somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবক্ষয়!!!

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ১১ তারিখ শুক্রবার রাত ৯টার দিকে আমার মুঠফোনে কল দিয়ে আমার চাচাতো বড় ভাই বললো - সভাপতি সাহেব তোমার সেক্রেটারি ফিরোজ ভুঁইয়া মারা গেছে।

ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন



আমি ঢাকার উত্তর বাড্ডার স্বাধীনতা স্বরণী জামে মসজিদের সভাপতি। ফিরোজ ভুঁইয়া সাহেব ছিলেন সেক্রেটারি, ষাট উর্ধ বয়স হয়েছে। কারো সাথে পাঁচে নেই টাইপ সাদাসিদে মানুষ। ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন, অবসরে নিয়েছেন অনেকদিন হয়। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে দ্রুত উপস্থিত হলাম তার বাড়িতে। চাদরে ঢাকা লাশটি পড়ে আছে সদর দরজার বাইরে, মসজিদের খাটিয়াতে। বাড়িতে মৃতবাড়ির কোনো আবহ লক্ষ্য করা গেলো না।

ফিরোজ ভুঁইয়া সাহেবের দুই ছেলে, বড় ছেলেটি সামান্য বুদ্ধি-প্রতিবন্দী, কিছুদিন আগে তাকে বিয়ে করিয়েছেন। ছেলেটি এখন তার স্ত্রীকে নিয়ে ফিরোজ ভুঁইয়া সাহেবের নরসিংন্দীর গ্রামের বাড়িতে থাকে। ছোটো ছেলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার, বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকে স্বাধীনতা স্বণীর ৫ তলা বাড়িতে। তাঁর সাথেই আলাপ করে রাতেই লাশের গোসলের ব্যবস্থা করে দিলাম। জানাজার সময় নির্ধারন করা হলো পরদিন ১২ তারিখ শনিবার বাদ যোহর।

আমাদের পাশের এলাকায় একটি করবর স্থান আছে, পূর্বাচল সামাজিক কবরস্থান। আমি কবরস্থানটির যুগ্ন অর্থ-সম্পাদক। তাই আমার জানা আছে, ফিরোজ ভুঁইয়া সাহেব ঐ কবরস্থানের সদস্য ছিলেন। তার ছোট ছেলে জানালো পূর্বাচল সামাজিক কবরস্থানেই তার বাবাকে দাফন করবে। আমি সাথে সাথেই কবর খোড়ার লোকদের ফোন করে পরদিন সকালেই কবর খুড়ে রাখার কথা বলে দিলাম। ওরাই বাঁশ-চাটাই ইত্যাদির ব্যবস্থাও করে রাখবে। সকল ব্যবস্থা সু-সম্পন্ন করে আমি রাত ১১টার পরে বাড়িতে ফিরে এলাম।

পরদিন ১২ তারিখ শনিবার সকালে স্থানীয় কমিশনারের কার্যালয়ে একটি বিচারে যেতে হয়েছিলো। এরমাঝে কবরস্থান থেকে ফোন করে জানালো কবর খোড়া হয়ে গেছে। সাড়ে বারোটা পর্যন্ত কমিশনারের কার্যালয়েই ছিলাম। সেখান থেকেই চলে গেলাম মসজিদে। ফিরোজ ভুঁইয়া সাহেবের বাড়ি আর স্বাধীনতা স্বরণী জামে মসজিদ সামনাসামনি। দেখলাম ফিরোজ ভুঁইয়া সাহেবের বাড়ির সামনে অনেক লোকের ভির, পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে!!

