somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঃশব্দে নিভৃতচারী - ২

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শক্ত হয়ে আছে শরীর টা। খানিক কাছে টানতে চাইল অয়ন।ওকে ফিরতেই হবে। স্বভাববশত জোর খাটাল সে। এক ঝটকায় মুখটা নিজের দিকে ফেরালো। কিন্তু সুমীর মুখ দেখে থমকে গেল সে। ওই চোখে এত ঘৃণা, ঠোটের কোনে এত তাচ্ছিল্য? নিজের প্রতি ঘৃণায় এতটুকু হয়ে গেল সে । চাইলেই খানিক আদিম খেলায় মেতে উঠতে পারত সে। কিন্তু সুমীর মনের ভেতর ঘরের কোনে কোথায় একটা একলা থাকার সুর। অস্থির হয়ে পড়ে সে। আজ অনেক খেয়ে এসেছে বুঝি? বিয়ের পর ওর সাথে তেমনসম্পর্কই হয়ে উঠে নি। যে যার যার মত অফিসে যায় আর আসে। অয়ন দেরী করেই বাড়ি ফেরে সবসময়। কার কাছে ফিরবে? এই মেয়েটা তার মনের দরজা এত শক্ত ভাবে বন্ধ করেছে যা ভাঙা সম্ভব নয়। কথা বলেনা। চুপচাপ থাকে। কিন্তু অফিসে যাবার সময় মানিব্যাগ,রুমাল, বাইকের চাবি জায়গা মত পেয়ে যায় সে। মাঝে মাঝে ভাবে অয়ন। ও কি দায় সারছে? কর্তব্য পালন করছে? এক একটা রাত আসে। ওকে আবিস্কার করতে ভীষন ইচ্ছে হয় তার। কিন্তু কি করে? এ যেন এক অসহ্য নীরবতা আর নিশ্বাসের শব্দ ব্যতীত কিছুই নয়।সকালে ঘুম থেকে উঠে কাল রাতের কথা মনে পড়ল ব্রাশ করার সময়। ভেতরটা লজ্জায় মরে গেছে তার।অয়ন ভাবে, আর এসব ছোবই না।ও কি ভাবল? লাভ মেরিলি ইন বডি ইজ কল্ড লাস্ট, নট লাভ। আরো ছাইপাশ ভাবতে ভাবতে খাবার টেবিলে এল অয়ন। দেখল সুমী আগে থেকেই বসে আছে। চুপচাপ। "এই মেয়ে! কিছু বল,,,,," মনের ভেতরটা চিৎকার করে উঠে। চেয়ারটা টেনে বসে পড়ে সে।
- কাল,,,,
- ওভাবে খাবেন না।
- আমি বরং পাশের রুমে গিয়ে শোব।
- তার দরকার নেই।
আর কথা এগোয় না। ও কি ভুল করল? সুমীর জীবন কে আটকে দিল কি? ওর জীবনে কেউ একজন থাকা অসম্ভাব্য নয়। অয়ন শুধু জেনেছে ও বই পড়তে ভালবাসে। ব্যাস। অয়ন বই পড়ুয়া অনেক। তাই পড়ুয়াদের প্রতি অনেক দুর্বল সে। কিন্তু এক্ষেত্রে কি যে হচ্ছে তার মাথায় আসছে না। কাল কি হয়েছিল? ছিহ! শুধুই ঐ চোখ গুলো আজ অফিসের কাজ ঠিকমত করতে দিল না তাকে। ঐ চোখে খুব ঘৃনা দেখেছে সে। তাই সকালে অনেক কুকড়ে গেছে অয়ন। হীনমন্যতায়। অফিস থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে একটি বই নিয়ে বসে যায়। হটাত খেয়াল করে। ও এখনো আসেনি তো? বাপের বাড়ি চলে যায়নি তো? কাল খারাপ ব্যবহার করেছিলাম। এজন্য কল করে বলে দেয়া যায়না কি? এমন ভাবতে ভাবতে কলিং বেলের শব্দ শুনে অয়ন। লাফ দিয়ে উঠে দরজা খুলে। "আচ্ছা আমি এত তাড়াহুড়া করছি কেন?,,,,,তুই সিউর?,,,,,,ধুর বোকা,,,,,হতেও পারে,,,,,চৈত্র মাসের ক্ষেত কেস নাতো? ,,,,, এতদিন পানি না পেয়ে যেই পানিপেল শুষে নিল,,,,হু?,,, আমি নারী ঘেষা পুরুষ ছিলাম না বিধায়?,,,,,,,হতে পারে। দাড়া বুঝে নিই। লাভ এট ফার্স্ট সাইট?,,,এটাতো ছবি দেখেই হয়েছে। ডার্ক ব্ল্যাক আইজ,,,,,,,"
- সরুন।
- হ্যা?
