somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ নিয়োগ দুর্নিতীর সাক্ষর রাখা খাদ্য মন্ত্রনালয় ।

২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেধাবীদের জীবন থেকে ৪ টি বছর কেড়ে নিয়ে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রকৃয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। বার বার জাতীয় দৈনিক গুলোতে লেখা স্বত্বে ও সরকারের কোন পর্যায়ের কর্তাগন এটিকে প্রাধান্য দেন নি। সরকার ছিলেন নিশ্চুপ। বয়স উত্তির্ন সর্বচ্চ নাম্বার প্রাপ্তগন ও মেধা ক্রমে চাকরি পান নি শুধু মাত্র দুর্নিতীর জন্য। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই সাথে মেধা ক্রমে নিয়োগের ব্যবস্থা চাই । খাদ্য মন্ত্রনালয় কিভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্ন করেছেন তার কিছু উদাহরন সবার জানার জন্য দেয়া হোল :

১) খাদ্যে লোক নিয়োগ
ঘুষ দিলেই চাকরি!
অরুণ কর্মকার | আপডেট: ১২:০৪, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৩ | প্রিন্ট সংস্করণ

খাদ্য অধিদপ্তরে ১০টি শ্রেণীর (ক্যাটাগরি) এক হাজার ৫৫৩টি পদে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখন মৌখিক পরীক্ষা চলছে। এতে চাকরি নিশ্চিত করার মতো নম্বর পাওয়ার প্রধান যোগ্যতা নির্ধারিত হয়েছে নির্দিষ্ট অঙ্কের ঘুষ।
খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সূত্রগুলো জানায়, যাঁরা ঘুষ দিয়েছেন বা দেবেন, তাঁদের চাকরি নিশ্চিত। খাদ্য পরিদর্শক পদে ঘুষের পরিমাণ ১০ লাখ টাকা। মুক্তিযোদ্ধা কোটাভুক্ত হলে আট লাখ।
৩২৮টি পরিদর্শক পদে প্রায় আড়াই হাজার প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। যাঁরা নির্দিষ্ট অঙ্কের ঘুষ দিয়েছেন, প্রতিদিন সকালে পরীক্ষা শুরুর আগে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের নামের তালিকা পৌঁছে গেছে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে।
মহাপরিচালক সেই তালিকা পাঠিয়েছেন মৌখিক পরীক্ষার জন্য গঠিত পাঁচটি বোর্ডের পাঁচ প্রধানের কাছে। নির্দেশনা হচ্ছে, তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁদের প্রত্যেককে ৩০-এর মধ্যে কমপক্ষে ২৫ নম্বর দিতে হবে। আর যাঁরা তালিকাভুক্ত নন, তাঁদের প্রত্যেকে পাবেন সর্বোচ্চ ১০।
এই নিয়োগের জন্য মৌখিক পরীক্ষার পূর্ণমান ছিল ২০ নম্বর। কিন্তু ২০ নম্বর বণ্টনের মাধ্যমে কারসাজি করে ঘুষ দেওয়া প্রার্থীদের জন্য চাকরি নিশ্চিত করতে সমস্যা হতে পারে বিবেচনা করে খাদ্য মন্ত্রণালয় তা ৩০ করার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেয়। এখন ৩০ নম্বরের মধ্যে পরীক্ষা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত রোববার থেকে শুরু হয়েছে উপখাদ্য পরিদর্শকের ১৭৫টি পদের জন্য মৌখিক পরীক্ষা। এই পদে ঘুষের অঙ্ক নির্ধারণ করা হয়েছে আট লাখ। মুক্তিযোদ্ধা কোটাভুক্ত হলে ছয় লাখ। এই পদের ক্ষেত্রেও পরীক্ষা শুরুর আগে মন্ত্রণালয় থেকে ডিজির কাছে তালিকা এসেছে। তিনি তা আগের মতোই পাঁচ বোর্ডের প্রধানদের কাছে পাঠাচ্ছেন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের নম্বর দেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গত সোমবার সচিবালয়ে তাঁর অফিস কক্ষে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তালিকা নয়। তবে তদবির তো কিছু থাকতেই পারে। আবার সব তদবিরেই চাকরি হবে, এমনও না। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকার নেতা-কর্মীরা এসে কিছু দাবিদাওয়া বা তদবির করেন। সেগুলোর কিছু তো রাখতেই হয়।’
মন্ত্রী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনাদেরও (সাংবাদিকদের) তো তদবির আছে। সবারই কিছু তদবির থাকে।’
অবশ্য খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাঁরা তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাঁরা সরকারি দলের হিসেবে হননি। হয়েছেন ঘুষ দিয়ে। আর তালিকার মধ্যে যাঁদের সরকারি দলের পরিচয় আছে, তাঁদেরও প্রায় সবাইকে টাকা দিতে হয়েছে। আর কোনো কোনো সাংবাদিকের তদবিরে যাঁরা তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাঁদেরও টাকা দিতে হয়েছে।
জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান বলেন, অর্ধেক প্রার্থীর চাকরি তদবির ছাড়াই হবে। কারণ, কোনো কোনো জেলার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তদবির বেশি থাকলেও অনেক জেলার ক্ষেত্রে তদবির নেই। তা ছাড়া এতিম ও প্রতিবন্ধী কোটায় ১০ শতাংশের তো তদবির ছাড়াই চাকরি হবে।
মন্ত্রণালয় থেকে আসা তালিকার ওপর নিজ হাতে একেকটি বোর্ডের প্রধানের নাম লিখে তা পাঠানোর বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘এগুলো মনে থাকার জন্য। তদবির এল এবং যেগুলোর চাকরি নিশ্চিত করতে হবে, সেগুলো যাতে সংশ্লিষ্ট সবার মনে থাকে, সে জন্য লিখে দেওয়া।’ কোনো কোনো সাংবাদিকের তদবিরের বিষয়টি তিনিও উল্লেখ করেন।
মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ২০ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে সোমবার পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায় যতজনের চাকরি হবে, প্রায় ততজনেরই নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে। যেমন গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিদর্শক পদে প্রায় আড়াই হাজার পরীক্ষা দিয়েছেন। চাকরি হবে ৩২৮ জনের। তালিকায় নাম আছে প্রায় ৩০০ জনের। অর্থাৎ যাঁরা তালিকাভুক্ত নন, তাঁদের চাকরির সম্ভাবনা কম।
মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডগুলোতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মকমিশনেরও (পিএসসি) প্রতিনিধি থাকেন। তাঁরা বিষয়টি কীভাবে নেন, জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রথমত শুরুতেই তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, এখন যে জেলার প্রার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হবে, সেই জেলার দুজন প্রার্থীর জন্য তদবির রাখতে হবে, তাঁদের তালিকা এই। হয়তো ওই জেলার ২০ জন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। বোর্ডের সদস্যরা ভাবেন, ২০ জনের মধ্যে দুজনের জন্য তো তদবির থাকতেই পারে। তাঁরা বিষয়টিকে সেভাবেই নেন। কিন্তু তাঁরা জানেন না যে, ওই জেলা থেকে চাকরিই পাবেন দুই বা তিনজন। দ্বিতীয়ত তাঁদেরও কিছু তদবির থাকে, যেগুলো মেনে নেওয়া হয়।
১০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে সহকারী উপপরিদর্শকের ৪০৫টি পদের জন্য মৌখিক পরীক্ষা। এই পদের জন্য ঘুষ নির্ধারিত হয়েছে ছয় লাখ টাকা। কোটাভুক্ত হলে দিতে হবে পাঁচ লাখ টাকা। ৩০ সেপ্টেম্বর মৌখিক পরীক্ষা শেষ হবে।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, চাকরি দেওয়া কিংবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তদবির, ঘুষ প্রভৃতি আগেও ছিল। মোট পদের সর্বোচ্চ ২০-২৫ শতাংশ এভাবে চাকরি পেত। কিন্তু বর্তমানে, বিশেষ করে খাদ্য অধিদপ্তরের এই নিয়োগের ক্ষেত্রে খুব কম পদেও ঘুষ ছাড়া চাকরি হবে। কাজেই এটা তদবির নয়। এটাকে দুর্নীতি ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।
চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে ১০টি শ্রেণীর পদে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে, তার মধ্যে উল্লিখিত তিনটি ছাড়াও তত্ত্বাবধায়ক পদে ১৩ জন; হিসাবরক্ষক ১৫ জন; ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পাঁচজন; উচ্চমান সহকারী ৫১ জন; নিম্নমান সহকারী ৫০৩ জন; নিরীক্ষক ১৬ জন ও সহকারী অপারেটর পদে ৪১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
গত কয়েক দিনে খাদ্য অধিদপ্তরে মৌখিক পরীক্ষা দিতে আসা ২২ জন প্রার্থীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের মধ্যে রংপুরের একজন, বরিশালের একজন ও ময়মনসিংহের দুজন পাওয়া গেছে, যাঁরা ঘুষ দিয়েছেন। পরে তালিকা সংগ্রহ করে দেখা গেছে, তাঁদের নাম তালিকায় আছে।
অন্য প্রার্থীদের কয়েকজন বলেছেন, তাঁরাও ঘুষ দিতে রাজি। কিন্তু কোথায় কীভাবে কাকে দিলে কাজ হবে, তা তাঁরা জানেন না। কয়েকজন বলেছেন, তাঁরা লিখিত পরীক্ষা খুবই ভালো দিয়েছেন। আশা করছেন, মেধার জোরেই তাঁরা চাকরি পাবেন। ঘুষ দিয়ে কিছু লোক সব সময়ই চাকরি পান। কিন্তু কিছু লোক মেধার জোরেও পান। তাঁরা সেই আশায়ই আছেন।
মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডগুলোর কয়েকজন সদস্য বলেন, অনেক মেধাবী ও চৌকস প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের বিপরীতে তালিকাভুক্ত প্রার্থী আছেন। তাই মেধাবীর চাকরি কীভাবে হবে!
খাদ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেণীর এই পদগুলোতে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। সর্বশেষ দুটি পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২৫ মে। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল অল্প দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত করা হলেও মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা এত দিন ঝুলিয়ে রাখা হয়। একবার নিয়োগ-প্রক্রিয়া বাতিলেরও পথ খোঁজা হয়েছিল।
কিন্তু বাতিল করার দায়িত্ব নিতে কেউ রাজি না হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষা ‘বিকেন্দ্রীকরণ করার’ কৌশল নেওয়া হয়। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, বিভাগীয় কমিশনারদের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু কমিশনাররা তাতে রাজি হননি। কারণ, সরকারি চাকরির নিয়োগবিধিতে এমন বিধান নেই। নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় এমন পদক্ষেপ নেওয়ার নজিরও বিরল।

