somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিলষিত বৃষ্টি

০৯ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রচন্ড অভিলষিত বৃষ্টি এলো ঢাকার বুকে। তাকে স্বাগত জানাতে নেমে ছিলাম পথে। শীতল পরশে তৃপ্ত হয় দেহ-মন। আজ তাই রবি-কবির বৃষ্টি বন্দনা রইলো।

= ১ =
ঝুঁটি-বাঁধা ডাকাত সেজে
দল বেঁধে মেঘ চলেছে যে
আজকে সারাবেলা।
কালো ঝাঁপির মধ্যে ভরে
সুর্যিকে নেয় চুরি করে,
ভয়-দেখাবার খেলা।
বাতাস তাদের ধরতে মিছে
হাঁপিয়ে ছোটে পিছে পিছে,
যায় না তাদের ধরা।
আজ যেন ওই জড়োসড়ো
আকাশ জুড়ে মস্ত বড়ো
মন-কেমন-করা।
বটের ডালে ডানা-ভিজে
কাক বসে ওই ভাবছে কী যে,
চড়ুইগুলো চুপ।
বৃষ্টি হয়ে গেছে ভোরে
শজনেপাতায় ঝরে ঝরে
জল পড়ে টুপটুপ।
লেজের মধ্যে মাথা থুয়ে
খ্যাঁদন কুকুর আছে শুয়ে
কেমন একরকম।
দালানটাতে ঘুরে ঘুরে
পায়রাগুলো কাঁদন-সুরে
ডাকছে বকবকম।
কার্তিকে ঐ ধানের খেতে
ভিজে হাওয়া উঠল মেতে
সবুজ ঢেউয়ের 'পরে।
পরশ লেগে দিশে দিশে
হিহি করে ধানের শিষে
শীতের কাঁপন ধরে।
ঘোষাল-পাড়ার লক্ষ্মী বুড়ী
ছেঁড়া কাঁথায় মুড়িসুড়ি
গেছে পুকুরপাড়ে,
দেখতে ভালো পায় না চোখে
বিড়বিড়িয়ে বকে বকে
শাক তোলে, ঘাড় নাড়ে।
ঐ ঝমাঝম বৃষ্টি নামে
মাঠের পারে দূরের গ্রামে
ঝাপসা বাঁশের বন।
গোরুটা কার থেকে থেকে
খোঁটায়-বাঁধা উঠছে ডেকে
ভিজছে সারাক্ষণ।
গদাই কুমোর অনেক ভোরে
সাজিয়ে নিয়ে উঁচু ক'রে
হাঁড়ির উপর হাঁড়ি
চলছে রবিবারের হাটে
গামছা মাথায় জলের ছাঁটে
হাঁকিয়ে গোরুর গাড়ি।
বন্ধ আমার রইল খেলা,
ছুটির দিনে সারাবেলা
কাটবে কেমন করে?
মনে হচ্ছে এমনিতরো
ঝরবে বৃষ্টি ঝরঝর
দিনরাত্তির ধরে!
এমন সময় পুবের কোণে
কখন যেন অন্যমনে
ফাঁক ধরে ঐ মেঘে,
মুখের চাদর সরিয়ে ফেলে
হঠাৎ চোখের পাতা মেলে
আকাশ ওঠে জেগে।
ছিঁড়ে-যাওয়া মেঘের থেকে
পুকুরে রোদ পড়ে বেঁকে,
লাগায় ঝিলিমিলি।
বাঁশবাগানের মাথায় মাথায়
তেঁতুলগাছের পাতায় পাতায়
হাসায় খিলিখিলি।
হঠাৎ কিসের মন্ত্র এসে
ভুলিয়ে দিলে একনিমেষে
বাদলবেলার কথা।
হারিয়ে-পাওয়া আলোটিরে
নাচায় ডালে ফিরে ফিরে
বেড়ার ঝুমকোলতা।
উপর নিচে আকাশ ভরে
এমন বদল কেমন করে
হয়, সে-কথাই ভাবি।
উলটপালট খেলাটি এই,
সাজের তো তার সীমানা নেই,
কার কাছে তার চাবি?
এমন যে ঘোর মন-খারাপি
বুকের মধ্যে ছিল চাপি
সমস্ত খন আজি
হঠাৎ দেখি সবই মিছে
নাই কিছু তার আগে পিছে
এ যেন কার বাজি।


= ২ =
আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না ॥
এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদ্‌ভ্রান্ত মেঘে মন চায়
মন চায় ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে॥
মেঘমল্লার সারা দিনমান।
বাজে ঝরনার গান।
মন হারাবার আজি বেলা, পথ ভুলিবার খেলা-- মন চায়
মন চায় হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে॥



= ৩ =
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ে,
ঝড় এল রে আজ--
মেঘের ডাকে ডাক মিলিয়ে
বাজ্‌ রে মৃদঙ বাজ্‌।
আজকে তোরা কী গাবি গান
কোন্‌ রাগিণীর সুরে।
কালো আকাশ নীল ছায়াতে
দিল যে বুক পূরে।

বৃষ্টিধারায় ঝাপসা মাঠে
ডাকছে ধেনুদল,
তালের তলে শিউরে উঠে
বাঁধের কালো জল।
পোড়ো বাড়ির ভাঙা ভিতে
ওঠে হাওয়ার হাঁক,
শূন্য খেতের ও পার যেন
এ পারকে দেয় ডাক।

আমাকে আজ কে খুঁজেছে
পথের থেকে চেয়ে।
জলের বিন্দু পড়ছে রে তার
অলক বেয়ে বেয়ে।
মল্লারেতে মীড় মিলায়ে
বাজে আমার প্রাণ,
দুয়ার হতে কে ফিরেছে
না গেয়ে তার গান।

