বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত নির্বাচন শেষ হয়েছে। স্বাধীন ভারতে জন্ম নেয়া ভারতের নাগরিক হিশেবে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। অনলাইন/অফলাইন এবং দেশ বিদেশ জুড়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনার ভাগই নরেন্দ্র মোদির বেশি। ভারতের বাঘা বাঘা সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা (যেমন কুলদিপ নায়ার, অমর্ত্য সেন) মোদির বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে অবস্থান ব্যক্ত করেও মোদি ও তাঁর দল বিজেপিকে আটকাতে পারেনি। বরং বিজেপির ইতিহাসের সবচেয়ে জয় নিয়েই তারা সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। কিন্তু এর পেছনে মূল কারণ কি যার জন্য গান্ধী-নেহেরু-ইন্দিরার হাতে পরিচালিত দল কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটলো? ভারতের এতো এতো ধর্মনিরপেক্ষ কর্তাব্যক্তির কথা পায়ে মাড়িয়ে কেনইবা ভারতের জনগণ চরম সাম্প্রদায়িকতার দাগে দাগী মোদিতে আমোদিত হলো? এর কারণ কি শুধুই হিন্দুত্ববাদের চেতনা? তাই যদি হবে তাহলে মুসলমান প্রধান অঞ্চল গুলো থেকেও কেন বিজেপি রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে বিজয়ী হলো! আমি রাজনৈতিক বিশ্লেষক নই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারবেন। তবে আমার এ ব্যাপারে সামান্য পর্যবেক্ষণ ও চিন্তাভাবনা আছে।
কংগ্রেসের ভরাডুবির সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে ভারতের বেকারত্বের হার। 2010 এর দিকে বেকারত্বের হার রেকর্ড পরিমাণ কমলেও তা আবার বেড়েছে। কর্মক্ষম জনগণের একটি বড় অংশ বেকার পড়ে আছে। তাছাড়া দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে কংগ্রেস জনসাধারণের জন্য উল্লেখ করার মতো তেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। আর এই বিষয়টিকেই মোদি ট্রামকার্ড হিশেবে ব্যবহার করেছে। বিভিন্ন জনসভায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওয়াদা সহ বিভিন্ন জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে মোদি সবার মনকে জয় করে নেয়।
দ্বিতীয় কারণ হিশেবে উল্লেখ করা যায় কংগ্রেস নেতাদের দুর্নীতি। একনাগাড়ে অধিক সময় ক্ষমতায় থাকলে যা হয় আর কি। মাঝে মাঝে দুর্নীতি ও দুর্ঘটনার দায়ে দু চারজন এমপি-মন্ত্রী পদত্যাগ করলেও বেশিরভাগ নেতারাই থেকেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। দুর্নীতির দায়ে এমপি মন্ত্রীরা আইনের চোখকে ফাঁকি দিতে পারলেও ফাঁকি দিতে পারেনি জনগণের চোখকে। ফলাফল জনগণ সুযোগ পেয়ে দুর্নীতিবাজদের দূরে বহুদূরে ঠেলে দিয়েছে, যেখান থেকে ফিরতে কংগ্রেসের দশ বা তারও অধিক বছর লেগে যেতে পারে।
তৃতীয় কারণটা একেবারেই প্রাকৃতিক। পরিবর্তন। পৃথিবীর কোনো কিছুই যেখানে অপরিবর্তনীয় নয় সেখানে কংগ্রেস কিভাবে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ক্ষমতায় থাকতে পারে। প্রকৃতি সদা পরিবর্তনশীল। মানুষও প্রকৃতির অংশ হিশেবে পরিবর্তন চায়। মনে আছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে শুধুমাত্র ছোট্ট একটি বাক্য 'we want change' বলে জোয়ার সৃষ্টি করেছিল। এবার মোদিও তাই করেছে।
দুই এবং তিন নাম্বার কারণটা সাংস্কৃতিক। এক নাম্বার কারণটা জৈবিক। মানুষ তথা প্রত্যেকটি প্রাণীর জন্যই জৈবিক কারণটা মূখ্য বাকিগুলো গণ্য। আর তাই আপনার পেটে যদি ক্ষুধা থাকে তাহলে আপনার কাছে চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি বিষয়গুলো কোনো অর্থই বহন করবে না। মানুষের জন্য সর্বপ্রথম দরকার মৌলমানবিক চাহিদা পূরণ। মৌলমানবিক চাহিদার প্রথম চাহিদাটাই হচ্ছে খাদ্যের। চিত্তবিনোদন হচ্ছে চতুর্থ বিষয়। প্রথম পাঁচটির কোনো একটির ঘাটতি থাকলে সেখানে চিত্তবিনোদনের কোনো অস্তিত্বই থাকে না। ফলে চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি চিত্তবিনোদনের বিষয়গুলো মৌলমানবিক বিষয়গুলোর কাছে মার খেয়ে গেছে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
শুধু ভারতে নয়, আমি লিখে দিতে পারি বাংলাদেশেও ঠিক এমনই ঘটবে আগামীতে। কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত হওয়া উপজেলা নির্বাচনে তার প্রমাণ অনেকটাই পাওয়া গেছে। চেতনার ওষুধ খাইয়ে মানুষকে খুব বেশি সময় ঘুম পাড়িয়ে রাখা যায় না। তার ওপর পেটে ক্ষুধা থাকলে তো ওষুধ এমনিতেই কাজ করবে না। জোর করে ক্ষমতায় বেশিদিন থাকাও যাবে না। ক্ষমতায় থাকতে হলে জনতার ম্যান্ডেট নিয়েই থাকতে হবে। আর জনগণের ম্যান্ডেট পেতে হলে তাদের পেট ঠান্ডা রাখতে হবে, চুরি-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সরকারি আমলাদের জবাবদিহিতার অধীনে রাখতে হবে, নচেৎ কংগ্রেসের মতোই আগামীতে আওয়ামীলীগের ভরাডুবির সম্ভাবনা আছে। ইতিমধ্যে বিএনপি সেই ভরাডুবির সাধ একবার পেয়েছে যার থেকে পরিপূর্ণ ভাবে জেগে উঠতে তারা এখনও পারে নাই। খিয়াল কইরা!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