২) প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়াতেই খাদ্যে নিয়োগ শুরু
অরুণ কর্মকার | আপডেট: ২১:৩৯, এপ্রিল ২৩, ২০১৪

প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কারণে ১০টি ক্যাটাগরির সহস্রাধিক পদে নিয়োগের যে প্রক্রিয়ার বৈধতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে, সেই প্রক্রিয়াতেই নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। গত শনিবার গভীর রাতে নিয়োগের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। পরদিন আটটি ক্যাটাগরির প্রার্থীদের কাছে নিয়োগপত্র পাঠানো হয়।

জানতে চাইলে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ও খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ইলাহী দাদ খান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ করে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের কাছে নিয়োগপত্র পাঠানো হয়েছে।

অন্য দুটি ক্যাটাগরির পদ তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করায় ওই পদভুক্ত প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কারণ দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে নিয়োগের ক্ষমতা অধিদপ্তরের নেই। এই ক্ষমতা সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি)।

তবে ওই দুটি পদেও যাতে প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়ায়ই নিয়োগ প্রদান সম্পন্ন করা যায়, সেজন্য ওই পদ দুটিকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করে জারি করা সরকারি আদেশের কার্যকারিতা অন্তত এই নিয়োগের ক্ষেত্রে রহিত করার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখা হয়েছে।

অবশ্য সরকারি ওই আদেশ ইতিমধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশিত হওয়ায় তা রহিত হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্রগুলো জানায়।

