somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ কাঁচা মিঠে সংসার

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




খুট করে দরজা লাগানোর শব্দে সাবরিনের ঘুমের তন্দ্রাটা ছুটে গেল। ঘুম অনেক আগেই ভেঙেছে তবুও ও ঘুমের ভান করে এতক্ষন বিছানায় সুয়ে ছিল। ভিতরে ভিতরে ওর খুব রাগ হচ্ছে, রাগটা সাহেদের উপর না, নিজের উপর। সাহেদের উপর রাগ করে ও কিছুতেই থাকতে পারে না। কোন না কোন ভাবে সাহেদ ওর মন গলিয়ে ফেলে। আর সাহেদের উপর রাগ হবেই বা না কেন? প্রায় প্রতিদিনই ও এমন সব কাজ করে যা সাবরিনের মোটেই পছন্দ নয়। বার বার বলার পরেও সুধরাবার কোন নাম নেই। যেমন অফিস থেকে বাসায় ফিরে জুতো নিয়ে প্রায় ড্রয়িং রমের মাঝ পর্যন্ত হেটে এসে রুম নোংরা করে। অফেসে যাওয়ার সময় এবং অফিস থেকে ফিরে কাপড় চোপড় এখানে সেখানে ফেলে রাখে, মাঝে মাঝে রান্না ঘরে গিয়ে এমন সব অখাদ্য রান্না করে যে মুখে দেয়া যায় না। ওর রান্নার পর রান্না ঘরের যা অবস্থা হয় তা পরিষ্কার করতে সাবরিনের ৩ ঘন্টা লাগে কমছে কম। সবচেয়ে বাজে যে ব্যপারটা সেটা হচ্ছে সাহেদের বাসায় সিগারেট খাওয়া। সিগারেটের গন্ধে পুরো ঘর ভরে যায়। এয়ার ফ্রেশনারেও গন্ধ দূর হয় না। এত বলে যে বাসায় খাবা না, তার পরেও শোনে না। সাবরিন আড়ালে গেলেই হল। কতক্ষন আর বাসায় থাকে? ৪/৫ ঘন্টা। বাকি সময় তো ঘুম। এর মধ্যে না খেলে কি হয়? সাবরিনের এত বকা বকির পরও সাহেদ ওর কোন কথা গায়ে মাখায় না।

সাহেদের সাথে ওর সংসার এক বছরের। পারিবারিক ভাবেই ওদের বিয়ে হয়েছিল। সাবরিন ওর মতামত জানানোর জন্য একসপ্তাহ সময় পেয়েছিল। এই এক সপ্তাহে কথা বলে আর ৩ বারের দেখায় সাহেদ কে ওর ভালোই লাগে। তাই হ্যাঁ বলে দিয়েছিল। বাসর রাতে। সাহেদের সিরিয়াস মুড দেখে সাবরিন দুষ্টূমি শুরু করল। সাহেদ কিছু বলতে যায় আর সাবরিন বলে একটা ফুল ছিঁড়ি? সাহেদ আর কিছু বলতে পারে না। সাবরিন খাট সাজানো ফুলের মালা থেকে একটা একটা ফুল ছেঁড়ে। এর মধ্যেও সাহেদ সাবরিনের কাছ থেকে ২ টি ওয়াদা নিয়েছে। ১। জীবনে দুটি মানুষ একসাথে থাকলে মতের অমিল হবে, রাগ হবে ঝগড়া হবে, কিন্তু কখনো সাহেদের সাথে কথা না বলে থাকা যাবে না। মেজাজ খারাপ থাকলে ঝগড়া করবে, তবুও কথা বলবে। চুপ থাকা যাবে না। ২। সাহেদের সাথে ঝগড়া করে কখনো সাহেদকে ছেড়ে একা বাপের বাড়ি যাওয়া যাবে না। সাবরিন কথা দিয়েছিল। এখন বুঝতে পারছে কি মারাত্মক ভুল করেছিল।