- জায়গা দিন।
- ও হ্যা হ্যা।
এরপরেই আনমনে ভাবতে থাকে অয়ন। সময় দিতে হবে। হামলে পড়েছিলাম বুঝি? তার বুঝি আমার সম্পর্কে অনেক খারাপ ধারনা হল?। আরো গুটিয়ে যায়সে। একটু পর সুমী ফ্রেশ হয়ে আসে খাবার টেবিলে।
- কেমন ছিল আজকের দিন?
- আগের মতই।আপনার?
- নতুন কিছু নয়।
এরপর শুধু চামচের শব্দ। চারদিকে অসহ্য নীরবতা। ভেতরে বহতা নদী আছড়ে ফেলছে ঢেউ। বাহিরে কনক্রিটের দেয়াল। কাটখোট্টা। কিসের জন্য বেচে আছে ও? কি চায় ও সুমীর কাছ থেকে। কিচেনে এসে হাত লাগায় অয়ন। তাও কিছুটা কাছে থাকা। রহস্যের প্রতি মানুষের যে এক দুর্নিবার আকর্ষন, লোভ। একটু শব্দের অপেক্ষায়। কিছু শব্দ। বেশী চা ওয়া হয়ে যায় কি? কম্পলেক্স। আপনি'র দেয়াল।তুমি'র মত সহজ নয়। অয়ন ভাবে,কি চায় ও মেয়েটার কাছ থেকে? কিছু শব্দ? হাসি? চোখের মধ্যেকার আকুলতা? কি? কি তাকে এতটা দুর্বল করে দিচ্ছে এত?সে কি একটু পার্ভার্ট? স্নান সেরে বেরুবার সময় যে ওকে এমন স্নিগ্ধ লাগে ও কি তা জানে? ইদানীং অফিস থেকে তারাতারি করে ফেরে ও। অপেক্ষাও মধুর হয় তা তার জানা ছিল না এতকাল। ঘাড় থেকে একটু নিচে বুকের বামে কেমনযেন ভোতা লাগে। কলাপ্স করে এমন মনে হয় তার। কি ভয়ংকর যন্ত্রনা।হার্ট টা বুঝি একটু বিট মিস করে ইদানিং? ধড়াস ধড়াস শব্দে হার্ট টা বুঝি বুকের খাচা থেকে বেরিয়ে এক হাত সামনে থেকে কাপে ওর? এভাবেই কয়েকদিন কেটে যায়। কাজে ডুবে যায় এসব থেকে বাচতে। সুমীর আগেই ঘুম থেকে উঠে অয়ন। মনে ক্ষীন আশা, যদি ও তারদিকে মুখ করে শোয়। কদাচিত দেখে সুমী এপাশ ফিরে ঘুমিয়ে আছে। একেকটা সকাল তার কাছে স্বর্গীয় মনে হয়। পুবের সুর্যের আলোটা তার ঘাড় ডিঙোয় খানিক। আলো এসে পড়ে তার দেবীর মুখে। অনেক খুটিয়ে দেখে অয়ন। কিছু বাধ না মানা চুল তার মুখে এসে পড়ে। সরিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু দেয় না। ভারী লজ্জা হয় ঐ রাতের কথা ভেবে। তারপর তার ঠোট, গ্রীবা, গলা,স্তনের ভাজ। ভ্রম থেকে প্রানপনে নিজেকে গুটিয়ে নেয় নিজেকে। একটু কি পার্ভাট সে? বেশীক্ষন তাকানোর সুযোগ হয় না। যদি জেগে গিয়ে দেখে সুমী? লজ্জা পেয়ে যাবে। থাক। ও এভাবেই থাক। নীরব ঠোটে কাপন না থাকুক। আওয়াজ না বেরুক। সব কি পাওয়া যায়? দিন শুরু করে অয়ন। কিন্তু মনটা পড়ে থাকে সুর্যের আলোয় দেখা এক দেবীর মুখে। আজ অফিস থেকে সোজা বন্ধুর বাসায় চলে যায় ও। কিছু সময় ভদকায় মেতে থাকে। একসময় খেয়াল হয়। বাড়ি আর ফেরা হলোনা। ভোর হতে চলল। নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে আসে অয়ন। দরজা খুলেই থমকে যায় সে। একি! ও ডাইনিং টেবিলেই ঘুমাচ্ছে নাকি? কিছুক্ষন পাশে গিয়ে বসে।বড্ড স্থির এক সময়। হটাত জেগে উঠে তার দেবী।
- আপনি?,,,, কোথায় ছিলেন সারারাত?
