
পুকুরের টলটলে জলে যখন বড় বড় লাল শাপলা ফুটে থাকে, তখন সেটি দেখতে এতোটাই সুন্দর লাগেযে তাতে মন উদাস হয়ে যায়। মন চায় জলে নেমে তুলে নিয়ে আসি কয়েকটি। কিন্তু হায়!! আমি সাঁতার জানি না, মন উদাস হওয়ার সেটাই বড় কারণ।
দেখতে গিয়েছিলাম জমিদার বাড়ি, সাটুরিয়াতে। সেখানে জমিদারদের ঘাটলা পুকুরে দেখতে পেলাম বড় বড় লাল শাপলা ফুটে আছে। সেই পুকুরের ঘাটে বসে ছিলাম বেশ কিছুটা সময়। লাল শাপলার ছবিও তুলেছি কিছু।
এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে।
এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে।।
দলি, শাপলা শালুক শতদল এসো রাঙায়ে তোমার পদতল
নীল লাবনি ঝরায়ে চলচল এসো অরণ্য পর্বতে।।
এসো ভাদরের ভরা নদীতে ভাসায়েকেতকী পাতার তরণী
এসো বলাকার রঙ পালক কুড়ায়ে বাহি’ ছায়াপথ-সরণি।
শ্যাম শস্যে কুসুমে হাসিয়া এসো হিমেল হাওয়ায় ভাসিয়া
এসো ধরনীরে ভালোবাসিয়া দুর নন্দন-তীর হতে।।
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----

লাল শাপলা
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : রক্ত কমল, লাল কমল, আলগন্ধা, অলিপ্রিয়া, আলোহিতা, নিলুফার।
Common Name : Red Water Lily
Scientific Name : Nymphaea Rubra
লাল শাপলা বা রক্ত কমল নাতিশীতোষ্ণ ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার স্বল্প গভীর জলের হ্রদ ও পুকুরে জন্মে। সাধারণত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীনের ইউনান প্রদেশ, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে শাপলা ফুটতে দেখা যায়।

সারা বাংলাদেশের সমস্ত বদ্ধ জলাশয়েই জলজ ফুল শাপলাকে ফুটে থাকতে দেখা যায়। গ্রামবাংলার চিরায়ত এক দৃশ্য "বিলের জলে কিশোর ছেলে ছোট্ট নৌকোয় তুলছে শাপলা"। আমাদের বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চোখে পরে সাদা শাপলা, এবং তারপরেই আছে লাল শাপলার অবস্থান। এই লাল শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম Nymphaea Rubra। প্রচীন যুগে গ্রীকরা এই জাতীয় ফুলকে Nymph (জলপরীদের) উৎসর্গ করতো, সেখান থেকেই এই Nymphaea শব্দটি এসেছে।
![]()
বাংলাদেশে কয়েক প্রজাতির শাপলা দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে শুধু মাত্র সাদা শাপলাই আমাদের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে, অন্য কোনো রঙের শাপলা তা পায়নি। অন্যদিকে শ্রীলংকা আর ইরানের জাতীয় ফুলও কিন্তু শাপলা, তবে তাদের রং ভিন্ন ভিন্ন।
বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকে এবং টাকায় শাপলর ছবি আছে। ইন্দোনেশিয়ার কাগুজে নোটেও লাল শাপলার ছবি আছে। তাছাড়া বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ডাকটিকিটেও লাল শাপলার উপস্থিতি রয়েছে।


যতদূর জানি সারা পৃথিবীতে মোটামুটি ৩৫ প্রজাতির মত শাপলা দেখতে পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের শাপলাদের রং সাধারণত সাদা, লাল, লালচে গোলাপি, নীল, আর নীলচে সাদা, বেগুনী হতেই বেশি দেখা যায়।
আলোর অমল কমলখানি কে ফুটালে,
নীল আকাশের ঘুম ছুটালে॥
আমার মনের ভাব্নাগুলি বাহির হল পাখা তুলি,
ওই কমলের পথে তাদের সেই জুটালে॥
শরতবাণীর বীণা বাজে কমলদলে।
ললিত রাগের সুর ঝরে তাই শিউলিতলে।
তাই তো বাতাস বেড়ায় মেতে কচি ধানের সবুজ ক্ষেতে,
বনের প্রাণে মরমরানির ঢেউ উঠালে॥
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----

জলের উপর ভেসে থাকে শাপলা ফুল আর তার বড় সবুজ পাতা। সাধারণত শাপলা ফুল পানির উপরে ছড়ানো অবস্থায় থাকে। কদাচিৎ পানির অল্প নীচে থাকতে পারে, কোথাও কোথাও এই অল্প ডুবে থাকা শাপলাকে “ডুবুরি শাপলা” বলে।
শাপলার পাতা আর ফুলের কান্ড বা ডাটি বা পুস্পদন্ড পানির নিচে মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে আর এই মূল যুক্ত থাকে মাটির সঙ্গে। এই মূল থেকই আবার নতুন শাপলা জন্ম নেয়। শাপলার কান্ড বা ডাটা বা পুস্পদন্ড সবজী হিসেবেও খাওয়া হয়। আজকাল এই শাপলা ফুলের কান্ড বা ডাটা বা পুস্পদন্ড বাজারে বিক্রি হচ্ছে হরহামেসাই। তবে লাল শাপলা অনেকেই খেতে চায় না।

পূর্ণবিকশিত শাপলা ফুলের গর্ভাশয়ে গুড়ি গুড়ি বীজ থাকে। আঠালো এই বীজ গ্রামের ছোটো ছোটো বাচ্চাদের খেতে দেখা যায়। তাছাড়া এই বীজ ভেজে এধরনের খাবার তৈরী করা হয় যার নাম “ঢ্যাপের খৈ”। খেতে খুবই চমৎকার। কিন্তু উপযুক্ত সময়ে গর্ভাশয়ের এই বীজ সংগ্রহ না করা হলে শেষ পর্যায়ে তা শুষ্ক হয়ে যায়।
শাপলা সারা বছর ধরেই একটু-আকটু ফুটতে দেখা যায় তবে বর্ষায় ও শরৎ কালে এদের ফুটার সিজন বলা যায়। তখন এরা ফুটে প্রচুর পরিমানে।
ছবি তোলার স্থান : বালিয়াটি জমিদার বাড়ি পুকুর, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ২৫শে নভেম্বর, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ।
তথ্য সূত্র : বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া, অন্তর্জাল।
ছবি ও বর্ণনা : মরুভূমির জলদস্যু।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১১:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


