somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাওয়ার আনন্দ আমার খুজে ফিরার সুখটা মাটি করে দিল...

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক অনেক দিন ব্লগে কোন কিছু লিখিনা। আজকের দিনটাতে না লিখলে হয়ত অন্যায় হবে। ১৩ বছর ধরে খুজে খুজে আমি পরিসংখ্যানের সেই মামুন স্যারের খোজ ঠিক বের করেছি। স্যার আগের মতই আছে। আমাকে ভালো শিক্ষক হওয়ার অনেক টিপস দিয়েছে। আমি যখন উনাকে খোজ করা শুরু করেছি, একজন লিখেছিলেন তিনি হয়ত এখন বিয়ে করে সুখে আছেন, এতদিন পর আমি খোজ করলে সংসারে অশান্তি হবে। কালকে কোন এক কাকতালিয় ভাবে গুগলে উনার নম্বর পেয়েছি। আমি উনার চেহারা চিনিনি। তবু মনে হয়েছে এটাই উনি। রাতে ১০টায় ফোন করেছি, কেউ ফোন ধরেনি। সকাল ১০টায় ফোন করলাম, প্রথমে কেউ ধরেনি। আমি তো জীবনভর নাকি নাছোর বান্দা। আবার ফোন করলাম।
তিনি ধরলেন। জিজ্ঞেস করলাম আপনি মামুন স্যার? বললেন, হ্যা। পরিসংখ্যান পড়ান? তিনি বললেন হ্যা। জিজ্ঞেস করলাম কিছু মনে না করলে, আপনার বাড়ি কি হবিগঞ্জ? বললেন, না, আমার বাড়ি নওগা। বললাম, কবে থেকে? যাইহোক, আপনার কি একটা ছাত্রী ছিল --- নামে? বললেন, হ্যা হ্যা, ছিল। কেন? জিজ্ঞেস করলাম, কবে ছিল? বলল, ২০০০ সালে, কেন? আমি বললাম, ২০০০ সালে ছাত্রী ছিল সেটা মনে আছে, আর ছাত্রী ১৪ বছর পর ফোন করল, তার কন্ঠ মনে নেই? আমি আপনার সেই ছাত্রী, আপনার মনে আছে? কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলেন, তুমি? কেমন আছ? বললাম, এমনভাবে জিজ্ঞেস করছেন, মনে হচ্ছে পরশুই কথা হয়েছে। আমি সবসময়ের মত ভালোই আছি, বেচে আছি, আপনি কেমন আছেন? বললেন, আমি ভালো আছি। এরপর আমার যত কথা, যত অভিযোগ্… বললাম, আমি কালকে ফোন করলাম, আপনি ধরেননি কেন? তিনি সেটার আবার জবাবদিহি করলেন। সারাদিনে ৩ ঘন্টা কথা বললেন। বললেন, আমার এমন কোন ছাত্র-ছাত্রী নেই, যে তোমার কথা জানেনা। তুমি কত ভালো ছিলে, তুমি জানোনা। এখনও কি মানুষের জন্যই নিজের জীবন নষ্ট করছ? নাকি বড় হয়েছ?
বললাম, আপনার ভালো ছাত্রী এখন ২ এর নামতাও বলতে পারবে না। ওর মেধা বলে আর কিছু নেই। আমাকে কত কিছু বোঝালেন। উনার কাছে পড়ার জন্য ৩ মাস আগে বুকিং দিয়ে রাখে ক্যাডেট এর ছাত্ররা। আমি বললাম, আমাকে পড়াতে হবে। উনি হাসে। আমি বললাম, আমি বুকিং দিতে পারব না। আপনি কবে ঢাকা আসবেন, আমাকে পড়াতে? বলেন, পড়ানোর কথা জানিনা। আমার ইচ্ছা করছে আমি কালকেই ঢাকা আসি। আমি তোমাকে দেখে যাই। তোমার ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন পুরণ হয়েছে। এখন পরিসংখ্যান দিয়ে কি হবে? আমি বললাম, আমাকে কথা দিয়ে এখন আর বুঝানো যায় না, আপনি পড়াবেন কিনা বলেন। তিনি বলেন, তোমার দাবী সবার উপরে। পড়াব। আমি যদি কোনদিন ঢাকা আসি, নিশ্চয়ই পড়াব। তারপর আবার যখন বললাম, আমি গাধা হয়ে গেছি। শব্দের মার-প্যাচে আমার মাথায় এখন আর কিছুই ঢুকে না, আমাকে কত সুন্দর করে বুঝালেন, আমার মেধা কি সেটা নাকি আমি নিজেই জানিনা। আমি নাকি স্বর্ণের মত, এখন শুধু অযত্ন অবহেলায় ময়লা হয়ে গেছি, গুন কমেনি। এসব শুনে মনে হল আমি বুঝি আবার আগের মত তার লক্ষী ছাত্রী হতে পারব, আমি পারব পিএইচডি এর একটা প্রপোজাল লিখতে, তারপর পিএইচডি করতে। এরাই শিক্ষক, আমাকে যারা এত বড় করেছেন। সন্ধ্যায় যখন কথা হল, বলছেন, সারাদিন থেকে ভাবছি, তুমি সত্যিই আমাকে মনে রেখেছ? আমি বললাম, শুধু তাই না, আমি খুজেও বের করেছি। বলেন, হ্যা, তা করেছ। আমিও যখনই ঢাকা যাই, তোমার বাসার সামনে যাই, ফ্লাট নম্বর আমার মনে নেই, তাই ভেতরে যাইনা। বললাম সেই বাসা ছেড়েছি আমরা কত আগে। মাঝে আমি ৪ বছর লন্ডনে ঘুরে এসেছি। এরপর দুইজনের কত কথা।

আমি তাকে খুজছিলাম ক্ষমা চাওয়ার জন্য, অথচ, ক্ষমা চাওয়ার ভাষাটা আমার জানা ছিল না। তিনি অভিযোগ করে গেলেন, আমি নিজেকে রক্ষা করার ভাষা জানা ছিল না। আবার বললেন, তুমি কি আগের মতই রাগী আছো? এখনও কি মানুষ মনের কথাটা তোমাকে বলতে ভয় পায়? আমি হেসে বললাম, এখন আমি আরও রাগী, আমার ছাত্র-ছাত্রীরা আমাকে জমের মত ভয় পায়। বললেন, তুমি কি জানো আজকে আমার জন্মদিন। আমি বললাম জানতাম না। বললেন, তার এই জীবনে এত বড় উপহার তিনি পাননি কোন দিন।
আমি এতদিন হন্যে হয়ে খুজেছি তাকে, এখন পাওয়ার পর অনেক আনন্দ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কেমন যেন একটা বিরাগ আমার মনকে গ্রাস করছে। খোজার আনন্দটা শেষ হয়ে যাওয়াতে এখন কেমন অন্য রকম একটা অভাব বোধ তৈরি হচ্ছে। তবু ভালো, পাওয়া গেছে, না হলে আমি হয়ত খুজেই মরতাম। আমি তো তার নাম, দেশের বাড়ি, সবই ভুল জানতাম। এক স্বপ্নের ঘোরে পেয়ে গেছি তাকে।
১১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×