somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হল জীবনের সাতকাহন.....

০৬ ই জুন, ২০১১ রাত ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের একেবারে প্রথম দিকের ঘটনা। সদ্য হলে উঠেছি। রাজনীতির প‌্যাঁচাল না বুঝলেও এতটুকু বুঝে ফেলেছি বড় ভাইদের দেখলেই সালাম ঠুকতে হবে। ভাই ভাই করতে হবে। মুখে ফেনা তুলে ফেলতে হবে ভাইয়ের নামে শ্লোগান দিয়ে। প্রতি বৃহষ্পতিবার রাতে যখন নগরবাসী ঘুমের আয়োজন করতো আমরা তখন গগনবিদারী আওয়াজ তুলতাম । সব আওয়াজের উদ্দ্যেশ্য ছিল একটাই। হলে থাকার আশ্রয়টুকু যেন না হারাই। হারালে আর যাই হোক কোটি মানুষের এই শহরে ঘুমেবার জায়গাটা পাবোনা। মাঝরাতের সে মিছিল শেষে চলতো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের 'মেধাবী' ছাত্রনেতাদের ঘন্টার পর ঘন্টা লেকচার পর্ব। হলের বারান্দায় বা গেটে দাঁড়িয়ে সে 'উলম্ব' ধ্বনি মাথা বা কান কোনটাতেই যেত না। তবে মনে রাখতে হতো যদি এখন ফাঁকি দিয়ে পালাই তবে শেষ রাতে কোন এক রুমে নিয়ে যাওয়া হবে। লোহার রডের আদর পড়বে পিঠে বা শরীরের যেকোন অংশে।কোনদিন কাউকে বললে তার পরিণাম হবে আরো ভয়াবহ। মার চোখের তাকিয়ে মিথ্যে বলতে পারবোনা মনে করে চোখের জল আগেই শুকিয়ে যাবে। এখন সময় পাল্টেছে। শুধু 'মেধাবীদের' কোন পরিবর্তন হয়নি। আগের শব্দগুলোর পরিবর্তে যোগ হয়েছে নতুন নাম। 'জ' এ কোন পরিবর্তন হয়নি। শুধু হয়েছে 'আকার' বা 'উ' নিয়ে। মেধাবীদের কারণে হলের ক্যান্টিন বন্ধ থাকে মাসের পর মাস। তাই ঢাবি'র মেধাবী শুনলে আজো বুকের ভেতর দুরু কেঁপে ওঠে। হাত পা কেমন যেন অবশ হয়ে যায়।

হলে ওঠার পর দ্বিতীয় বিকেল। তখনও টিউশন নামক পেশার সাথে যুক্ত হওয়া হয়নি। দেখলাম সিনিয়র রুমমেট তানিম ভাই অনেক যত্নে শার্ট প‌্যান্ট গুঁজে ধুলো পড়া শু পরে বের হচ্ছেন। হঠাত দেখলেন জুতাটা অনেকদিন কালি করা হয়নি। তারপর অসাধারণ এক কান্ড করে বসলেন। আমাকে পানির বোতল দিয়ে বললেন বাথরুম থেকে একটু পানি নিয়ে আসতে। কোন কথা না বলে আদেশ পালন করলাম। উনি পুরনো একটা টি শার্ট বের করে তা ভিজিয়ে নিলেন। এবার অনেকক্ষন ধরেই জুতাটা মুছলেন। ধুলোপড়া জায়গাটা খানিকটা উজ্জ্বল হলো। এবার ফুলবাবুর মত বের হবেন। আমি বললাম 'ভাই কোথায় যাচ্ছেন'।
আমার গলার আওয়াজ শুনে বুঝলেন আমি অনেক ভয়ে তাকে প্রশ্নটা করেছি। একটা হেবি রকমের ভাব নিলেন। তারপর আবার সেই জুতোমোছা শুকনো হাসি।উত্তর " ইট ভাংতে'।
কথাটার মানে বুঝিনি। তবে এতই বোকা ছিলাম যে তার কথা সত্যি ভেবে নিলাম। আরেক সিনিয়র রুমমেটকে জিজ্ঞেস করলাম। বললেন 'উনি টিউশনিতে যাচ্ছেন। হলে সবাই টিউশনি কে ইট ভাঙার কাম বলে'।
ওনার উত্তর শুনে গলাটা কাঠ হয়ে গেল। জীবনের না মেটা শখ আর কাঠকয়লার সাথে আমার পরিচয় অনেক আগে থেকে। কিন্তু তার রুপ এখানে এমন শৈল্পিক কঠোর আর নির্মম তা জানতে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। পড়াতে গেলে যেতে হবে স্মার্ট হয়ে আর মাস শেষে শুনতে হবে "আপনি তো অনেক কম সময় দেন"।
মেধাবীদের এই জীবন যেন পোকামাকড়ের ঘরবসতির জ্যোতিচিহ্ন। এখনও তানিম ভাইয়ের কথা মনে উঠলে মনে পড়ে অসম্ভব মেধাবী সে মানুষটার পর্বতে ওঠার স্বপ্নের কথা। বলতেন ' দেখো আবদুর রহিম। একদিন এভারেস্টের চুড়োয় উঠে যাবো।' সেই স্বপ্নটা আজো কেমন ফিকে হয়ে ভাসে। তানিম ভাই এখন ন'টা পাঁচটার জীবনে অভ্যস্ত নাগরিক।

