somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব

৩০ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অকেজো জ্ঞান। জ্বি, আজ আপনাদের সামনে একটি অকেজো জ্ঞানকেই হাজির করছি। কেন বলছি অকেজো জ্ঞান? কারণ আজ যে বিষয়টি আপনাদের সামনে হাজির করবো তার প্রচলন অনেক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে এটা জেনে কখনোই কোনো কাজে লাগাতে পারবেন না, আর তাই যে জ্ঞান কোনো কাজে লাগেনা তাকে তো অকেজো জ্ঞানই বলে!! তাহলে শুরু করা যাক:

আমরা জানি-
৪ আনা = ২৫ পয়সা।
৮ আনা = ৫০ পয়সা।
১৬ আনা = ১০০ পয়সা বা ১ টাকা।
১ টাকা = ১০০ পয়সা।
কিন্তু এই “আনার” আগের হিবাসগুলি কি কি?

আমরা মাঝে মাঝেই বলতে শুনি -
“তোমার কথার দু আনা দামও নেই।”
“তোমার কানা কড়ি মূল্য নেই।”
“পাই পয়সার হিসাব চাই।”
“আমার হিসাব কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নিবো।” ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু কথা হচ্ছে টাকা, আনা, পাই, কড়ি, গণ্ডা ইত্যাদির মূল্যমান বা হিসাব পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের কতোটা ধারনা আছে!!!

ছোট্ট একটা তালিকা দেখুন- এই তালিকার সাথে আবার উপরের বর্তমানে প্রচলিত হিসাবের মূল্যমাণ মিলানোর চেষ্টা করবেন না। এই তালিকাটি হচ্ছে সেই আদিকালে ব্যবহৃত আমাদের আদি বাংলার মূদ্রামূল্য বিন্যাস।
সেই আদিকালে আমাদের দেশের মুদ্রাবিভাজন ছিলো নিম্ন রূপ-
২ অর্দ্ধ-পয়সা বা ৩ পাই = ১ পয়সা।
২ পয়সা বা ৬ পাই = ১ ডাবল পয়সা।
৪ পয়সা বা ২ ডাবল পয়সা = ১ আনা।
২ আনা বা ৪ ডাবল পয়সা = ১ দুয়ানি।
৪ আনা বা ২ দুয়ানি = ১ সিকি।
২ সিকি বা ৪ দুয়ানি = ১ আধুলি।
২ আধুলি বা ৪ সিকি বা ১৬ আনা = ১ টাকা।
১৬ টাকা = ১ মোহর।
এখানে বলে রাখা ভালো অর্দ্ধ-পয়সা, পাই, পয়সা ও ডাবল পয়সা এই চারটি ছিলো তাম্রমুদ্রা। অন্য দিকে দুয়ানি, সিকি, আধুলি ও টাকা ছিলো রৌপ্যমুদ্রা। আর মোহর ছিলো স্বর্ণমুদ্রা। (এগুলি সবই অতীত। বর্তমাণের সাথে মিলানোর অপচেষ্ঠা না করাই ভালো।)

এই তিন ধরনের তাম্রমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা ও স্বর্ণমুদ্রা ছাড়াও কড়ির ব্যবহার মুদ্রা হিসেবে প্রচলন ছিলো। যেমন-
৪ কড়া = ১ গণ্ডা
৫ গণ্ডা = ১ বুড়ি বা পয়সা।
৪ বুড়ি বা পয়সা = ১ পণ বা আনা।
৪ পণ বা আনা = ১ চৌক।
৪ চৌক বা ১৬ পণ = ১ টাকা বা কাহন।

ধরুন আপনি যদি বলেন “আমার হিসাব কড়ায়-গণ্ডয় বুঝিয়ে দাও।” তাহলে বিষয়টি হচ্ছে ১ টাকার (১৬×৪×৫×৪) = ১২৮০ ভাগের এক ভাগপর্যন্ত নিখুঁতভাবে আপনাকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলছেন।

যাইহোক কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেয়ার চেয়েও যদি আরো বেশি নিখুঁত ভাবে বুঝে নেয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে তার ব্যবস্থাও ছিলো সেই যুগে।

২০ বিন্দু = ১ ঘূণ
১৬ ঘূণ = ১ তিল
২০ তিল = ১ কাক
৪ কাক = ১ কড়া

আবার অন্য আরেকটি মূলমানও ছিলো-
৩ যব = ১ দন্তী
৩ দন্তী = ১ ক্রান্তি
৩ ক্রান্তি = ১ কড়া।

তাছাড়া আরো একটি ক্ষুদ্র মূল্যমাণ ছিলো এমন
৩২০ রেণু = ৭দ্বীপ = ৫ তাল = ১ কড়া।

এবার শেষ করবো এই অকেজো জ্ঞানের প্যাচাল।এই পুরো লেখাটির সমস্তু তথ্য নিয়েছি পঞ্চানন ঘোষের লেখা “শুভঙ্করী” বইটি থেকে। তাই কৃতজ্ঞতা স্বরুপ একটি শুভঙ্করের মূদ্রাবিভাজন সম্পর্কিত আর্য্যা দিয়ে শেষ করছি-

“চারি কাকে বটৈক জানি, তিন ক্রান্তি বট বাখানি।
নবদন্তী করিয়া সার, সাতাইশ যবে বট বিচার।
আশি তিলে বটঙ্কর, লেখার গুরু শুভঙ্কর।।”


ভালো থাকবেন সকলে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×