somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃষ্ণচূড়া

০২ রা মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বৃক্ষপ্রেমিক দ্বিজেন শর্মা বলেছিলেন - বসন্তে কৃষ্ণচূড়া ফোটে না, আর ফুলের বাজারেও কৃষ্ণচূড়া বিকোয় না।
তবুও কৃষ্ণচূড়ার কদর আর রূপের ঝলক তাতে একবিন্দুও কমে না।

ফুলের নাম : কৃষ্ণচূড়া
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : গুলমোহর, রক্তচূড়া।
Common Name : Flame Tree, Royal Poinciana, Flamboyant tree, Mayflower, Peacock flower.
Scientific Name : Delonix regia

কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম গুলমোহর এই কথাটা অনেক কম লোকোই জানেন, কিন্তু কৃষ্ণচূড়ার নাম জানেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার।

গুলমোহরের ফুল ঝরে যায়
বনে বনে শাখায় শাখায়।
কেন যায় কেন যায়
বাহারের মন ভেঙ্গে যায়।।
----- মুকুল দত্ত -----



যখন কৃষ্ণচূড়ার সময় হয়, তখন দেখা যায় কৃষ্ণচূড়ারা ফুটে আছে গাছে গাছে লালে লাল হয়ে। আমাদের দেশে কৃষ্ণচূড়া ফোটার সময় এপ্রিল থেকে জুন। গ্রীষ্মে লাল রঙের ফুলে প্রায় নিষ্পত্র গাছ আচ্ছন্ন হয়ে গেলেও বর্ষা পর্যন্ত গাছে ফুলের রেশ থাকে। তবে দুনিয়ার অন্য প্রান্তের কৃষ্ণচূড়া গাছেরা কিন্তু আমাদের সময়ের সাথে মিল রেখে ফুল ফোটায় না, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সয়ম কৃষ্ণচূড়াকে ফুটতে দেখা যায়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ফ্লোরিডায় ফোটে জুন মাসে আবার ক্যারাবিয়ান অঞ্চলে ফোটে মে থেকে সেপটেম্বর পর্যন্ত। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ায় ফুটতে দেখা যায় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, কিন্তু আরব আমিরাতে ফুটতে শুরু করে সেপ্টেম্বরে। এখানে ছোট্ট করে বলে রাখা যায়, কৃষ্ণচূড়া কিন্তু আমাদের দেশীয় গাছ বা ফুল নয়। এর আদি উৎস পূর্ব আফ্রিকা।


"গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো
উড়ে তোমার উত্তরী,
কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী।"
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----



বাংলাদেশের প্রকৃতিতে রক্ত রাঙ্গা পলাশ আর মান্দার ফোটে প্রথমে। এদের দাপট শেষ হতে না হতেই আবার লাল রঙ্গের লালীমা নিয়ে হাজির হয় কৃষ্ণচুড়া। অবশ্য কৃষ্ণচূড়া যে শুধু লাল রং এর হয় তা নয়, প্রধানতো লাল হলেও কমলা লাল এবং হলুদ রঙের কৃষ্ণচূড়াও হতে দেখা যায়। অনেকে লাল আর কমলা-লাল রং এর ফুলগুলিকেই কৃষ্ণচূড়া মনে করে আরা হলুদগুলিকে ভাবে রাধাচূড়া। আসলে রাধাচূড়া হলুদ বা হলদেলাল হয় ঠিকই, কিন্তু কৃষ্ণচূড়ার সাথে এর প্রধাণ পার্থক্য হচ্ছে গাছের আকারের। কৃষ্ণচূড়া হয় বড় থেকে মাঝারি আকারের গাছ, আর রাধাচূড়া যাকে অনেক সময় বলা হয় ছোটো কৃষ্ণচূড়া সেটা হয় ছোটো আকারের গাছ। আবার কনকচূড়া নামের আরেকটি হলদে রঙের ফুল আছে সেটিকেও অনেক রাধাচূড়া আর কৃষ্ণচূড়ার সাথে গুলিয়ে ফেলে। এদের ফুল দেখতে আলাদা হলেও গাছের পাতা অনেকটাই কৃষ্ণচূড়া এবং রাধাচূড়ার মত বলেই সম্ভবতো এই গোলমালটি ঘটে।


