somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিলেট ভ্রমণ - হযরত শাহপরান দরগাহ

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯শে অক্টোবর ২০১৪ইং তারিখে সিলেটে একটা ফ্যামিলি এন্ড ফ্রেন্ড ভ্রমণের আয়োজন করেছিলাম। আমাদের গাড়ি ছাড়া হল ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে। পথে তখনও কর্মব্যস্ততা শুরু হয়নি। পথের ধারের চিরচেনা গ্রামবাংলার আবহমান দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চলি। “শ্রীমঙ্গলের পথে” চলতে চলতে আমরা যখন লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে পৌছাই তখন ঘড়িতে সময় সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট। “লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ” শেষে আমরা পৌছাই মাধবপুর লেকে। কিছুটা সময় “মাধবপুর লেক ভ্রমণ” শেষে আমারা যাই মাধবকুণ্ড ঝর্ণা দেখতে। বিকেলটা কেটে যায় “মাধবকুণ্ড ঝর্ণা ভ্রমণ” করে। সেখান থেকে ভ্রমণ শেষে পৌঁছই সিলেটে।

পরদিন ২০শে অক্টোবর সকালে “হযরত শাহজালাল (রঃ) দরগা”তে কিছুটা সময় কাটিয়ে আমরা চললাম ৬০ কিলোমিটার দূরের বিছনাকান্দির উদ্দেশ্যে। অচেনা রাস্তা বলে সময় কিছুটা বেশী লাগয় হাদারপাড় বাজারে যখন পৌছাই তখন ঘড়িতে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট। এর পর একটি ট্রলার ভাড়া করে চললাম পিয়াইন নদীর অল্প জলের বুক চিরে বিছনাকান্দির দিকে। বিছনাকান্দির মহনীয় রূপ উপভোগের পালা শেষে ফিরে আসি সিলেট শহরে। পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে স্বপনের রুমে শুরু হয় রাতের আড্ডা।

চিপস চানাচুর আর কোল্ড ড্রিংক সহযোগে বিশাল আয়োজন। বাদাম আর চা ও সাথে থাকে। আমাদের সাথে স্কাইপেতে যোগদেয় কুয়েত থেকে আরেক বন্ধু হিরা। এরই মাঝে ঠিক করে ফেলি আগামী কালের ভ্রমণ পরিকল্পনা। পরিকল্পনার প্রথমেই থাকে সকালের নাস্তা করেই যাব শাহ পরানের মাজারে, সেখান থেকে হরিপুর গ্যাস ফিল্ড দেখে এগিয়ে যাব লালা খালের পানে। শেষ করবো জাফলং হয়ে সিলেট শহরে ফিরে।


হোটেলের সামনে বুসরা, সাইয়ারা, শম্পা।


পরদিন ২১ তারিখ সকাল ১০টার দিকে যাই সকলে পালকি রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা করতে। সকালের নাস্তা শেষে পরিকল্পনা মাফিক প্রথমেই পৌছাই হজরত শাহ পরানের মাজারে। তখন সময় সোয়া ১১টা। খুব বেশী সময় এখানে থাকিনি আমরা। মোটামুটি পৌনে ১২টা নাগাদ বেরিয়ে যাই মাজার থেকে।


পালকিতে নাস্তা শেষে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি



গুগল ম্যাপে দুই মাজারের ব্যবধান ও অবস্থান।

শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার আর হযরত শাহ জালালের মাজার থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে খাদিম নগরে একটি টিলার উপরে হযরত শাহ পরানের মাজার অবস্থিত। মাজারে যাওয়ার জন্য সিলেট তামাবিল রোড থেকে ডান দিকে মোর নিয়ে ঢুকতে হয়। মেইন রোগের উপরেই মাজারের তোরণ তৈরি করা আছে, দেখেই চেনা যায়। কিছু দুর পর থেকেই রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে নানান জিনিসের সম্ভার নিয়ে ছোট ছোট দোকান। মোম বাতি, আগড় বাতি, আতর, মালা, তাবিজ, হালুয়া কি নেই এখানে! তবে এই মাজারে দেখেছি হাতে হাতে নিয়ে এসে মোম বাতি, গোলাপজল বিক্রি করছে। আর তাবিজ বিক্রেতাও রয়েছে প্রচুর। সাবধান থাকতে হবে এদের হাত থেকে।