হলে যারা উঠেছে তাদের আরাধ্য থাকে কবে বেডে উঠতে পারবে। ফ্লোর বা বা বেড সর্বত্রই ছারপোকার রাজত্ব। সেই রাজত্বের দখল লড়াইয়ে আরেক নাম ছিল 'বেড' দখল। মানে সাড়ে ছয় ফিট বাই আড়াই ফিট/ হতে পারে তিন ফিটও - সেখানে জায়গা করে নেয়া। নি:সন্দেহে সিনিয়রদের সাথে জুনিয়র' রা আজন্ম লড়াই করেও সেই এভারেস্টের 'সুখ বিছানায়' উঠতে পারবে না। অবশ্য যদি পলিটিক্যাল হয় সে কথা সব সময়ই আলাদা। ঐ মেধাবীদের জন্য সব সময় ছিল ' চাহিবা মাত্র উহার আদেশকারককে হল প্রশাসন সযতনে পৌঁছাইয়া দিতে বাধ্য থাকিবে'।

এমন যেখানে জীবন যুদ্ধ সেখানকার এক বড় ভাই ভাগ্য ক্রমে এই নগরীর এক বাড়িওয়ালার কণ্যার প্রেমে পড়লেন । প্রমান হইল -জগতে আজো ভালোবাসা বাঁচিয়া রহিয়াছে। নয়তো জগত সংসার এতো সুখের হবে কেন।? ব্যস । সনাই বাঁজিল। তাহারা সুখের সংসার পাতিলেন।শশুরকুলের সবাই বেজায় খুশি। এ কেমনতরে ছেলে বাবা। শশুর বাড়ী থেকে একটা উপহারও নেবে না। হাজার হোক জামাইবাবা কে তো কিছু একটা নিতে হবে। শেষমেষ সবার অনুরোধে তিনি একটি বস্তু গ্রহন করিতে রাজি হইলেন। বললেন' একটি খাট-ই আমার জন্য যথেষ্ট। শশুর মশায় খুশি। অবশেষে ছেলেটা কিছু একটা নিতে রাজি হয়েছে। এই বা কম কিসে। কিন্তু কৌতুহলভরে জিজ্ঞেস করলেন 'বাবা আমার এত কিছু থাকতে তুমি একটা খাট চাইলে কেন?

সোজা উত্তর ' আব্বা দীর্ঘদিন হলের খাটে ডাবলিং করতে করতে আর ভালো লাগেনা । এখন বিয়ের পর যদি অন্তত একটা সিঙ্গেল খাটে ঘুমাইতে পারি"।

শশুর লা জওয়াব।

এমন মেধাবী জীবনের সাতকাহনে আরো যোগ হয় আবু বকরের নাম। শাহবাগে বাসের নিচে চাপা পড়ে 'মেধাবী' ছাত্রী শিল্পী নিরব নিথর পড়ে থাকে।

তারপর যখন কেউ মেধাবী বলে তখন মনে পড়ে -ছারপোকা, নির্ঘুম রাত , পুলিশের তল্লাশি, ক্যাম্পাসের রোদে পোড়া সকালে কোন এক বালিকার দিকে ভুল করে তাকিয়ে না তাকানোর ভান করা, ক্যান্টিনে ডালের মধ্যে তেলাপোকা, ভাই সালামালিকমু সালামালিকমু, মাসের শেষে টিউশনির কচকচে ক'টা টাকা, সামনে পড়ে থাকা মাস, এলিফ্যান্ট রোডে ক্যাটস আইয়ের দোকানের দিকে তাকিয়ে চোখ লুকানো, ক্লাসের শেষ বেঞ্চ.....ভাঙাচোরা জীবনের ছিন্নপত্র।

























৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×