সুনীল তোমার ডাগর চোখের দৃষ্টি পিয়ে
সাগর দোলে, আকাশ ওঠে ঝিলমিলিয়ে।
পিয়াল বনে উঠল বাজি তোমার বেণু
ছড়ায় পথে কৃষ্ণচূড়া পরাগ-রেণু।
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----



কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। কৃষ্ণচূড়া গাছ উচ্চতায় ১২ মিটারের মতো হলেও শাখা-পল্লবে এটি অনেকটা যায়গা জুড়ে ছড়াতে পারে। কৃষ্ণচূড়া গাছে উজ্জল সবুজ ঝিরি ঝিরি পাতা থাকে। এই পাতা তাকে অন্যরকম দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য দান করেছে। কৃষ্ণচুড়া গাছ যৌগিক পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। সৌন্দর্যের সাথে সাথে এই পাতার নিভিড় ছায়া অনাবিল প্রশান্তি দিতে পারে। গাছ যখন একটু বড় হয় তখন ডাল-পালা চারদিকে ছড়িয়ে দেয় মাটির দিকে মুখ করে। আমাদের দেশে শীত শেষে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে যায় অনেকটাই। প্রায় পত্রহীন গাছে গাছে বড় বড় থোকায় থোকায় ঝাপটে আসে কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল। দূর থকে দেখা যায় শুধুই লালের লীলা, অল্প যা কিছু পাতা থাকে তা লজ্জায় লাল হয়ে মিলয়ে যায় লালের সাথেই। অনেকে মনে করেন পৃথিবীর সবচেয়ে রঙ্গীন গাছ এই কৃষ্ণচূড়া।


"বসুধা নিজ কুন্তলে পরেছিল কুতূহলে
এ উজ্জ্বল মণি,
রাগে তারে গালি দিয়া, লয়েছি আমি কাড়িয়া-
মোর কৃষ্ণ-চূড়া কেনে পরিবে ধরণী?"
----- মাইকেল মধুসূদন দত্ত -----



কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো বড় চার থেকে পাঁচটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়ি গুলো প্রায় ৫ থেকে সাড়ে ৭ সেন্টিমিটারের মত চওড়া হতে পারে। পাপড়িগুলি এমন ভাবে মেলে থাকে মনে হয় যেন বাঘের থাবা। খুববেশিসম্ভব এর জন্যই কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম হয়েছে Delonix regia.
Delonix শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ delos আর onux থেকে। যার আক্ষরিক অর্থ স্পষ্ট দৃশ্যমান থাবা।
regis শব্দের অর্থ royal, তাই কৃষ্ণচূড়াকে রাজকীয় গাছ বা ফুল বলতে পারেন।


“তুমি তো দিয়েছিলে মোরে কৃষ্ণচূড়া ফুল
আমি তো বসেছিলাম নিয়ে শুধু গানের সুর,
তুমি তো দিয়েছিলে মোরে কৃষ্ণচূড়া ফুল
চলে গেছ কোথায় আমায়
ফেলে বহুদূর…….”
----- সুমন -----



কৃষ্ণচূড়া গাছের ফল শিমের মত চ্যাপ্টা, আকারে বেশ বড়, প্রায় ৩০ থেকে ৬০ সে.মি. লম্বা হতে পারে। বীজ থেকে সহজেই চারা জন্মে। চারাগুলি দ্রুত বাড়ে আর কয়েক বছরের মাঝেই সেই গাছে ফুল আসে। কৃষ্ণচূড়া গাছ আনেকটা যায়গা নিয়ে লাগানো উচিত। আর সব চেয়ে সুন্দর হয় যদি কৃষ্ণচূড়ার কাছাকাছিই এমন গাছ লাগানো যায় যাতে হলুদ বা নীল রঙের ফুল ফোটে। যেমন কৃষ্ণচুড়া আর কনকচূড়া কিংবা জারুল অথবা সোনালু ইত্যাদি।