যে আটটি ক্যাটাগরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে—উপ খাদ্য পরিদর্শক, সহকারী খাদ্য পরিদর্শক, হিসাবরক্ষক, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, উচ্চমান সহকারী, নিম্নমান সহকারী, নিরীক্ষক ও সহকারী অপারেটর। আর যে দুটি পদ দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে তা হলো খাদ্য পরিদর্শক ও সাইলো তত্ত্বাবধায়ক।

ওই পদগুলোতে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। সর্বশেষ দুটি পদের লিখিত পরীক্ষা হয় ২০১২ সালের ২৫ মে। লিখিত পরীক্ষার ফল অল্পদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত করা হলেও মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়।

এরপর মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়ার জন্য নিয়োগপ্রক্রিয়ার একপর্যায়ে মৌখিক পরীক্ষার পূর্বনির্ধারিত নম্বর ২০ পরিবর্তন করে ৩০ করা হয় বলে অভিযোগ আছে। মৌখিক পরীক্ষা শুরু হলে প্রতিদিন মন্ত্রণালয় ঘুষ দেওয়া প্রার্থীদের তালিকা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষার পাঁচটি বোর্ডের প্রধানের কাছে পাঠাতে থাকে।

বোর্ডের প্রধানদের প্রতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল—মৌখিক পরীক্ষায় তাঁদের পাঠানো তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের কমপক্ষে ২৫ নম্বর দিতে হবে। আর যাঁরা তালিকাভুক্ত নন, তাঁদের দেওয়া যাবে সর্বোচ্চ ১৫ নম্বর। এইভাবে লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীদেরও ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা পাকা করা হয়।

এ বিষয়ে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিকার চেয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গত বছরের ৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্নার পক্ষে রিট আবেদন করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক।

গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া আদেশে খাদ্য পরিদর্শক, উপ পরিদর্শক ও সহকারী পরিদর্শক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা ও ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে আদেশ পাওয়ার এক মাসের মধ্যে নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

হাইকোর্টের ওই আদেশ বাস্তবায়নের জন্য অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চাইলে নতুন করে পরীক্ষা না নিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় যে প্রার্থীকে ৩০-এর মধ্যে ২৭ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে সমানুপাতিক হিসাবে ২০-এর মধ্যে ১৮ দেওয়া এবং অন্য প্রার্থীদেরও একইভাবে নম্বর বণ্টনের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। এতে কার্যত তাঁদেরই চাকরি পাওয়া নিশ্চিত হয়, যাদের ঘুষের বিনিময়ে বেশি নম্বর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

তবে এ ব্যাপারে জেড আই খান পান্নার পক্ষে আইনজীবী শাহদীন মালিক হাইকোর্টের পূর্বোক্ত বেঞ্চে একটি ‘রিভিউ পিটিশন’ দাখিল করেন। কিন্তু ইতিমধ্যে বেঞ্চটি পুনর্গঠিত হওয়ায় বিষয়টি প্রধান বিচারপতির দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে শাহদীন মালিক জানিয়েছেন।

ওই রিভিউ পিটিশনটির ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা আসার আগেই প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া শুরু করা হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে সংক্ষুব্ধ অনেকে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

৩) খাদ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ
ঘুষের জয়!
অরুণ কর্মকার | ০২ এপ্রিল, ২০১৪