- বন্ধুর বাসায়। আপনি টেবিলে কেন?বেডে গিয়ে ঘুমাতেন?
- টের পাইনি। অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছি।
- আর করবেন না ।ডোরলকের চাবি আমার কাছে আছে। বাহির থেকে খুলে নিতে পারব। খেয়েছিলেন? রাতে?
- মনে নেই।
এইতো অনেক কথা হল। এর থেকে বেশী কি হতে পারে? অনেক যে হল আজ। কি করবে বুঝে পায়না অয়ন। সুমীও নড়ছে না।
- লেবুর শরবত খাবেন?প্রশ্নটায় চমকে যায় অয়ন। পরেই বুঝতে পারে ও।
- না না ঠিক আছে। কোথাও যাবেন আজ? বাড়ি থেকে ঘুরে আসবেন?
- উহু। আমি ঠিক আছি।
- কিছু বোঝাবেন আমাকে?
- কি?
- আপনি কি এমনই? কোথাও কোন ব্যাথা পেয়েছেন কি? বলা যায়?
- তেমন কিছুই নয়। বোধয় আমার একটু সময় লাগবে।
- ঠিক আছে। আমার জন্য জেগে থাকবেন না।এভাবেই কেটে যায় অয়নের দিন। মন্দ নয়। বর্ষার সময়ের একদিন অয়ন তার প্রিয় চেয়ারটিতে বসে বারান্দায় বৃষ্টি দেখে চাতকের মত। কচু পাতাটিতে জল শেষ পর্যন্ত থাকছে না। কেন? থাকলে কি হয়? থাকুক না একটু। মনের ভেতরের হাহাকার যেন ওই পাতাটিতে যেয়ে ঠেকে। মুখথেকে হটাত দুটি লাইন ফস্কে যায়।
" স্নান শেষে তোমার কিছু অবাধ্য চুল কপালে এসে পড়ে। তা আমার আঙুল দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়নি বলে অনেক আক্ষেপ হয় আমার" অয়ন হাসে।অপ্রকৃতিস্থ হাসি। ভাবে,পাগল হয়ে যায়নি তো? ঐ দিন অনেকক্ষন বৃস্টি দেখে রাতে ঘুমোতে যায় অয়ন। ঘুমের মধ্যে সুমীর বা হাত অয়নের হৃদয়ের উপর এসে থামে। নির্বাক কোমল স্পর্শে স্থির হয়ে যায় অয়ন।কিছু সময় যায়,অবাক উপলব্ধির।হাতটা সরিয়ে দিতেই সুমী বলে,
- থাক না।
অয়ন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। বুঝতে পারেনা। সুমীর চোখ থেকে একটু জল দাগ কেটে নেমে আসে বালিশে। এসবের মানে অয়নের কাছে দুর্বোধ্য ঠেকে। জিজ্ঞাসু দৃস্টিতে তাকিয়ে থাকে ঐ কালো গভীর চোখে। সুমী হটাত অয়নের বুকে মাথা রেখে বলে,
- তুমি এলকোহল ছুয়ো না। এলকোহল তোমাকে অশ্লীল বানিয়ে দেয়।
- হু।
কথা এগোয় না। গভীর এক শ্বাস বেরিয়ে যায় উঠানামা করা অয়নের বুক থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×