সাবরিন বিছানায় উঠে বসল। হঠাত সামনে চোখ পরতেই দেখল দেয়ালে একটা ছোট স্টিকি লাগানো। বিছানা থেকে নেমে সাবরিন দেয়াল থেকে স্টিকিটা তুলে দেখল তাতে লেখা- টেবিলে নাস্তা রেডি, তারপর একটা স্মাইলি। নিচে লেখা ভালবাসি রাজকন্যা। মূহুর্তেই সাবরিনের মনটা ভাল হয়ে গেল। তারপর আবার নিজের উপর রাগটা ফিরে এল। প্রতিদিন ও সাহেদের জন্য সকালে রুটি বানিয়ে দেয়। আজ ইচ্ছে করেই ওঠে নি। সাহেদ একটু দেরি করেই ঘুম থেকে ওঠে। আজ উঠে ওর জন্য নাস্তাও বানিয়েছে। নিশ্চয়ই আজ অফিসে দেরি হবে, বসের বকা খাবে। কি হত ও যদি উঠে সাহেদের জন্য নাস্তাটা বানিয়ে দিত? সাবরিন বেডরুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখে টেবিলে ব্রেড টোষ্ট আর ডিম ভাজি। দেখে সাবরিনের ঠোটের কোনায় হাসি চলে এল। সাহেদ রুটি বানাতে পারে না। কয়েকবার চেষ্টা করেছে কিন্তু যাচ্ছে তাই অবস্থা। সাবরিনে বেড রুমে ফিরে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে সাহেদকে একটা মেসেজ লিখল- গুড মর্নিং মাই কিং।

সাহেদ চায় ও যতক্ষন বাসায় থাকবে সাবরিন সব সময় ওর চোখের সামনে থাকুক। সাবরিনের চোখ দুটি না দেখলে নাকি সাহেদের ভাল লাগে না। সাহেদের অনেক গুলি ছেলে মানুষির মধ্যে একটা হছে একটা। কিন্তু এটা কি সম্ভব? ওর কি কোন কাজ নেই বাসায়? এটা নিয়ে এক কথায় দু কথায় কাল রাতে সাহেদের সাথে ঝগড়া শুরু। ঝগড়া শুরু হলে সাহেদ অল্পতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলেও সাবরিনের রাগ সহজে পরে না। তখন সাহেদ সাবরিনের রাগ ভাঙানোর জন্য নানান কিছু করে। এগুলো সাবরিনের খুব ভালোই লাগে। তাই অনেক সময় রাগ পরে গেলেও সাবরিন রাগি রাগি ভাব নিয়ে বসে থাকে। যখন সাহেদ রাগ ভাঙানোর আর কোন উপায় না পায় তখন সাহেদ সাবরিনকে গভীর ভাবে বুকে জড়িয়ে ধরে। এর পর কপালে একটা চুমু খায়। সাবরিন আর রাগ ধরে রাখতে পারে না। সাহেদ ও ব্যাপার টা বুঝতে পারে। কালকেও যখন সাহেদ কোন ভাবেই সাবরিনের রাগ ভাঙাতে পারছিল না তখন সাবরিনকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে যেই কপালে চুমু খায় সাবরিন আর রাগ ধরে রাখতে পারে নি। সাবরিনও সাহেদের গালে টুপ করে একটা চুমু খায়। ব্যাস, হুট করেই পরিবেশ বদলে যায়। যে সাহেদ এতক্ষন সাবরিনের রাগ ভাঙানোর জন্য নানা বাহানা করছিল সে এখন সাবরিনকে দেখছেই না। সে এখন রিমোট নিয়ে টিভি দেখতে বসেছে। সাবরিনের তখন নিজের উপর খুব রাগ হয়। কেন সে এমনটা করল? রাগটা না ভাঙলেই তো হত।

সন্ধা ৬টা বাজতেই বাসার কলিংবেল বেজে উঠল। সাবরিন দরজা খুলে সাহেদকে দেখে ঘরের দিকে পা বাড়ায়। কয়েক পা আসতেই সাহেদ সাবরিনকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। সাবরিন নিজেকে ছাড়িয়ে সাহেদের দিকে ঘুরতেই দেখে সাহেদ আবারো জুতা নিয়ে ঘরের ভিতর চলে এসেছে। দেখেই সাবরিন চিতকার করে উঠল; তুমি আবারো......। সাহেদের এক হাতে একটা গোলাপের তোড়া আর রজনীগন্ধার মালা। সাহেদ এক হাতে আবারো সাবরিনকে সামনে থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। সাহেদ প্রতিদিন এভাবে অফিস থেকে ফিরেই সাবরিনকে জড়িয়ে ধরবে। নইলে নাকি সাহেদের সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয় না। সাবরিন ওর বুকে সাহেদের হৃদ স্পন্দন পরিষ্কার অনুভব করতে পারছে। সাবরিনের হৃদপিন্ড ও সাহেদের হৃদ স্পন্দনের সাথে সমান তালে স্পন্দিত হচ্ছে। সাবরিনের পক্ষে আর কিছুতেই সাহেদের উপর রাগ ধরে রাখা সম্ভব না। সাহেদের প্রতি গভীর ভালবাসায় সাবরিন ও সাহেদ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:০৯
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×