somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিশির হাতে একটা গোলাপ ছিল...

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এমাসের এক তারিখেই এই এলাকায় এসেছি। আগে সেনপাড়ার ওদিকে থাকলেও অফিসটা বেশ দূরে হয়ে যেত। আসতে যেতেই এক-দেড় ঘন্টা লাগতো আর সাথে যদি জ্যাম থাকে তবে তো সোনায় সোহাগা। কম ভাড়ায় এই বাসা পেয়ে যাওয়ায় বেশ সুবিধাই হল।
আমি একা মানুষ। গ্রাজুয়েশন এর পর সরকারী চাকরির চেষ্টা করলেও কোন লাভ হয়নি। আমিও সরকারী চাকরির পিছনে তেমন ছুটিও নি। এখন এক বেসরকারী ফার্মে আছি, স্যালারী যা পাচ্ছি তাতে দিব্যি চলে যায়। এ বাসায় তিনতলার উত্তরের ফ্লাটে থাকি। ফ্লাট বলতে ছোট্ট দুইটা রুম, সাথে বাথরুম, কিচেন আর বারান্দা। বারান্দায় আমি ছোটখাট বাগান করার চেষ্টা করছি। দিন-কাল বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছে।
তবে ছোট্ট একটা সমস্যা হচ্ছে গত চার-পাচদিন ধরে। সমস্যা না বলে অস্বস্তি বললে ভালো হয়।প্রতিদিন রাত আড়াইটার দিকে একটা মিহি মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছি। গত দুদিন ধরে গন্ধের সাথে খুট খাট আওয়াজও পাচ্ছি।
আমি গাও-গেরামের মানুষ বলেই হয়ত ভয় পেয়ে যাই। উঠে যে উকি দিয়ে ব্যাপারটা দেখবো, সেই সাহসটা হয়ে উঠে না।অথচ শুয়ে ঘুমাতেও পারি না। আশ্চর্য অস্বস্তিতে কাটে সারাটা রাত।
প্রথম দিকে চুপ করে থাকলেও আর বেশিদিন সহ্য হচ্ছিল না। কেয়ারটেকার চাচাকে ধরলাম একদিন। একটু চাপাচাপি করতেই চাচায় মুখ খুললেন। আমি যেই ফ্লাটে থাকি, তার বারান্দার সামনা সামনি পাশের বিল্ডিং এর আরেকটা ফ্লাটের বারান্দা। এটা ঢাকা শহর, প্রতি ইঞ্চি জায়গাই সোনার মত দামি বলে বাড়ি করার সময় কেউ এক ইঞ্চিও ছাড় দেয় না, তাই আমার ফ্লাটের বারান্দা আর সামনের বিল্ডিংয়ের আরেকটি ফ্লাটের বারান্দার মাঝে মাত্র এক হাত দূরত্ব। চাচার কাছ থেকে জানলাম ঐ ফ্লাটে একটা কমবয়েসী মেয়ে থাকে, মেয়ের সাথে নাকি “কিছু একটা” আছে।গাও গেরামে আমরা এটাকে কালীতে ধরা বলি সাধারনত। চাচার কাছ থেকে আরও জানতে পারলাম মাঝে মাঝেই রাতের বেলা ঐ মেয়েটা বারান্দার হাটাচলা করে, একা একাই কথা বলে, হাস, গান গায়। এজন্যই আমার এই ফ্লাটে কোন ভাড়াটিয়া বেশিদিন টিকে না।
অন্যদের কথা কি বলবো? কাহিনী শুনে আমার নিজেরই জান বের হবার দশা!মাসের এখনও অর্ধেক বাকি, এখন বাসা ছাড়লেও হুট করে আরেকটা বাসা পাওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে।

রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি, একা ব্যাচেলর মানুষ, এরকম বাসা এই ভাড়ায় ২য়টা পাওয়া সম্ভব না, আমার অফিসও এখান থেকে কাছে আছে। এত সুবিধা আমি আর কোথাও পাবো না। এমন সময় আবার সেই মিহি মিষ্টি গন্ধ নাকে ভেসে এল। সারা গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। একটু পর সেই পায়চারির আওয়াজ। আজ যেন মেয়েটা গুন গুন করে গানও গাচ্ছে। প্রচন্ড ভয় পেলেও সাথে সাথে কৌতুহলও হচ্ছে। অবশেষে আমার কৌতুহলের কাছে ভয় হার মানলো।

ভয়ে ভয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম। বারান্দায় টবে আমার লাগানো গোলাপ গাছে কলি এসেছে। মনটা ভালো হয়ে গেল। আস্তে আস্তে ভুতের ভয়টাও কেটে গেল। সামনের ফ্লাটের মেয়েটা বারান্দায় পায়চারি করছে। মিষ্টি গন্ধটা কোন পারফিউমের হবে হয়তবা। মেয়েটা গুনগুন করে গান গাচ্ছে, গানের কথাগুলো ঠিক বুঝতে পারছি না, তবে সুরটা অসাধারন।

আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, “হাই!”
মেয়েটা চমকে উঠে ভেতরে চলে গেল। আমি আরো কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলাম, যাক বাবা ভুতটুত কিছু না।

আজ তিনদিন ধরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে, মেয়েটা বারান্দায় হাটাহাটি করে আমি বারান্দায় যাই, হাই/হ্যালো বলি। আর মেয়েটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ভেতরে চলে যায়।সে আমার সাথে কোন কথা বলে না, তবে তার সেই মিষ্টি হাসিটা অনেক কিছু বলে যায়। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, ওর ইনসমনিয়া আছে।

আমার গাছের গোলাপটা ফুটেছে।গোলাপের সাথে সাথে মনে একটু সাহসও বেড়েছে। আজ রাতেও মেয়েটা যথারীতি বারান্দায় হাটছে। আমি আজ কোন কথা না বলে শুধু গোলাপটা ছিড়ে ওকে দিলাম। এবং কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ও প্রথমবার কথা বলল।

◘ ফুলটা ছিড়লেন কেন? গোলাপ গাছেই সুন্দর
◘ তোমার হাতেও গোলাপটা সুন্দর লাগছে
◘ (মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে)তাই বুঝি?
◘ হ্যা! তোমার কন্ঠটা খুব মিষ্টি। গান শিখো নাকি?
◘ আররেহ নাহ!ছোটবেলায় একটু শিখতাম আরকি।
◘ আমার নাম শুভ্র। তোমার?
◘ আমি নিশি (আবারও মিষ্টি হাসি)
…………………………………………………….

সেদিন পূর্ণিমা ছিল, নিশির হাতে একটা গোলাপ ছিল, মুখে মায়াবী একটা হাসি ছিল। সময় কিভাবে কেটে গেল, বুঝতে পারি নি।



© রাবণ

(এটা আমার প্রথম পোষ্ট। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, প্লিজ!)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:২০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×