১৯শে অক্টোবর ২০১৪ইং তারিখে সিলেটে একটা ফ্যামিলি এন্ড ফ্রেন্ড ভ্রমণের আয়োজন করেছিলাম। আমাদের গাড়ি ছাড়া হল ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে। পথে তখনও কর্মব্যস্ততা শুরু হয়নি। পথের ধারের চিরচেনা গ্রামবাংলার আবহমান দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চলি। “শ্রীমঙ্গলের পথে” চলতে চলতে আমরা যখন লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে পৌছাই তখন ঘড়িতে সময় সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট। “লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ” শেষে আমরা পৌছাই মাধবপুর লেকে। কিছুটা সময় “মাধবপুর লেক ভ্রমণ” শেষে আমারা যাই মাধবকুণ্ড ঝর্ণা দেখতে। বিকেলটা কেটে যায় “মাধবকুণ্ড ঝর্ণা ভ্রমণ” করে। সেখান থেকে ভ্রমণ শেষে রাতে পৌঁছাই সিলেটে।
পরদিন ২০শে অক্টোবর সকালে “হযরত শাহজালাল (রঃ) দরগা”তে কিছুটা সময় কাটিয়ে আমরা চললাম ৬০ কিলোমিটার দূরের বিছনাকান্দির উদ্দেশ্যে। অচেনা রাস্তা বলে সময় কিছুটা বেশী লাগায় হাদারপাড় বাজারে যখন পৌছাই তখন ঘড়িতে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট। একটি ট্রলার ভাড়া করে চললাম পিয়াইন নদীর অল্প জলের বুক চিরে বিছনাকান্দির দিকে। বিছনাকান্দির মহনীয় রূপ উপভোগের পালা শেষে ফিরে আসি আমাদের রাতের আস্তানা সিলেট শহরে।
পরদিন ২১ তারিখ সকালে নাস্তা শেষে সোয়া ১১টার দিকে পৌছাই হজরত শাহপরানের মাজারে। মাজার জিয়ারত শেষে পৌনে ১২টা নাগাদ বেরিয়ে যাই মাজার থেকে। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য হরিপুর পরিত্যাক্ত গ্যাস ফিল্ড।
পৌনে বারটার দিকে মাজার ছেড়ে বেরিয়ে পরি আমরা। সিলেট তামাবিল হাইওয়ে দিয়ে সিলেট থেকে জাফলং এর দিকে প্রায় ১৪ কিলোমিটারের মত যেতে হাতের বামদিকে পরে এই হরিপুরের পরিত্যাক্ত গ্যাস ফিল্ড। প্রায় ১৫ বছর আগে আমরা ৫ বন্ধু এখানে এসেছিলাম। তখন দেখেছিলাম একটা পুকুরের জল টগবগ করে ফুটছে। আসলে এখানে গ্যাসের একটি কুপ খনন করতে গিয়ে দেবে গিয়ে এই পুকুর তৈরি হয়। পরে বৃষ্টির জল জমলে জলের মধ্যে গ্যাস বুদবুদ আকারে বের হতে থাকে। সামান্য দিয়াশলাইয়ের জ্বলন্ত কাঠি ছুড়ে দিলেই ধপ করে জলে উঠত। আরেকটা মাঝারি আঁকারের টিলা থেকে ছোট ছোট ফাঁক ফোকর দিয়ে গ্যাস বের হতে দেখেছিলাম। তখন দূর থেকেই শো শো শব্দ শুনতে পেয়ে ছিলাম।
বুদবুদ পুকুর
বুদবুদ পুকুর
এবার এতো পুরনো রাস্তার কথা কিচ্ছু মনে নেই তাই জিজ্ঞেস করে করে চলে আসলাম। কাচা রাস্তায় কিছু দূর গাড়িতে এসে হেঁটেই এগুলাম বাকি পথ। এবার প্রথমেই পৌঁছলাম পুকুরের কাছে। আগের মত ততটা বুদবুদ নেই, গ্যাসের চাপ কমে গেছে। কয়েক যায়গাতেই ঝিরি ঝিরি বুদবুদ উঠছে। চেষ্টা করেও সেখানে জ্বলন্ত দেশলাইয়ের কাঠি ছুড়ে পৌছতে পারিনি।
এই ফুটন্ত পুকুর সম্পর্কে সেই সময় একটি মিথ শুনেছিলাম। "এই কুপটির কাছেই ছিল একজন দরবেশের আস্তানা। ইঞ্জিনিয়াররা যখন এখানে কাজ শুরু করে তখন কাজের শব্দে দরবেশের ধ্যানের সমস্যা হয়। তখন দরবেশ তাদেরকে এখান থেকে সরে অন্য কোথাও কাজ করতে বলে। কিন্তু দরবেশের কথা না শুনে তারা সেখানেই কাজ করতে থাকে। পরে দরবেশের বদদোয়ার কারণে সেই কুপটা যন্ত্রপাতি সহ মাটির নিচে দেবে যায়।
বুদবুদ পুকুর আর জ্বলন্ত পাহারের মাঝামাঝি এই পথেই আছে গ্যাস উঠানোর এই পরিত্যাক্ত অংশ বিশেষ।
কৌতুহল মিটানোর জন্য কাছ থেকে দেখা।
অগ্নিশিল্পী, আগুন ধরিয়ে আপনাকে দেখাবে, ফেরার সময় বকশিস দিতে হবে।
কিছুটা সময় বুদবুদ পুকুরের সামনে কাটিয়ে ভিন্ন পথে হাঁটা ধরলাম জ্বলন্ত পাহাড়ের দিকে। এতো বছরে গ্যাসের চাপ অনেকটাই কমে গেছে তা বুঝতেই পারছি। পাহারের কাছাকাছি গিয়েও কোন শো শো শব্দ তাই এবার পেলাম না। শব্দ না পেলেও কিছু গ্যাস যে এখনো বের হচ্ছে তা বুঝা গেলো দু এক যায়গায় আগুন জ্বলতে দেখে।
এই সেই জ্বলন্ত পাহাড়
জ্বলন্ত স্বপন আর ড্রাইভার
অগ্নিশিল্পী, ১৫ বছর আগেও এদের দেখেছি, এখনও আছে।
আমাদের গ্যাস এভাবেই জ্বলে যায়।
বুদবুদ পুকুর আর জ্বলন্ত পাহাড় দেখা শেষে এবার আমাদের গন্তব্য লালাখাল, দেখা হবে আগামী পর্বে।
চলবে.......
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৩