গত সপ্তাহে আমার পোলা’র ছোট ভাই পৃথিবীতে এল (চাঞ্চে খবরটা দিয়ে দিলাম; মিষ্টি খাওয়াতে পারবনা কইলাম )।
তো, তাকে রিসিভ করার জন্য আমরা হস্পিটালে এগিয়ে গেলাম। পোলার মা, আগে থেকেই ডাক্তারকে রাজি করিয়ে রেখেছে, নো-পেইন ডেলিভারির ব্যাপারে। তাই তাকে কয়েকদিন আগেই হসপিটালে ভর্তি করা হল; অপরাশেন এর জন্য ডেটও পড়ল। কিন্তু পোলা আর বেশিক্ষণ বদ্ধ ঘরে থাকতে চাইলেন না; উনি অতি শিঘ্র-ই বের হবেন বলে জানান দিলেন। পেইন উঠাতে পোলার মা ভয়ে অস্থির; ডাক্তাররা একটু সময় নিচ্ছিলেন নরমাল হয় কি না। কিন্তু অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হওয়ায়, বিশেষ করে আমাদের প্রবল ঈচ্ছার কারণে এমারজেন্সী অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল, এমারজেন্সী অপারেসন থিয়েটারের সিডিউল পাওয়া নিয়ে। একটা পর একটা জীবন-মরন কেইস আসছে, ডাক্তাররা সেগুলোকে আগে সামাল দিচ্ছেন। এভাবে কেটে গেল ২০ ঘন্টা; বিদেশের হস্পিটাল বাইরের কাওকে থাকতে দেই না; আমি-ই একা অধিকংশ সময় আমার স্ত্রীর হাত ধরে বসে থাকলাম। এই প্রথম খুব কাছ থেকে আমার লেবার পেইন দেখা; প্রথমটা ছিল নো-পেইন ডেলিভারি। ২/৩ মিনিট পরপর ব্যাথাটা আসছিল ... ... কেমন ব্যাথা সেটা এখানে আমার বর্ণনা করাটা শোভন হবে না; শুধু এটুকু বলব... সেই ২০ ঘন্টায় আমার একটি উপলব্ধি হয়েছে, “সংসারে মেয়েদের হাজারটা যন্ত্রনা সয্য করা যায় শুধু মাত্র এই একটি কারণে যে তাদের লেবার পেইন সয্য করতে হয়”।
যাই হোক, এবার শিরোনামে আসি; নাতি হওয়া উপলক্ষে তার দাদা-দাদি দেশ থেকে বেড়াতে এসেছেন। একদিন হস্পিটাল থেকে মা আর আমি ফিরছি; হঠাত কি মনে করে মা’কে জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা আমি কি নরমাল হয়েছিলাম নাকি সিজারিয়ান? শুনেছিলাম মনে হয়, ছোট বেলায়... ভুলে গেছি। মা বললেন, তখন কি আর এত সিজার ছিল! উনার লেবার পেইন ছিল ৩ দিন; উনি বাড়িতেই ছিলেন; গ্রামের প্রশিক্ষিত (?) দাই নানা ভাবে চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু বাচ্চার পজিশন ছিল উল্টা; আমার নানা হুজুর-কবিরাজের কাছে দৌড়াচ্ছিলেন পানিপড়া আনার জন্য। মা’র কিশোরী শরীর আর পেরে দিচ্ছিল না; আমাকে দুনিয়ায় আনতে গিয়ে নিজেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার অবস্থা। এই সময়, আমার এক খালা (ঐ সময় ভার্সিটিতে পড়তেন) একপ্রকার জোর করে মুরব্বীদের সাথে বেয়াদবী (!) করে মা’কে রিকশায় করে ৩ কিমি দুরের হসপিটালে নিয়ে গেলেন। সেখানে ডাক্তারদের চেষ্টায় আমি দুনিয়াতে আসলাম; ডাক্তার নাকি বলেছিল, আর ঘন্টা খানিক দেরী হলেই আমাদের দুজনের কারোর-ই দুনিয়ার আলো দেখা লাগত না।
এত দিন পরে মার মুখে ঘটনা টা শুনে খুব লজ্জা লাগছিল! নিজেকে মা-ভক্ত ছেলে হিসাবে জাহির করি, তাদের খুশি রাখার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টাও করি; অথচ এই ভাইটাল কথাটা জানতে আমার এত দিন লেগে গেল !!!
আপনি কি কখনো আপনার মায়ের কাছে তার লেবার পেইন এর কষ্টটার কথা শুনেছেন?? না শুনলে শীঘ্রই একদিন কথা প্রসঙ্গে জেনে নিবেন; নইলে আপনাকেও আমার মত লজ্জায় পড়তে হবে।
পৃথিবীর সকল মা’কে কৃতজ্ঞতা!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪১