অনেকদিন পর ব্লগে লিখছি; আগের মত আসাও হয়ে ওঠেনা। ব্লগের আকর্ষণ কমে যাচ্ছে নাকি আমার ব্যস্ততা বেড়েছে বুঝতে পারছিনা। প্রিয় এই প্লাটফর্মটা থেকে হারিয়ে যেতে চাই না; তাই একটু ঢু মারলাম !!
জানি দেশের মানুষ খুব একটা ভাল নেই; তাই কেমন আছেন সবাই??? এই ধরনের বিব্রতকর প্রশ্ন না করি; বরং সবার জন্য শুভ কামণা! আশাকরি আমাদের দেশের দুঃসময় দ্রুত কেটে যাবে, সুস্থ সুন্দর সময় অচিরেই আসবে।
প্রায় ৫ বছর পরে দেশে গিয়েছিলাম, গ্রাম আর ঢাকা শহর মিলিয়ে দু’ই মাস মত ছিলাম। এই ৫ বছরে অনেকগুলো পরিবর্তন চোখে পড়ল, সেটা শেয়ার করব; কিন্তু গুছিয়ে লিখতে ইচ্ছে করছে না, একটু ছেড়া ছেড়া ভাবে বলি ... ... ...
গ্রামগুলোর অনেক উন্নতি হয়েছে; না খেয়ে দিনপাত করা লোক এখন আর নেই বললেই চলে, এমন কোন পাড়া নেই যেখানে ২/৪ জন লোক বিদেশে থাকে না। যাতায়াত ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে, আগে যেমন ঘরে ঘরে সাইকেল দেখা যেত এখন দেখা যায় মোটরসাইকেল। বিশ্বের অনেক আধুনিক সুবিধায় এখন হাতের নাগালে। দেশের রাজনৈতিক নিয়ে মাতামাতি আরো বেড়েছে, এখন আর কোন কিছুই রাজনীতির বাইরে নেই; কারো গরু অন্যের ক্ষেতের ফসল খেলে সেটাও আম্লিগ-বিএম্পি তে গিয়ে শেষ হয়।
হাইওয়ে গুলোর অবস্থা আগের চেয়ে অনেক খারাপ হয়েছে; অনেক অনেক দামী গাড়ী রাস্তায় আছে কিন্তু রাস্তা ঘাটের অবস্থা খুবই বিপদজনক। ঢাকা থেকে বাসে করে আমাদের বাড়ী পৌঁছানোর আগেই মালয়েশিয়া থেকে পৌছানো সম্ভব।
ঢাকা শহর আগের চাইতে বসবাসের অনুপোযুক্ত হয়েছে। আমার মতে ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা “অতিরিক্ত মানুষ”; এক সাথে এত মানুষের আনাগোনা বিশ্বে আর কোথাও নেই। ঢাকা শহরকে ডি-সেন্ট্রালাইজ না করলে আলাউদ্দিনের দৈত্য এসেও ঢাকা শহরকে বসবাসের যোগ্য করতে পারবে না। আমার ছেলের সবচেয়ে বেশী অপছন্দ হয়েছে গাড়ীর হর্ন। নোংরা ধুলা-ময়লার কথা বলে আর কি হবে, নোংরা দেখে সবাই নাক সিটকায় আর ঘৃণা প্রকাশ করতে এক দলা থুথু রাস্তার উপর ফেলে ।
সবাই অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে ইচ্ছে মত নিজের চারপাশ নোংরা করে, নিজে থেকে কেও উদ্যোগ নেই না পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার।
হরতালের কারনে রাস্তা ফাকা থাকায় ঢাকা শহরে যানজটে পড়তে হয়নি; ছোট ভায়ের বাইকের পিছনে চড়ে সারা ঢাকা শহর ঘুরেছি আরামে। ঢাকা শহরেও বাইকের সংখ্যা প্রচুর বেড়েছে; অবশ্য বাইক চালকরা মনেই করে না ট্র্যাফিক আইন গুলো তাদের জন্যও প্রযোজ্য। ঢাকা শহরের সবচেয়ে কাজের জিনিষ যেটা দেখতে পেলাম সেটা হচ্ছে কিছু ফ্লাইওভার; আরো বেশ কিছু হওয়া দরকার।
কুইক রেন্টাল হোক আর যা-ই হোক বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
ছিনতাই বেড়েছে।
মানুষের ধর্য্য কমেছে; অধিকংশ মানুষের চেহারায় কেমন যেন বিরক্তি ভাব।
খুব ইচ্ছা ছিল মা-বাবা, ভাই-বোন আর তাদের বাচ্চা-কাচ্চা গুলোকে নিয়ে দুরে কোথাও ঘুরতে যাব; দুইবার প্লান করেও দুই নেত্রীর কামড়াকামড়ির কারনে তা বাতিল করতে হলো! শেষে ঢাকার বাইরে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে “নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল” সুত্রের এপ্লায় করে ফ্যান্টাসি কিংডমে চরম ধরা খেয়েছি; ওটাকে এখন যাদুঘরে রাখার সময় হয়ে গেছে!
একটা ব্যাপার না উল্লেখ করলে অপূর্ণতা থেকে যাবে; জানা’পার আন্তরিক নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে সামু’র অফিসে গিয়েছিলাম। জানা’পা সহ সহকর্মীদের ঘরোয়া ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। শুধু আমি নই, আমার সহধর্মিণী, যার কাছে ব্লগিং একটা ফালতু কাজ বলে এতদিন বিবেচিত ছিল সেও আমাকে কয়েকবার অনুরোধ করেছে সামুতে একটা একাউন্ট খুলে দিতে। বাচ্চাদের নিয়ে তার কাজ কর্ম নিয়ে ব্লগে লিখবে! আমি বলেছি, ও অনেক ঝামেলার, তুমি পারবে না!! ... ... বহুত জালাইছে আমারে ব্লগিং করা নিয়ে! কয়েকদিন একটু ঘুরিয়ে নিই!!
দেশ নিয়ে আর দশজন প্রবাসীর মত আমারও দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছু করার দেখি না। জাপানে পি এইচ ডি শেষ করে দেশে সেটেল হব কি হব না এই নিয়ে দোটানায় ছিলাম; সামু’তে এই বিষয়ে আলোচনাও করেছিলাম। একটা আশ্চর্য বিষয় কি জানেন??? একমাত্র আমার মা-বাবা ছাড়া আর কেও চায়না আমি দেশে থাকি! সবাই খালি দেশ থেকে পালাতে বলে! মালেশিয়ার একটা ইউনিভার্সিটিতে জব পেলাম, চলে এলাম; তবে দেশে ফেরার ইচ্ছা এখনো ছাড়িনি... ... ... দেখা যাক!
আমাদের প্লেনটা যখন আকাশে উড়ল; আস্তে আস্তে ঢাকা শহরটা দুরে সরে যাচ্ছে ... এক সময় দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেল। নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছিল। মনে হলো কোন এক যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে সুযোগ পেয়ে আমি বউ বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি... ... আর যুদ্ধ ক্ষেত্রের বিভিষিকাময় অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে ফেলে রেখে যাচ্ছি মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ... অসংখ্য আপনজনদের!