আয় গো তোরা ঘরেতে আয়,
বোস্‌ গো তোরা কাছে।
আজ যে আমার সমস্ত মন
আসন মেলে আছে।
জলে স্থলে শূন্যে হাওয়ায়
ছুটেছে আজ কী ও।
ঝড়ের 'পরে পরান আমার
উড়ায় উত্তরীয়।

আসবি তোরা কারা কারা
বৃষ্টিধারার স্রোতে
কোন্‌ সে পাগল পারাবারের
কোন্‌ পরপার হতে।
আসবি তোরা ভিজে বনের
কান্না নিয়ে সাথে,
আসবি তোরা গন্ধরাজের
গাঁথন নিয়ে হাতে।

ওরে, আজি বহু দূরের
বহু দিনের পানে
পাঁজর টুটে বেদনা মোর
ছুটেছে কোন্‌খানে--
ফুরিয়ে-যাওয়ার ছায়াবনে,
ভুলে-যাওয়ার দেশে,
সকল-গড়া সকল-ভাঙা
সকল গানের শেষে।

কাজল মেঘে ঘনিয়ে ওঠে
সজল ব্যাকুলতা,
এলোমেলো হাওয়ায় ওড়ে
এলোমেলো কথা।
দুলছে দূরে বনের শাখা,
বৃষ্টি পড়ে বেগে,
মেঘের ডাকে কোন্‌ অশান্ত
উঠিস জেগে জেগে।


= ৪ =
পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে
পাগল আমার মন জেগে ওঠে॥
চেনাশোনার কোন্‌ বাইরে যেখানে পথ নাই নাই রে
সেখানে অকারণে যায় ছুটে॥
ঘরের মুখে আর কি রে কোনো দিন সে যাবে ফিরে।
যাবে না, যাবে না--
দেয়াল যত সব গেল টুটে॥
বৃষ্টি-নেশা-ভরা সন্ধ্যাবেলা কোন্‌ বলরামের আমি চেলা,
আমার স্বপ্ন ঘিরে নাচে মাতাল জুটে--
যত মাতাল জুটে।
যা না চাইবার তাই আজি চাই গো,
যা না পাইবার তাই কোথা পাই গো।
পাব না, পাব না,
মরি অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে॥




= ৫ =
যুগল প্রাণের মিলনের পরে
পুণ্য অমৃত-বৃষ্টি
মঙ্গল-দানে করুক মধুর
নবজীবনের সৃষ্টি।
প্রেমরহস্যসন্ধান-পথে যাত্রী
মধুময় হোক তোমাদের দিন রাত্রি,
নামুক দোঁহার শুভদৃষ্টিতে
বিধাতার শুভদৃষ্টি।



= ৬ =
একলা বসে বাদল-শেষে শুনি কত কী--
'এবার আমার গেল বেলা' বলে কেতকী॥
বৃষ্টি-সারা মেঘ যে তারে ডেকে গেল আকাশপারে,
তাই তো সে যে উদাস হল-- নইলে যেত কি॥
ছিল সে যে একটি ধারে বনের কিনারায়,
ঠত কেঁপে তড়িৎ-আলোর চকিত ইশারায়।
শ্রাবণঘন-অন্ধকারে গন্ধ যেত অভিসারে--
সন্ধ্যাতারা আড়াল থেকে খবর পেত কি॥



= ৭ =
তোমার মনের একটি কথা আমায় বলো বলো
তোমার নয়ন কেন এমন ছলোছলো ॥
বনের' পরে বৃষ্টি ঝরে ঝরো ঝরো রবে।
সন্ধ্যা মুখরিত ঝিল্লিস্বরে নীপকুঞ্জতলে।
শালের বীথিকায় বারি বহে যায় কলোকলো ॥
আজি দিগন্তসীমা
বৃষ্টি-আড়ালে হারানো নীলিমা হারালো--
ছায়া পড়ে তোমার মুখের 'পরে
ছায়া ঘনায় তব মনে মনে ক্ষণে ক্ষণে,
অশ্রুমন্থর বাতাসে বাতাসে তোমার হৃদয় টলোটলো ॥




= ৮ =
আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে--
আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে।
এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি
পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি
নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে
আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে।

রহিয়া রহিয়া বিপুল মাঠের 'পরে
নব তৃণদলে বাদলের ছায়া পড়ে।
এসেছে এসেছে এই কথা বলে প্রাণ,
এসেছে এসেছে উঠিতেছে এই গান,
নয়নে এসেছে, হৃদয়ে এসেছে ধেয়ে।
আবার আষাঢ় এসেছে আকাশ ছেয়ে।



= ৯ =
আমারে যদি জাগালে আজি নাথ,
ফিরো না তবে ফিরো না, করো
করুণ আঁখিপাত।
নিবিড় বন-শাখার 'পরে
আষাঢ়-মেঘে বৃষ্টি ঝরে,
বাদলভরা আলসভরে
ঘুমায়ে আছে রাত।
ফিরো না তুমি ফিরো না, করো
করুণ আঁখিপাত।


বিরামহীন বিজুলিঘাতে
নিদ্রাহারা প্রাণ
বরষা-জলধারার সাথে
গাহিতে চাহে গান।
হৃদয় মোর চোখের জলে
বাহির হল তিমিরতলে,
আকাশ খোঁজে ব্যাকুল বলে
বাড়ায়ে দুই হাত।
ফিরো না তুমি ফিরো না, করো
করুণ আঁখিপাত।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:০২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×