেতা হয়ে যদি তিনি বায়তুল মালের ভাতায় পিঠা পায়েস খেয়ে বেড়ান তবে কি জবাব দেবেন তিনি প্রিয় বন্ধু রাসুল (সাঃ) এর কাছে? কি করে দাড়াবেন তিনি মহান প্রভূ আল্লাহর দরবারে?

নিত্যদিনের খাওয়া দাওয়ার পরেও যেটুকু তিল তিল করে জমা করেছেন পিঠা তৈরীর আশায়, সে বাড়তি ভাতা ছাড়াই তো তবে চলতে পারে তার সংসার। তবে কেন আমিরুল মু’মেনিন হয়েও তিনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভাতা নেবেন?

আমিরুল মু’মেনিনের দায়িত্ব কুসুমাস্তীর্ণ নয়, নয় এ দায়িত্ব আরাম আয়েশ আর পিঠা পায়েশের। পরবর্তী মাস থেকেই তাই কমিয়ে নিলেন তার ভাতা। তাই তো তারা হাজার বছর পরেও বেঁচে আছে বিশ্বাসীদের মাঝে প্রেরণার বাতিঘর হয়ে।

অথচ আজ ঠিক তার উল্টো দৃশ্য দেখতে পাই বাংলাদেশের বুকে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীদের বেতন বেড়েছে ৮৩% , যেখানে কোন কোন পুলিশ সদস্যদের বেতন আগের চেয়েও কমে গেছে। শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন দ্রব্যমূল কমাতে তিনি সক্ষম হয়েছেন। তাহলে হঠাৎ করে তাদের বেতন ৮৩% বাড়ানোর কি যুক্তি থাকতে পারে? বাংলাদেশের দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীর সংখ্যাই বেশী। যেখানে আড়াইশ গ্রাম মোটা চাল হলেই সাধারণ মানুষ পেটপুরে খেতে পারে সেখানে দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধগতি ও অপ্রতুল বেতনের কারনে অনেকেই দু;বেলা পেটপুরে মোটাচালের ভাত খেতে অক্ষম। বিশেষ করে সীমিত আয়ের নিম্নস্কেলের চাকুরীজীবি ও তৈরী পোষাক শিল্পের শ্রমিকরা চরম দারিদ্র্যাবস্থায় অনাহারে দিন কাটায় সেখানে একেকজন ধনকুবের মন্ত্রীরা কিভাবে সরকারী কোষাগার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে যায় তা দেখে পুরো জাতি লজ্জায় মরে যায়। আমার জানার খুব শখ, মন্ত্রীদের নিজেদের বেতন থেকে খরচ করে কখনো বাজারঘাট করতে হয় কি না। প্রতিদিন মিটিং, অতপর রাষ্ট্রের পয়সায় ভূড়িভোজ সত্ত্বেও তাদের বেতন কেন বাড়াতে হয়, আর কমে যায় চরম দারিদ্রসীমায় বসবাসকারী নাগরিকদের বেতন।

গার্মেন্টস শ্রমিকের ক্ষুধা লাগে, ক্ষুধা পায় মন্ত্রী আমলাদেরও। আড়াইশ গ্রাম চাল হলেই পেট ভরে যায় দরিদ্র মানুষের, শুধু পেট ভরে না মন্ত্রীদের। প্রতি বেলায় কতমন চাল খেতে চান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×