সেদিন সারা রাত ঘুম হয়নি। ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে ঘুমিয়েছি। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গিন্নী ডেকে বললো আমার এক চাচাতো ভাইয়ের ছেলে এসেছে দেখা করতে। মুখ ধুয়ে, চোখ মুছে একটি টি-শার্ট গায়ে চড়িয়ে ড্রইং রুমে গিয়ে বসলাম। ভাতিজা জানালো ওর এলাকার একজন অতি দরিদ্র রিকসাচালক হাসপাতালে মারা গেছে। গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার খরচ অনেক। তাই আমাদের এলাকাতেই কবর দিবে।
এলাকার কবরস্থানের পরিচালনা পর্ষদের আমিও একজন সদস্য। তাই আমি সেক্রেটারি সাহেবকে ফোন করে বললাম একজন দরিদ্র রিকসাচালক হাসপাতালে মারা গেছে তাকে ফ্রী কবর দেয়ার অনুমতি দেয়ার যায় কিনা। তিনি সাথে সাথে কবরস্থানের ফি ফ্রী করে দেন। যারা কবর খোঁড়ে আমি তাদেরকেও ফোন করে জানিয়ে দেই। ভাতিজার হাতে ৫০০ টাকাও দিয়ে দেই অন্যান্য খরচের জন্য।
ঘটনাটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু শেষ হয়নি।
বিকেলে একটি কাজে আমি আমার এক চাচাতো ভাইকে ফোন দেই। সে জানায় এলাকা থেকে বেশ কিছু ছেলেপেলে বোট পিকনিকে গিয়ে মদ খেয়ে অসুস্থ হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জন মারা গেছে। আরো কয়েকজন হাসপাতালে আছে।
সন্ধ্যার পরে কবরস্থানের সেক্রেটারি সাহেব আমাকে ফোন দিয়ে জানালেন আমি যাকে ফ্রী কবর দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি সে ঐ মদ খেয়ে মারা যাওয়াদের একজন। অলরেডি ২ জনের কবর হয়েছে। আরেক জনের কবর দেয়ার সময় পুলিশ লাশ নিয়ে গেছে। রিকসাচালক যাকে কবর দেয়া হয়েছে তার মৃত্যুসনদ বা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আছে কিনা সেটা জানতে চাইলেন তিনি।
যেহেতু ঐ লাশটি হাসপাতালে ছিলো সেইহেতু মৃত্যুসনদ বা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থাকা উচিত। আমি সাথে সাথে ভাতিজাকে কল করে ধমক দিলাম। আমাকে মৃত্যুর কারণ কেনো জানালো না। ভাতিজা বললো বিষয়টা সে নিজেও জানতো না। আমি সাথে সাথে ওকে মৃত্যুসনদ বা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে রাখতে বললা।
শেষ পর্যন্ত সম্ভবতো ৫ বা ৬ জন মারা গেছে।
ফেসবুকে এই রিপোর্টটা দেখলাম আজকে।
view this link
মৃত্যুর কারণ জানতে না চাওয়াটা আমার চরম বোকামি হয়েছে। এবং শিক্ষাও হয়েছে-
ঠিকমতো খোঁজ খবর না নিয়ে ভালো কাজ করা যাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৮