somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের কৌতুক

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আলম সাহেবের বয়েস হয়েছে।
সরকারী চাকুরে ছিলেন, অবসর নিয়েছেন অনেক বছর আগেই। চোখের সামনে একমাত্র ছেলেটা ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠেছে। আলম সাহেবের স্ত্রী নিজের স্বাধ্যের মধ্যের সবটুকু দিয়ে মোটামুটি ধুমধাম করেই ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। নিজের অল্প-স্বল্প সমস্ত গহনা বৌমাকে দিয়ে দিয়েছিলেন।

আলম সাহেব সারা জীবন সৎ ছিলেন বলে তার সম্পদ ছিলো না। কোনো রকমে ঢাকায় একটি বাড়ি তৈরি করতে পেছিলেন। বাড়ির সামনে ছোট্ট একটু খোলা যায়গা। ইচ্ছে ছিলো বৃদ্ধ বয়সে বুড়বুড়ি মিলে নাতি-নাতনিদের নিয়ে এখানে বসে খেলা করবেন, সময় কাটাবেন। তিনি বুড়ো হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বুড়ী আর নেই। হঠাত করেই কেয়েক বছর আগে উনাকে একা ফেলে পরপরে পারি জমিয়েছেন।

আলম সাহেবের ছেলে তারই মত সহজ সরল ভালো মানুষ, বাবার আদর্শেই মানুষ হয়েছে। আলম সাহেব যেমন তার স্ত্রীকে অন্তরের সবটা দিয়ে ভালোবাসতেন, তার ছেলেও তার স্ত্রীকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। এতোটাই ভালোবাসে যে বউয়ের কথার উঠে-বসে। তাতেও কোনো সমস্যা ছিলো না। সমস্যা হচ্ছে কিছুদিন হলো তার বৌ বারবার বলছে বুড়ো আলম সাহেবকে তিনি আর পালতে পারবেন না। আলম সাহেবকে কোনো একটি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে। আলম সাহেবের ছেলে বাধ্য-স্বামীর মতো বৌয়ের নির্দেশে বৃদ্ধ বাবাকে একটি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে যায়।

বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পৌছে দিয়ে আলম সাহেবের ছেলে যখন নিজের বাড়িতে ফিরে আসছে। তখন তার স্ত্রী কল করে বলে, সে যেনো বৃদ্ধাশ্রমের ম্যানেজারকে বলে আসে ঈদ-পূজ-পার্বনের ছুটিতে তারাই আলম সাহেবের সাথে দেখা করতে আসবে। আলম সাহেবকে যেন কখনোই বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া না হয়। স্ত্রীর কথা মতো আলম সাহেবের ছেলে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার পৌছে যায় বৃদ্ধাশ্রমে। সে দূর থেকে দেখে তার বাবার সেখানকার বুড়ো ম্যানেজারের সাথে খুব আনন্দ নিয়ে পূর্বপরিচিত বন্ধুর মতো কথা বলছেন। খুব পরিচিত কেউ না হলে এই ভাবে আনন্দ নিয়ে আলম সাহেব কারো সাথে কথা বলতে পারে না।

কিছুক্ষণ পরে আলম সাহেব তার ঘরে চলে গেলেন। তখন আলম সাহেবের ছেলে এসে ম্যানেজারের কাছে জানতে চাইলো তার বাবার সাথে ম্যানেজারের পূর্বপরিচয় ছিলো কিনা। তখন ম্যানেজার জানালো। অনেক অনেক বছর আগে তিনি যখন যুবক ছিলেন তখন তিনি একটি অনাথাশ্রমের ম্যানেজার ছিলেন। তখন নিঃসন্তান আলম সাহেব একটি দুধের শিশু ছেলেকে তাদের কাছ থেকে দত্তক নেন। তখন থেকেই আলম সাহেবের সাথে তার পরিচয়।

ভালো মানুষ আলম সাহেবের সেই দত্তক নেয়া ছেলেটি এখন ম্যনেজারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে!
(মিরাক্কেলের একটি কৌতুক থেকে নেয়া)



এবার একটি গান নচিকেতার -


ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার
ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার
নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামী দামী
সবচেয়ে কম দামী ছিলাম একমাত্র আমি
ছেলের আমার আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম!

আমার ব্যবহারের সেই আলমারি আর আয়না
ওসব নাকি বেশ পুরনো, ফ্ল্যাটে রাখা যায় না
আমার ব্যবহারের সেই আলমারি আর আয়না
ওসব নাকি বেশ পুরনো, ফ্ল্যাটে রাখা যায় না
ওর বাবার ছবি ,ঘড়ি-ছড়ি, বিদেয় হলো তাড়াতাড়ি
ছেড়ে দিলো, কাকে খেলো, পোষা বুড়ো ময়না
স্বামী-স্ত্রী আর আ্যালসেশিয়ান- জায়গা বড়ই কম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম!

নিজের হাতে ভাত খেতে পারতো নাকো খোকা
বলতাম আমি না থাকলে কি করবি বোকা?
ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতো খোকা আমার কথা শুনে
খোকা বোধ হয় আর কাঁদে না, নেই বুঝি আর মনে
ছোট্টবেলায় স্বপ্ন দেখে উঠতো খোকা কেঁদে
দু’হাত দিয়ে বুকের কাছে রেখে দিতাম বেঁধে
দু’হাত আজো খুঁজে, ভুলে যায় যে একদম
আমার ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম!

খোকারও হয়েছে ছেলে, দু’বছর হলো
তার তো মাত্র বয়স পঁচিশ, ঠাকুর মুখ তোলো
একশো বছর বাঁচতে চাই এখন আমার সাধ
পঁচিশ বছর পরে খোকার হবে ঊনষাট।
আশ্রমের এই ঘরটা ছোট, জায়গা অনেক বেশি
খোকা-আমি দু’জনেতে থাকবো পাশাপাশি
সেই দিনটার স্বপ্ন দেখি ভীষণ রকম
মুখোমুখি আমি, খোকা আর বৃদ্ধাশ্রম!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:০১
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×