ভৃগুর পুত্র চ্যবনের স্ত্রীর নাম সুকন্যা, তাদের পুত্র প্রমতি। প্রমতির ঔরসে ঘৃতাচীর গর্ভে তাদের পুত্র রুরু জন্ম নেয়।
গন্ধর্বরাজ বিশ্বাবসুর সাথে সহবাসের ফলে স্বর্গের গায়িকা ও নর্তকী মেনকা গর্ভবতী হয়। মেনকা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে তাকে স্থুলকেশ মুনির আশ্রমের পাশে নদীর তীরে ফেলে যায়। মহর্ষি স্থুলকেশ সেই শিশু কন্যাটিকে দেখতে পেয়ে তাকে নিজের আশ্রমে এনে লালন-পালন করেন। মহর্ষি তার নাম রাখলেন প্রমদ্বারা।
রুরু সেই প্রমদ্বারাকে দেখে বিয়ে করতে চাইলেন। কিছুদিন পরে বিয়ের কয়েকদিন আগে প্রমদ্বারা তার সখীদের সঙ্গে খেলা করার সময় না দেখে একটি সাপের গায়ে পা দিয়ে ফেলেন। সাপটি তাকে দংশন করলে প্রমদ্বারা বিষের কারণে মারা গেলো।
রুরু তখন মনের দুঃখে বনে গিয়ে বিলাপ করতে লাগলো। রুরুর বিলাপ শুনে দেবতারা একজন দূত পাঠালেন। দেবদূত রুরুকে জানালো প্রমদ্বারার আয়ু শেষ হয়েগেছে। তবে রুরু যদি প্রমদ্বারাকে নিজের আয়ুর অর্ধেক দান করে তাহলেই কেবল প্রমদ্বারা জীবন ফিরে পেতে পারে। রুরু তার অর্ধেক আয়ু প্রমদ্বারাকে দিয়ে দিতে রাজি হলেন।
প্রমদ্বারার পিতা গন্ধর্বরাজ বিশ্বাবসু দেবদূতের সঙ্গে যমের কাছে গিয়ে রুরুর অর্ধেক আয়ু প্রমদ্বারাকে দেয়ার কথা জানালেন। যম বিষয়টি মেনে নিয়ে তখনই প্রমদ্বারাকে জীবন ফিরিয়ে দিলো। মহানন্দে বর কন্যার বিবাহ হয়ে গেলো।
ডুন্ডুভ
এই ঘটনায় রুরু অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হয়ে সাপের বংশ নিশ্চিহ্ন করার প্রতিজ্ঞা করলেন এবং সকল প্রকার সাপই মারতে শুরু করলেন। একদিন তিনি বনে গিয়ে দেখলেন এক বৃদ্ধ ডুন্ডুভ (ঢ়োরাসাপ) শুয়ে আছে। রুরু তখনই তাঁকে মারতে গেলেন। তখন-
ডুন্ডুভ বললেন- "আমি কোনও অপরাধ করিনি, তবে কেন আমায় মারতে চান?"
রুরু বললেন- "আমার স্ত্রীকে সাপে কামড়ে ছিল, সেজন্য প্রতিজ্ঞা করেছি সাপ দেখলেই মারব।"
ডুন্ডুভ বললেন- "যারা মানুষকে দংশন করে তাঁরা অন্যজাতী সাপ, আপনি ধর্মজ্ঞ হয়ে বিষহীন ঢ়োরাসাপ হত্যা করতে পারেন না।
রুরু বললেন- "তুমি আসলে কে?"
ডুন্ডভ বললেন- "আমি সহস্রপাৎ নামে ঋষি ছিলাম। আমার এক ব্রাহ্মণ বন্ধুর নাম ছিলো খগম। একদিন তিনি অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করছিলেন। সেই সময়ে আমি দুষ্টমি করে একটি বিষহীন নকল সাপ নিয়ে তাকে ভয় দেখিয়েছিলাম। সেটি দেখে তিনি ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফিরে পেয়ে তিনি প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললেন, "নির্বিষ সাপ দিয়ে আমাকে যেমন ভয় দেখিয়েছো, আমার শাপে তুমিও নির্বিষ সাপ হবে। তবে প্রমতির পুত্র রুরুর দর্শন পেলে তুমি শাপমুক্ত হবে।
তুমি সেই রুরু, আজ আমি শাপ মুক্ত হয়ে পূর্বের রূপ ফিরে পাবো।
ঋষি সহস্রপাৎ নিজের আসল রূপ ফিরে পেয়ে বললেন-
অহিংসা পরমোধর্মঃ সর্বপ্রাণভৃতাং স্মৃতঃ।।
তস্মাৎ প্রাণভুতঃ সর্বান্ন ন হিংস্যাদ ব্রাহ্মণঃ ক্বচিৎ।
অর্থ- সর্ব প্রাণীর অহিংসাই পরম ধর্ম; অতএব, ব্রাহ্মণ, কখনও কোনও প্রাণীর হিংসা করবেন না।
সহস্রপাৎ বললেন- "অতীতে জনমেজয়ের সর্পযজ্ঞে সমস্ত সাপেরা মারা পরছিলো। কিন্তু তপোবলসম্পন্ন আস্তীক মুনি সাপদের রক্ষা করেছিলেন। এই বলে তিনি চলে গেলেন। তারপর রুরু আশ্রমে এসে তার পিতার কাছে সর্পযজ্ঞের কাহিনী শুনলেন।
====================================================================
বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। এই গ্রন্থে প্রচুর উদ্ভট কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন।
লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।
====================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩
====================================================================
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:৫৩