somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি থাপ্পর দিতে পারবেন। কিন্তু থাপ্পরের জোরে কি করতে পারবেন?

০৭ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একবার একটা গল্প শুনেছিলাম ঘোড়ার খুর নিয়ে। বিষয়টা এরকম যে ঘোড়ার খুরে একটা লোহার পাত থাকে। এই পাতটা নাকি অনেক মূল্যবান। কেন এর এত দাম ? চাষিভাই গেলেন জ্ঞানী মানুষের সন্ধানে। তাকে কে যেন বলে গেছে তার ঘোড়ার খুরের দাম অনেক। কত দাম তা এখন তার জানা চাই। জানলে আর চাষি থাকবেন না। ঘোড়ার খুরের ব্যবসা করবেন কিনা তা অবশ্য বলেন নি। কিন্তু দাম নিয়ে তার অনেক কৌতূহল। কে জানে একসাথে রাজার সোনার হাসের মত অনেক সোনার ডিম পাওয়া যায় কিনা। চাষি পথ চলেন। দিনের পর দিন যায়। চাষি চলেন দুরের পথ মাড়িয়ে। কিন্তু জ্ঞানী মানুষের সন্ধান সে কি আর এত সহজ? অবশেষে একদিন পেলেন একজন বৃদ্ধকে। মুখে পাকা দাঁড়ি। দেখেই মনে হল ইনি হবেন সেই মানুষ যিনি পারবেন তার জিজ্ঞাসার জবাব দিতে।

'চাচা আমি অনেক দূর থেকে এসেছি একটা প্রশ্ন নিয়ে। যদি আপনার সময় হয় তবে আমি কি আপনার কাছ থেকে একটু সময় পেতে পারি।"
' কি বাবা? কিন্তু আমি কি আর তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো? আমি বাবা বুড়ো মানুষ। দুনিয়ার পথঘাট কোন মতে চিনি। জীবনটা প্রায় কাটিয়ে ফেললাম। এবার শেষ দিন গুলোর পালা। আমার যাবার বেলা যদি তোমার কোন কাজে লাগি সে আমার বড় আনন্দ। "

চাষি এবার খানিকটা সাহস পেল। বলল- ' আমি একদিন মাঠে কাজ করছিলাম। রাস্তার পাশে বাধা ছিল আমার ঘোড়াটা। এটাই আমার চলার বাহন আর সবচে বড় কথা এটা আমার ফসল কেনা বেচা করতে যাবার এক মাত্র উপায়। কিন্তু আমি বুঝলাম না আমাকে এক পথিক বলল আমার ঘোড়ার খুরের দাম নাকি অনেক বেশি। আমি আসলেই বুঝতে পারছিনা আমার ঘোড়ার খুরের দাম কত। আর আমি এই দাম কেন পাই না।"

জ্ঞানী ব্যক্তি এই প্রশ্ন শুনে কোন কথা বললেন না। অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন- "বেশ! তোমার ঘোড়ার খুর গুলো একদিন খুলে রাখ। তারপর বের কর আসলে ও গুলোর কোন মূল্য আছে কিনা?"

চাষি ফিরে এল। তারপর মাঠে যাবার আগে খুলে ফেলল ঘোড়ার খুর। কিন্তু ঘোড়া আর আগের মত দ্রুত পথ চলে না। কিছুদূর চলার পর ঘটল আসল ঘটনা। ঘোড়ার পায়ের ভিতরে ঢুকল শামুক। ব্যস। যা হবার তাই হল। ঘোড়া অসুস্থ হল। চিকিৎসা চলে। কিন্তু ঘোড়া আর সুস্থ হয় না।
ক'দিন পর ঘোড়াটা মারা গেল। চাষির মনে অনেক দুঃখ। চাষি আর আগের মত কাজে আনন্দ পায় না। ফসল না হয় হল কিন্তু বেছতে নিয়ে যাবে কিভাবে?

ক'দিন বাদে চাষির ছেলের অসুখ হল। রাত অনেক। চাষি দেখে তার ঘোড়া নেই। এই রাতে সে কিভাবে ছেলেকে নিয়ে বৈদ্য বাড়ি যাবে? সেই রাতে চিকিৎসা না হওয়ায় চাষির ছেলে গেল মরে।

এবার চাষির হুঁশ হল। আজ যদি ঘোড়াটা থাকতো তবে কি এরকম অবস্থা হত? তার পর মনে হল আহারে যদি ঐ বেতার কথা না শুনে খুর না খুলতাম তবে আজ ঘোড়াটা থাকত। আর ছেলেকেও নিয়ে জেতে পারতাম বৈদ্য বাড়ি।

আহারে খুর। আহারে ছেলে!! আফসোস!
সামান্য লোহা পড়ে থাকলে সমস্যা ছিল না। কিন্ত ওটা যে খুর ছিল।

বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট ভক্ত। একদিন দেশ জুড়ে অবরোধ ছিল। সেদিন রাস্তায় পুলিশ মানুষকে বেরুতে দেয়নি। কিন্তু হাওয়া ভবনে একজন ক্রিকেট খেলছিলেন। সে ছবি কাগজে এসেছিল। সেই ক্রিকেট উৎসবের ফল কি হয়েছিল কারো কি মনে আছে? ক্রিকেট কিন্তু আনন্দের খেলা। বল কোথায় পড়ে ছিল তা ভুলে গেলে কিন্তু সাধু সাবধান!

কোন বাড়াবাড়ি ভালো ফল বয়ে আনেনা। একদিন রাস্তায় সাপের মত পিটিয়ে মানুষ মারা হয়েছে । ক্ষমতা তো চিরদিন থাকেনা। ঐ পাপের কোন ফল কিন্তু আদতে চোখের সামনে দেখা যায় নি। যে মায়ের ছেলে মরেছে তার চোখের পানি কিন্তু আজ মুছে যায় নি। যাবেনা।

একদিন এক যুবরাজের বন্ধুরা মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলে সাত জন ছাত্রের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে ছিল। অপরাধীদের কোন কিছু হয় নি যুবরাজের ক্ষমতার জোরে। সে নিজে কেমন ছিল তাতো বলতে পারবোনা। কিন্তু আবার তোরা মানুষ হ এরকম চলচিত্রের মধ্যে যা দেখা যায় তাতে আর যাই হোক ক্ষমতার পালাবদল যে হয় তা কিন্তু নিশ্চিত বোঝা যায়।

মানুষ কখন এরকম বেপরয়া আচরণ করে জানেন? যখন তার পিছনে আর যাবার জায়গা থাকেনা অথবা চরম অহংকারী হয়ে উঠে।

একজন পুলিশ কর্মচারী কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তার ক্ষমতা কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে তিনি যা দেখালেন ক্ষমতার খুঁটির জোরে তা কিন্তু চিরকাল ব্যপিয়া রহিবে না। ক্রিকেট খেলোয়াড়ের ছিলনা আর থাপ্পর দেয়ার পর যিনি হাসপাতালে ভর্তির
নাটক করেছেন আবার দেখতে যাবার নাটকও করলেন তারও থাকবেনা।

জ্ঞানীর কাছে না গেলেও ঘোড়ার খুরের মূল্য বোঝা যায় আর সময় দেখে থাপ্পড় এর কদর আর ফলও বোঝা যায়।







সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১২:২৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×