এবার জানতে পারলাম ফিরোজ ভুঁইয়া সাহেবের বড় ছেলে, তার দুই কাকা ও মামাদের নিয়ে এসেছে। বড় ছেলের অভিযোগ তার ছোট ভাই তার বাবাকে অবহেলায়া বিনা চিকিৎসায় হত্যা করেছে। তার বাবাকে একটি ঘরে সব সময় বন্দী করে রাখতো, ঠিক মত খাবার দিতো না। তার মাকেও নির্যানত করতো। ফিরোজ ভুঁইয়া ও তার স্ত্রীর পেনশনে সমস্ত টাকা ছোট ছেলে ব্যবসার কথা বলে নিয়ে নিয়েছে। গ্রামের সমস্ত জমি বিক্রি করে ব্যবসায় লাগিয়েছে। গ্রামের বাড়ি ব্যাংকে মর্টগেজ রাখার কথা বলে নিজের নামে লিখে নিয়েছে। অথচো সকলেই জানে ঐ বাড়িটি তিনি বড় ছেলেকে লিখে দিতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি ছোট ছেলের নামে মামলাও করেছেন। ছোট ছেলে তার মায়ের নামে থাকা স্বাধীনতা স্বরণীর ৫ তলা বাড়িটিও নিজের নামে লিখে নিয়েছে। বড় ছেলের জন্য কিছুই নেই!!!

এইসব শুনে আমি হতোবাক হয়ে গেলেম। সকাল থেকেই এলাকাবাসী সকলে মিলে ছোট ছেলেকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে অসহায় বড় ভাইটিকে তার বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী গ্রামের বাড়িটি ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু সে কিছুতেই রাজি হয়নি। ফোন করে পুলিশ ডেকে এনেছে। পুলিশ এসেও তাকেই দোষী পেয়েছে। এইদিকে যোহরের সময় হয়ে গেছে। সে তার বাবার জানাজার অনুমোতিও দিতে রাজি নায়। আমরা একরকম জোড় করেই লাস নিয়ে এসে জানাজা পড়লাম। জানাজা শেষে আবার আমরা চেষ্টা করলাম ঝামেলাটা মিট করাতে, কাজ হলো না। ৩টা পর্যন্ত চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আমি বাসায় ফিরে আমার স্ত্রীকে নিয়ে চলে গেলাম ডাক্তারের কাছে।

সন্ধ্যায় আবার যেতে হলো ফিরোজ ভুঁইয়া সাহেবের বাড়িতে। এখনো লাস দাফন করা হয়েনি। প্রায় ২৪ ঘন্টা পার হয়েছে। লাশ ফুলতে শুরু হয়েছে, গন্ধ ছড়াবে। কয়েকজনের কাছ থেকে চাঁদা তুলে একটি এসিযুক্ত এ্যাম্বুলেন্স আনিয়ে লাশটি সেখানে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৭১ টিভি ও যমুনা টিভির সংবাদমাধ্যমের কর্মিরা হাজির হয়েছে। কাউন্সিলার সাহেবও এসেছে। শেষে বাড্ডা থানার ওসি সাহেব এসে লাশটি নরসিংন্দীর গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

শেষ পর্যন্ত এলাকাবাসীর চাপে উপস্থিত পুলিশ-সাংবাদিক-কমিশনারের সামনে তিনটি অঙ্গীকারনামা তৈরি করা হয়।
১। ফিরোজ ভুঁইয়া সাহেবের ছোট ছেলে তার বড় ভাইকে গ্রামের বাড়িটি ১৫ দিনের মধ্যে নিজ খরচায় রেজেষ্ট্রি করে লিখে দিবে।
২। ফিরোজ ভুঁইয়া সাহেবের বড় ছেলে স্বাধীনতা স্বরণীর বাড়িটির দাবি ছেড়ে দিবে।
৩। ফিরোজ ভুঁইয়া সাহেবের স্ত্রী তাঁর বড় ছেলের সাথে গ্রামের বাড়িতে থাকবেন। যত দিন তিনি জীবিত থাকবেন ততোদিন প্রতি মাসে ২০,০০০/= টাকা ছোট ছেলে মায়ের খরচ হিসেবে দিবে।
তিনটি আলাদা আলাদা অঙ্গীকারনামা তৈরি করে সকলের স্বাক্ষর নিয়ে ঝামেলাটি শেষ করা হয়।

আমাদের সামাজিক অবক্ষয় কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে!!! বাবার লাশ পরে আছে, সেদিকে সন্তানের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আগে চাই সম্পদের দখল। আল্লাহ এমন সন্তান কোনো পিতা-মাতাকে না দেক।

যমুনা টিভি
৭১ টিভি
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৩৫
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×