খাদ্য অধিদপ্তরে লোক নিয়োগে মেধার পরিবর্তে ঘুষেরই জয় হতে যাচ্ছে। যাঁদের কাছে ঘুষ নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের চাকরি হবেই।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়ার জন্য নিয়োগ-প্রক্রিয়ার একপর্যায়ে মৌখিক পরীক্ষার পূর্বনির্ধারিত নম্বর ২০ পরিবর্তন করে ৩০ করা হয়। মৌখিক পরীক্ষা শুরু হলে প্রতিদিন খাদ্য মন্ত্রণালয় ঘুষ দেওয়া প্রার্থীদের তালিকা খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষার পাঁচটি বোর্ডের প্রধানের কাছে পাঠাতে থাকে।
বোর্ডের প্রধানদের প্রতি নির্দেশনা ছিল—মৌখিক পরীক্ষায় তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের কমপক্ষে ২৫ নম্বর দিতে হবে। আর যাঁরা তালিকাভুক্ত নন, তাঁদের দেওয়া যাবে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর। এভাবে লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীদেরও ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় তখন খাদ্য উপপরিদর্শক পদে মৌখিক পরীক্ষা চলছিল।
এর প্রতিকার চেয়ে বিচারপতি ফারাহ্ মাহবুব ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চে গত ৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্নার পক্ষে রিট আবেদন করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক।
এরপর গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া আদেশে বলা হয়, খাদ্য পরিদর্শক, উপপরিদর্শক ও সহকারী পরিদর্শক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা ও ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে এবং আদেশ পাওয়ার এক মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য এখন আর নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হবে না। মৌখিক পরীক্ষায় যে প্রার্থীকে ৩০-এর মধ্যে ২৭ দেওয়া হয়েছিল, এখন তাঁকে সমানুপাতিক হিসাব করে ২০-এর মধ্যে ১৮ দেওয়া হবে। একইভাবে যে প্রার্থীকে ৩০-এর মধ্যে ১২ দেওয়া হয়েছিল, এখন তাঁকে ২০-এর মধ্যে ৮ দেওয়া হবে।
এতে কার্যত তাঁরাই চাকরি পাবেন, যাঁদের ঘুষের বিনিময়ে বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। কারণ, ৩০-এর মধ্যে পরীক্ষায় যাঁকে যত নম্বর দেওয়া হয়েছিল, এখন সেই নম্বরই ২০-এর মধ্যে সমানুপাতিক হিসাব করে বণ্টন করা হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নিয়োগ কমিটির প্রধান, খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ইলাহী দাদ খান বলেন, হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য তাঁরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়েছিলেন। এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সমানুপাতিক হারে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বণ্টন করা হবে।
খাদ্য অধিদপ্তরের এই পদগুলোসহ ১০টি শ্রেণীর (ক্যাটাগরি) এক হাজার ৫৫৩টি পদে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। সর্বশেষ দুটি পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ২৫ মে। লিখিত পরীক্ষার ফল অল্পদিনের মধ্যে চূড়ান্ত করা হলেও মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এর মধ্যে খাদ্য পরিদর্শকের পদ ৩২৮টি। এই পদে চাকরির জন্য ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০ লাখ টাকা। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটাভুক্ত প্রার্থীর ক্ষেত্রে তা ছিল আট লাখ।
খাদ্য উপপরিদর্শকের পদ রয়েছে ১৭৫টি। এই পদে ঘুষের অঙ্ক নির্ধারণ করা হয় আট লাখ। মুক্তিযোদ্ধা কোটাভুক্ত হলে ছয় লাখ।
সহকারী উপপরিদর্শকের পদ ৪০৫টি। এই পদের জন্য ঘুষ নির্ধারিত হয়েছিল ছয় লাখ টাকা। মুক্তিযোদ্ধা কোটাভুক্ত হলে দিতে হয়েছে পাঁচ লাখ।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, চাকরি দেওয়া কিংবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তদবির, ঘুষ প্রভৃতি আগেও ছিল। মোট পদের সর্বোচ্চ ২০-২৫ শতাংশ এভাবে চাকরি পেত। কিন্তু বর্তমানে বিশেষ করে খাদ্য অধিদপ্তরের এই নিয়োগের ক্ষেত্রে খুব কম পদেই ঘুষ ছাড়া চাকরি হচ্ছে।
চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে ১০টি শ্রেণীর পদে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে তার মধ্যে উপরিউক্ত তিনটি ছাড়াও তত্ত্বাবধায়ক পদে ১৩ জন; হিসাবরক্ষক ১৫; ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পাঁচ; উচ্চমান সহকারী ৫১; নিম্নমান সহকারী ৫০৩; নিরীক্ষক ১৬ ও সহকারী অপারেটর পদে ৪১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

[সকল তথ্য দৈনিক প্রথম আলো থেকে সংগৃহিত]

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×