somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চুতমারানি প্রসঙ্গে একটি অচুদুরবুদুরমূলক বক্তব্য

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি হেলাল হাফিজ মূলত প্রেমের কবি।

স্কুল লাইফে আমরা যখন প্রেম করতাম, তখন হেলাল হাফিজের কবিতা ছাড়া -মেয়ে পটানোর মতো অন্য কোনো মারণাস্ত্র আমাদের হাতে ছিল না।

কত দুর্দান্ত প্রেমের কবিতা তিনি লিখেছেন :

:: স্যাম্পল নং ১ ::

এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো৷
এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তাল পাখাটা
খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো৷
ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত
ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো৷
কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে
কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে
পত্র দিয়ো, পত্র দিয়ো৷

:: স্যাম্পল নং ২ ::

তুমি কি জুলেখা, শিরী, সাবিত্রী, নাকি রজকিনী?
চিনি, খুব জানি
তুমি যার তার, যে কেউ তোমার,
তোমাকে দিলাম না - ভালোবাসার অপূর্ব অধিকার।

:: স্যাম্পল নং ৩ ::

আমাকে উস্টা মেরে দিব্যি যাচ্ছো চলে,
দেখি দেখি
বাঁ পায়ের চারু নখে চোট লাগেনি তো;
ইস্‌! করছো কি? বসো না লক্ষ্মীটি,
ক্ষমার রুমালে মুছে সজীব ক্ষতেই
এন্টিসেপটিক দুটো চুমু দিয়ে দেই।

তবে হেলাল ভাইয়ের সবচেয়ে দুধর্ষ প্রেমের কবিতার নাম ছিল : 'ভূমিহীন কৃষকের গান'।
তার প্রথম দুই চরণ এই রকম :

'' দুই ইঞ্চি জায়গা হবে?
বহুদিন চাষাবাদ করিনা সুখের।''

তবে কীভাবে কীভাবে যেন হেলাল ভাইয়ের একটি রাজনৈতিক কবিতা দারুন জনপ্রিয়তা পায়। বলা যায়, কবিতাখানি স্লোগানে পরিণত হয়ে গেছে। কবিতার শিরোনাম : নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়

'' এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়''

তবে হেলাল হাফিজের এই রাজনৈতিক কবিতার চেয়ে আমার ভালো তার অন্য একটি রাজনৈতিক কবিতা। যে কবিতা চিরকালীন, বিশ্বজনীন এবং সব প্রেক্ষাপটেই সত্য। কবিতাটিখানি পুরোপুরি তুলে ধরছি :

'' ভোলায়া ভালায়া আর কথা দিয়া কতোদিন ঠাগাইবেন মানুষ
ভাবছেন অহনো তাদের অয় নাই হুঁশ।
গোছায়া গাছায়া লন বেশি দিন পাইবেন না সময়
আলামত দেখতাছি মানুষের অইবোই জয়।

কলিমুদ্দিনের পোলা চিডি দিয়া জানাইছে,–’ভাই
আইতাছি টাউন দেখতে একসাথে আমরা সবাই,
নগরের ধাপ্‌পাবাজ মানুষেরে কইও রেডি অইতে
বেদম মাইরের মুখে কতোক্ষণ পারবো দাঁড়াইতে।’

টিকেট ঘরের ছাদে বিকালে দাঁড়ায়ে যখন যা খুশি যারা কন
কোনো দিন খোঁজ লইছেন গ্রামের লোকের সোজা মন
কী কী চায়, কতোখানি চায়
কয়দিন খায় আর কয়বেলা না খায়া কাটায়।

রাইত অইলে অমুক ভবনে বেশ আনাগোনা, খুব কানাকানি,
আমিও গ্রামের পোলা চুত্‌মারানি গাইল দিতে জানি।''

আমি কবিতা তেমন বুঝি না, রাজনীতি তো একদমই বুঝি না।
কিন্তু আমার বিচারে বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক কবিতা এটি।

ক্ষমতায় থাকে মাত্র ১% মানুষ, বাকি ৯৯% মানুষ শোষিত, নির্যাতিত এবং নিপীড়িত। এই ৯৯% মানুষের কন্ঠে এতো সোচ্চার করে, এতোগুলো সত্য কথা এর আগে কোন কবি বলতে পেরেছেন কিনা জানি না।

আমি অবাক হয়ে যাই যখন দেখি খোদ পশ্চিমা দেশেও '' উই আর নাইন্টি নাইন পার্সেন্ট '' স্লোগানে অকুপাই আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে।

তখন আমার কানে কেবলই এই কবিতার কথাই ভাসে। ডান নয়, বাম নয়, কোনো রেডবুক কিংবা ইয়োলো পেইজ নয়, এই কবিতাই ফিরে ফিরে আসে :

'' ভোলায়া ভালায়া আর কথা দিয়া কতোদিন ঠাগাইবেন মানুষ
ভাবছেন অহনো তাদের অয় নাই হুঁশ।
গোছায়া গাছায়া লন বেশি দিন পাইবেন না সময়
আলামত দেখতাছি মানুষের অইবোই জয়।'''

বিএনপি'র এক নারী সাংসদ এই কবিতা সংসদে পাঠ করেছেন। সারাদেশে নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রতিটি মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে। তাদের কানে বাজছে ''চুতমারানি' শব্দটি। কবিতার অন্য লাইনগুলো, যেগুলো ধ্রুবতারার মতো সত্য, সেই শব্দগুলো জাতির মধ্যে কোনোই আলোড়ন ফেললো না।

আমি বিএনপিকে পছন্দ করি না।
তবু আমি মহান সংসদে বিএনপি'র একজন নেত্রী , এতো পবিত্র এবং ভয়ংকর সত্যভাষণমূলক একটি কবিতা আবৃত্তি করেছেন বলে, তাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

আমাদের সংসদে বোধহয় সাধারণ মানুষের কথা এইভাবে উঠে আসার সময় এসেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:০৪
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×