পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতা ও মানবতার জন্য হুমকি।
----------------------------------------------------------
হিরোশিমা, নাগাসাকি, চেরনোবিল বা ভোপালের কথা উঠলেই বিশ্ববাসীর মনে কাঁপুনি ধরে। এই নামগুলো শুধু শহরের নাম নয় মানবজাতির ইতিহাসে চরম দুর্ভাগ্য, নির্মমতা ও প্রযুক্তির ভয়াবহ প্রয়োগের প্রতীক। আজো হিরোশিমা-নাগাসাকির মানুষ দুঃসহ স্মৃতি ও প্রজন্মগত স্বাস্থ্যঝুঁকি বহন করছে। অথচ এসব দেখেও পৃথিবীর কিছু রাষ্ট্র নিজেদের পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত করে তুলেছে। এই অস্ত্রধারণের প্রতিযোগিতা মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে, যদি একবার এর ব্যবহার শুরু হয়।
পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রসমূহ
বর্তমানে বিশ্বে ৯টি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী বলে স্বীকৃত। এরা হলো:
১. যুক্তরাষ্ট্র
২. রাশিয়া
৩. চীন
৪. যুক্তরাজ্য
৫. ফ্রান্স
৬. ভারত
৭. পাকিস্তান
৮. ইসরায়েল (সরকারিভাবে স্বীকার না করলেও আন্তর্জাতিকভাবে অনুমানযোগ্য)
৯. উত্তর কোরিয়া
পারমাণবিক অস্ত্রের নির্মমতা
পারমাণবিক বোমা তাৎক্ষণিকভাবে লক্ষ লক্ষ প্রাণ কেড়ে নিতে সক্ষম। যেমন হিরোশিমায় ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট ‘লিটল বয়’ নামের বোমাটি প্রায় ৭০,০০০ মানুষকে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করে। পরবর্তী কয়েক মাসে মৃত্যু সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। নাগাসাকিতে একইভাবে ‘ফ্যাট ম্যান’ বোমায় ৪০,০০০-এর বেশি মানুষ মারা যায়।
প্রভাবসমূহ:
তাৎক্ষণিক মৃত্যু: উচ্চতাপ, বিস্ফোরণ এবং বিকিরণে মুহূর্তেই প্রাণহানি।
দীর্ঘমেয়াদী ক্যানসার, পঙ্গুত্ব ও জন্মগত ত্রুটি।
বিভিন্ন প্রজন্মে জিনগত পরিবর্তন ও মানসিক সমস্যা ,আবহাওয়ায় পরিবর্তন ও "পারমাণবিক শীত": বহু বোমার বিস্ফোরণে সূর্যের আলো অবরুদ্ধ হয়ে পৃথিবীতে খাদ্য সংকট হতে পারে।
পারমাণবিক দূর্ঘটনা: চেরনোবিল ও ফুকুশিমা
চেরনোবিল (১৯৮৬, ইউক্রেন) ও ফুকুশিমা (২০১১, জাপান) ছিল মূলত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্ঘটনা, কিন্তু এগুলোর প্রভাবও ভয়ানক ছিল। চেরনোবিল দূর্ঘটনায় লাখ লাখ মানুষ তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হয় এবং আশেপাশের অঞ্চলে শতাব্দীর জন্য জনবসতি নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
পরমাণু অস্ত্র প্রতিরোধ ও শান্তির বার্তা
বর্তমান বিশ্বে যখন যুদ্ধের ভয়াল ছায়া বারবার ঘনিয়ে আসে, তখন পরমাণু অস্ত্রের অস্তিত্ব একেকটি টাইম বোমার মতো। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংগঠন সাম্প্রতি এসব অস্ত্র নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানালেও পরাশক্তিগুলো এখনো নিজেদের মজুদ বৃদ্ধি করে চলেছে।
একটি পারমাণবিক যুদ্ধ মানব সভ্যতার শেষ অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে। যে জাতিগুলো ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ, তারা ভবিষ্যতের বিপর্যয়ের দায় এড়াতে পারবে না। তাই, পারমাণবিক অস্ত্রের বিপক্ষে প্রতিটি সচেতন রাষ্ট্র, সংগঠন এবং নাগরিকের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। শান্তির পক্ষে, অস্ত্রের বিরুদ্ধে, এটাই হওয়া উচিত সভ্য মানবজাতির শপথ।
সালাউদ্দিন রাব্বী
সামাজিক ও মানবাধিকার কর্মী
মুন্সীগঞ্জ, বাংলাদেশ
Email: [email protected]

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ৯:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