হাওয়াই মিঠাই আর চানাচুর

হযরত শাহা জালালের ভাগিনা এই হযরত শাহপরান। আদিতে মামার সাথে তিনিও একই আস্তানায় থাকতেন। কথিত আছে মামার পোষা পায়রা তার অনুপস্থিতিতে রান্না করে খেয়ে ফেলেন ভাগিনা শাহ পরান। বিষয়টা জানতে পেরে মামা তার ভাগিনাকে গাল মন্দ করেন। তখন শাহ পরান সেই পায়রার পালকগুলি বাতাসে উড়িয়ে দিলে পালক গুলিই এক ঝাঁক পায়রা হয়ে উড়ে যায়। ভাগিনার এই কেরামতি দেখে মামা অভিভূত হয়ে যান। তিনি বুঝতে পারেন তার ভাগিনাও সাধনায় কামিয়াব হয়ে গেছে। তিনি তার ভাগিনাকে আলাদা আস্তানায় যাওয়ার উপযোগী মনে করেন। মামা তার হাতের লাঠিটি ছুড়ে দিলে সেটি এসে পরে বর্তমানের খাদেম নগরের শাহপরানের মাজারের এই টিলায়। মামা আদেশ করেন যেখানে লাঠি পরেছে সেখানে গিয়ে আস্তানা করতে। তাই সেখানেই আস্তানা করেন শাহপরান। কথিত আছে মামার ছুড়ে দেয়ে সেই হাতের লাঠিটি একটি গছে রূপ নেয়, গাছটির নাম আশা গাছ। গাছটিতে একই সাথে ঢুমুর আর আম হয়। তোবারক হিসেবে সেই ডুমুর আর আম খাওয়া হয় ভক্তি ভরে।






আগেই বলেছি ছোট্ট একটি টিলার উপরে মাজারটি অবস্থিত। বেশ কয়েক ধাপ সিঁড়ি টপকে উঠতে হয় মাজারে। মাজারের সামনেই পশ্চিম পাশে আছে একটি সুন্দর মসজিদ। মাজারে মূল অংশে মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ। টিলার পাশে সিঁড়ির আগেই মহিলাদের নামাজ পড়ার যায়গা আছে।


সিঁড়ির বাম দিকে একটা খাদেমদের অফিস ঘরের মত আছে। এর চত্তরেই দেখতে পেলাম শুকনো গোলাপের পাতা কাগজে মুরে পরিয়া বানাচ্ছে বিক্রি করবে বলে। এই সিঁড়ি বেয়েই পুরুষদের খালি পায়ে ঢুকতে হয় মাজারে। মাজারের সাথেই আছে কোরআন পড়ার স্থান। বিশাল গাছ ছায়া দিয়ে আছে মাজারের উপরে। ধারনা করতে পারি এটাই সেই কথিত আশা গাছ। শাহ পরানের কবর উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। অনেকেই সেই দেয়াল ধরে দাড়িয়ে আছি, মোনাজাত করছে।


মাজারের আঙ্গিনা









মাজার প্রাঙ্গণের সামনেই আছে একটি বিশাল পুকুর, শেওলা ধরা সবুজ জলেই চলে অজুর আর গোসল। অবশ্য পাশেই অজুর জলের ব্যবস্থা আছে। শুনেছি অনেকেই মানত করে এখানে গোসল করার। আমাদের কোন মানত ছিল না পালন করার মত, তাই মাজারে দক্ষিণ পাশে মেয়েদের নামাজ পড়ার যায়গা থেকে নামাজ শেষে মেয়েরা বের হতেই আমরা তৈরি হলাম হরিপুর গ্যাস ফিল্ডে যাওয়ার জন্য।

আগামী পর্বে দেখা হবে হরিপুরের পরিত্যাক্ত গ্যাস ফিল্ডে।




চলবে.......
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×