"কৃষ্ণচূড়া আগুন তুমি আগুন ঝরা বানে,
খুন করেছ শূন্য তোমার গুন করেছ গানে।

আমি শীতের রিক্ত সখার ব্যর্থ হাহাকারে,
ডাক দিয়েছি তোমায় নব শ্যামল সম্ভারে,
তোমার ছোঁয়া শীর্ণ ভালে স্বপ্ন-জীবন আনে।।

তুমি আমার আলোর নেশা বিভোর ভোরময়,
কৃষ্ণচূড়া তুমি আমার প্রেমের পরিচয়।

কৃষ্ণচূড়া চূড়ায় তোমার রক্ততিলক পরা,
কনক ঝরা যৌবনেরই তুমি স্বয়ম্বরা,
যে সুর তোমার প্রাণে আমার পঞ্চশর হানে।।"
----- বট্কৃষ্ণ দে -----



কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফুলে আছে শ্বাসকষ্ট সমস্যা থেকে মুক্তির উপাদান।
জ্বর নিরাময়ে কৃষ্ণচূড়া গাছের পাতার রস উপকারি।
দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য পাতার নির্যাস উপকারি।
কৃষ্ণচূড়া গাছের ছাল পেটের সমস্যা নিরাময় করে।



তথ্য সূত্র : বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া, অন্তর্জাল।
ছবি ও বর্ণনা : নিজ
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:০৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Between Mars and the Moon

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৩ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৩৮



মডেল: ভিভিয়ান লি, সিঙ্গাপুর

I dwell in the rust-red silence of Mars,
Where winds whisper through canyon scars.
The sun sets low in a sky so wide,
But without your... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজা চার্লস এবং প্রফেসর ইউনূস দীর্ঘজীবি হোন

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৩ ই জুন, ২০২৫ ভোর ৫:০৫



গ্রেট ব্রিটেনে কি হবে তা নিয়ে বুকের মাঝে যে চাপ ছিলো, তা এক ঝটকায় চলে গেলো। প্রধান উপদেষ্টার এই সফর নিয়ে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দলের সব ধরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈচিত্র্যময় ভাষা: ইতিহাসের অক্ষররেখায় হারানো সভ্যতার গল্প

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৩ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১০:৩৮

বৈচিত্র্যময় ভাষা: ইতিহাসের অক্ষররেখায় হারানো সভ্যতার গল্প

ছবি এআই এর সহায়তায় তৈরি।

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, ভাষার বৈচিত্র্য আল্লাহর নিদর্শন। পবিত্র কুরআনে ভাষার বৈচিত্র্যকে সৃষ্টির একটি আয়াত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান জুড়ে ইসরায়েলর ব্যাপক বিমান হামলা, নিহত সেনা প্রধান

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৩ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯



গতরাতে ইরানের উপর নজিরবিহীন বিমান হামলা চলিয়ে ইসরায়েল, এই হামলায় ইজরাইলের অন্তত ২০০ টি যুদ্ধবিমান অংশগ্রহণ করে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে- উক্ত হামলায় ইরানের সেনা প্রধান মেজর... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামহোয়াইর ইন ব্লগ ভিজিট করুন যে কোনো মোবাইল অপারেটর ডাটা ব্যবহার করে (সামু ব্লগারদের জন্য ক্ষুদ্র ঈদ উপহার)।

লিখেছেন গেঁয়ো ভূত, ১৩ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:২৭





ঈদ মোবারাক! ঈদ মোবারাক!! ঈদ মোবারাক!!!

প্রিয় সহব্লগারস পবিত্র ঈদ উল আজহার শুভেচ্ছা নিন। আমাদের মধ্যে অনেকেই জিপি কিংবা অন্য কোনো অপারেটর থেকে সামু ব্লগ ভিজিট করতে সমস্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×