ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-শিবিরের দখল: জাতীয় রাজনীতির অশনি সংকেত।
------------------------------------------------------------------------------------
বাংলাদেশের রাজনীতির আয়না হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনেই ডাকসু ছিল কেন্দ্রীয় শক্তি। সেই ডাকসু আজ উগ্র ধর্মজীবি জামায়াত ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের হাতে নতুন করে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে।
সাম্প্রতিক ডাকসু নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার আগেই শিবির বিজয় মিছিল করেছে। অথচ কয়েক হাজার ভোট গণনা করতে সারারাত লেগে গেল। এনসিপি ও এবি পার্টির মতো নতুন মুখোশধারী শক্তিগুলো আসলে জামায়াতের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম, যারা নির্বাচনের নামে শিবিরকেই সহযোগিতা করেছে।
ডাকসুর ভিপি জিএস: স্বাধীনতার পর থেকে
ডাকসুর ইতিহাস সবসময় জাতীয় রাজনীতির প্রতিচ্ছবি। স্বাধীনতার পর থেকে এর নেতৃত্ব যেসব হাতে গেছে, তা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিক নির্দেশ করেছে।
সাল ভিপি জিএস মন্তব্য/প্যানেল
১৯৭২ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (ছাত্র ইউনিয়ন) মাহবুবুর জামান স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচন
১৯৭৩ নির্বাচন হয়েছিল, তবে ফলাফল স্থগিত কর্তৃপক্ষ ফল প্রকাশ করেনি
১৯৭৯ মাহমুদুর রহমান মান্না আখতারুজ্জামান জাসদ–ছাত্রলীগ প্যানেল
১৯৮০ মাহমুদুর রহমান মান্না আখতারুজ্জামান বাসদ–ছাত্রলীগ প্যানেল
১৯৮২ আখতারুজ্জামান জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বাসদ–ছাত্রলীগ প্যানেল
১৯৮৯ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ (ছাত্রলীগ) মুশতাক আহমেদ (জাসদ ছাত্রলীগ) যৌথ প্যানেল (ছাত্রলীগ + বাম সংগঠন)
১৯৯০ আমানউল্লাহ আমান (ছাত্রদল) খায়রুল কবির খোকন (ছাত্রদল) ছাত্রদল প্যানেল জয়ী
২০১৯ নুরুল হক নুর (স্বতন্ত্র/গণফোরাম ঘরানা) গোলাম রাব্বানী (ছাত্রলীগ) বিতর্কিত নির্বাচন, দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত
এই ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে যে সময়ে যে শক্তি জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিল, সেই শক্তিই ডাকসুতে আধিপত্য বিস্তার করেছে।
ছাত্রদলের সরে যাওয়া ও শিবিরের উত্থান
একসময় বিএনপি ঘরানার ছাত্রদল ঢাবির রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু তারা ধীরে ধীরে ক্যাম্পাস রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার পরিবর্তে টেম্পুস্ট্যান্ড, বাসস্টেশন ও খেয়াঘাট দখলে মনোযোগ দেয়। ফলে ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় তারা ক্যাম্পাসে প্রভাব হারায়।
অপরদিকে জামাত ও তাদের সহযোগী শক্তি যেমন এনসিপি সচিবালয়ে পুলিশ নিয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতার নেটওয়ার্ক তৈরি করছে, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গাতেও তারা লোক ঢুকিয়ে দখল কায়েম করছে। বিএনপি জানে না বা চোখ ফিরিয়ে রেখেছে। এদিকে বিএনপি ও তাদের ছাত্রদল শুধু চাঁদাবাজী নিয়ে ব্যস্ত—ফলে প্রকৃত রাজনৈতিক প্রভাব ও কৌশলগত দখল শিবিরের হাতে চলে গেছে।
আজ ছাত্রদল ক্যাম্পাসে প্রায় অদৃশ্য। স্বাধীনতা-বিরোধী ছাত্রশিবির সেই শূন্যস্থান পূরণ করে নিয়েছে।
বিএনপি ও বামদের দুর্বলতা
ঢাবির সাম্প্রতিক ডাকসু নির্বাচন প্রমাণ করেছে বিএনপি ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো শিবিরের কাছে পরাজিত। জাতীয় রাজনীতিতেও তারা প্রান্তিক অবস্থায় চলে যাচ্ছে। যদি এখনই তারা ঐক্যবদ্ধ রাজপথের আন্দোলনে নামতে না পারে, তবে শিবির ও তাদের সহযোগী শক্তিগুলো জাতীয় নির্বাচনের ময়দান দখল করে নেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ যে পরিস্থিতিতে পড়েছে, তা গোটা বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেত। প্রগতিশীল শক্তি বিভক্ত থাকলে জামায়াত-শিবির পুনরায় মাথা তুলবে। ইতিহাস বলছে যে শক্তি ডাকসু দখল করে, তারাই ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে। তাই বিএনপি ও বামদের এখনই বুঝতে হবে তাদের একমাত্র বিকল্প হলো ঐক্যবদ্ধ রাজপথের সংগ্রাম।



অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



