কিছুদিন আগে John Grisham এর লেখা The Appeal বইটা পড়ছিলাম, আর তখনই নজরে আসে আমাদের সরকারী বিলবোর্ডগুলো। সেই বই পড়া থেকেই এই বিলবোর্ডগুলোকে আমি সমর্থন করতে শুরু করেছি। কেউ ভালো কিছু করবে, আর বলতে পারবেনা যে সে কি কি ভালো করেছে? “কারেন্ট বন্ধ করে দেখি” বলার থেকে তো বিলবোর্ড ঝোলানো অনেক ভালো, সমর্থন না দেবার আমি তো কোন কারন দেখিনা।
আমি যদি বিরোধী দলে থাকতাম, তাহলে কি করতাম? আমি নতুন বিলবোর্ড তৈরী করতাম। আমার সরকারের সকল ভালো কর্মের তালিকা দিতাম, সাথে যোগ করতাম ক্ষমতাশীন দলের অপকর্মগুলো। আবার ক্ষমতাশীন দল আমার সময়ের অপকর্মগুলো তুলে ধরত। এর নামই তো রাজনীতি, বা কাদা ছোড়াছুড়ি বললে যেটা বেশি ভালো শোনায়।
আগেই বলেছি, বিলবোর্ডগুলোর ব্যপারে আমার চিন্তা-ধারাকে প্রভাবিত করেছে John Grisham এর লেখা The Appeal বইটি।
বইটির লেখক সম্পর্কে বোধ করি সামান্য কিছু বলা উচিৎ। তা না হলে কেন নিছক একজন লেখকের বই দিয়ে আমি আমাদের নেত্রীস্থানীয় লোকদের পরিমাপ করছি সেটা বোঝানো যাবে না। ভদ্রলোক একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং স্বনামধন্য লেখক। তিনি ১৯৮৩ সালে ডেমোক্রেট পার্টির সদস্য হিসাবে মিসিসিপি প্রদেশের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই ভাবে তিনি আইন তৈরী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার সুযোগ লাভ করেন। তাই রাজনীতির ব্যপারে তার কিছুটা হলেও জ্ঞান আছে, সেটা অনস্বীকার্য।
এবার আসি The Appeal বইটির ব্যপারে। বইটিতে বলা হয়, মিসিসিপি প্রদেশে গন ভোটের মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্টের বিচারক নির্বাচন করা হয়। এই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিশদভাবে আলোচনা করা হয় বইটিতে। লাখ লাখ ডলার ব্যয় করে কি করে নির্বাচনে জয় লাভ করা যায়, সেটা দেখানো হয়। নির্বাচনি প্রচারনার অংশ হিসাবে মানুষের কাছে চিঠি, ইমেইল এবং ইস্তেহার আকারে বিভিন্ন খবর পৌছে দেয়া হয়। এমন কি টেলিভিশনেও নির্বাচনী প্রচারনা চালানো হয়।
আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যপারে দেখেছি গ্রামে প্রত্যেক ঘরে নগদ টাকা দেয়া হয়। এই নগদ টাকা না দিয়ে এমন বিলবোর্ড ঝোলানো আমার মতে বেশি ভালো।
বইটির আর একটি অংশ আমাকে প্রভাবিত করেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই লিবারেল এবং কনজারভেটিভ বলে দু’টো দল আছে। আমাদের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কে আমরা নামান্তর করে কনজারভেটিভ পার্টি এবং আওয়ামীলীগ কে লিবারেল পার্টি সহজেই বলতে পারি।
লিবারেল পার্টি দেখাবে কি করে বহমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার জন্য আমাদের আধুনিক হতে হবে, দেখাবে ধর্মীয় ধ্যান-ধারনা নিয়ে মেতে থাকলে আধুনিকায়ন কি করে বাধাগ্রস্থ হয়। আর কনজারভেটিভ পার্টির দায়িত্ব হচ্ছে কি করে ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে আপোস না করেও বিশ্বের সাথে তাল মেলানো সম্ভব এবং সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়।
আর একটি কথা। আমরা যদি পেছনে ফিরে থাকি, তাহলে সামনে এগিয়ে যাব কি করে? আমরা যদি নিজের চলার পথের দিকে না চেয়ে অন্যের পথপানে চেয়ে থাকি, তবে পদে পদে হোচট খাব। এরা চিরাচরিত অভ্যাস, অন্যের দোষ ধরা ছেড়ে যখন নিজের কথা প্রচার করতে শুরু করল, বিরোধী দলের উচিৎ হবে এদেরকে সমর্থন করা। এবং লড়াই সমানে সমান করা। পরচর্চা কখনও ভালো কিছু তো আনে না। অন্যকে খারাপ প্রমান করলে এটাতো প্রমান হয়না যে আমি ভালো। তাই আমি মনে করি বিরোধীদলেরও উচিত সমালোচনা ছাড়া বিলবোর্ডের মাধ্যমেই এর জবাব দেয়া।
বইটি পড়ার ব্যপারে আগ্রহীরা নিচের লিঙ্কটিতে বইটির পিডিএফ কপি পাবেন।
Click This Link