somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামাতের ফাঁদে বিএনপি : এক অনিবার্য পরিণতির নসিয়ত।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জামাতের ফাঁদে বিএনপি : এক অনিবার্য পরিণতির নসিয়ত।
------------------------------------------------------------
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে সাম্প্রতিক ফলাফলে বিএনপি শিবিরে হাহাকার শুরু হয়েছে। নির্বাচনে জামাতপন্থী ছাত্ররা কিছু আসন জিততেই বিএনপি নেতারা অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রলীগ নাকি ভোটে জামাতকে সমর্থন দিয়েছে। এ অভিযোগ যেমন ভ্রান্ত, তেমনি রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার বহিঃপ্রকাশ।
প্রথমেই পরিষ্কার হওয়া দরকার আওয়ামী লীগ কখনো জামাতকে সমর্থন করেনি, করবেও না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং স্বাধীনতার বিরোধীদের মধ্যে বিভাজনটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনিবার্য বাস্তবতা। আসমান-জমিন এক হলেও আওয়ামী লীগ জামাতকে রাজনৈতিকভাবে প্রশ্রয় দেবে এমনটা কোনোদিন ঘটেনি, ঘটার সম্ভাবনাও নেই।
অন্যদিকে, বিএনপি বারবার জামাতের ফাঁদে পা দিয়েছে। কিছু ঐতিহাসিক উদাহরণ—
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচন: বিএনপি সরকার গঠন করে জামাতকে শরিক হিসেবে গুরুত্ব দেয়। সংসদে জামাতের ১৮ আসন বিএনপিকে সহায়তা করেছিল।
২০০১ সালের নির্বাচন: বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এসে ২০ দলীয় জোট গঠন করে। এর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন ঘটে এবং প্রশাসনে তাদের প্রভাব বাড়ে।
২০০৯-২০১৩ সাল: যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় বিএনপি প্রকাশ্যে জামাতের পাশে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে তারা ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ আখ্যা দেয়।
২০১৩ সালের সহিংসতা: শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে জামাত-শিবির যখন দেশজুড়ে সন্ত্রাস চালায়, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে শত শত মানুষকে হত্যা করে, তখন বিএনপি কার্যত তাদের নৈতিক সমর্থন দিয়েছিল।
২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন: বিএনপি জামাতকে সাথে নিয়েই নির্বাচন বর্জন করেছিল, যার ফলে তারা রাজনৈতিক মাঠে একেবারে প্রান্তিক হয়ে পড়ে।
এই ধারাবাহিকতায় স্পষ্ট জামাতের সাথে আঁতাত করে বিএনপি কখনো দীর্ঘমেয়াদি লাভ পায়নি। বরং প্রতিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ভাবমূর্তি ও জনগণের আস্থা।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও জামাতকে আঁকড়ে ধরা বিএনপির জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের সাথে একাত্মতা দেখানোর কারণে বিদেশি কূটনীতিকরা বিএনপিকে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে আর দেখেননি।
আজ বিএনপি যদি মনে করে, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ জামাতকে সমর্থন দিয়েছে তবে সেটা নিছক ভ্রান্ত ধারণা। প্রকৃত সত্য হলো, ছাত্রলীগের জনপ্রিয়তা যেমন ছাত্ররাজনীতিতে অপরিবর্তিত, তেমনি জামাত-শিবিরের প্রতি ঘৃণাও একই রকম শক্ত অবস্থানে আছে। কিন্তু বিএনপি তার পরাজয়কে ঢাকতে গিয়ে আবারও একই পুরনো কৌশল অবলম্বন করছে “অন্যকে দোষ দাও, নিজেকে নির্দোষ দেখাও।”
আসলে বিএনপির ওভার কনফিডেন্সই তাদের রাজনীতির সবচেয়ে বড় শত্রু। নিজেদের ভুল না মেনে, প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করে এবং জামাতের হাত ধরে ক্ষমতায় ফেরার যে কৌশল তারা নিয়েছে, তা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় জনগণ জামাত-বান্ধব কোনো জোটকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখেনি।
নসিয়ত হচ্ছে এই যে:
১.জামাতকে রাজনৈতিক সঙ্গী বানানো মানে আত্মঘাতী পথ বেছে নেওয়া।
২. মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সাথে আঁতাত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
৩. বিএনপি যদি সত্যিই জনগণের আস্থা পেতে চায়, তবে প্রথম শর্ত হলো জামাত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়া।
৪.আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করে কিংবা কাল্পনিক অভিযোগ তুলে কোনো লাভ নেই, সময়ই সঠিক জবাব দেবে।
ইতিহাস ভুলে গেলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়। বিএনপি যদি আবারও জামাতের ফাঁদে পড়ে, তবে তাদের পরিণতিও আগের মতোই হবে ব্যর্থতা, জনসমর্থনহীনতা, এবং রাজনীতিতে ক্রমশ প্রান্তিক হয়ে পড়া। আর এ ব্যর্থতার দায় জনগণ নয়, বিএনপিকেই বহন করতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২৮
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×