somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো থাকা

২৩ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুকুরটা একটানা চাপা গোঙানোর মত আওয়াজ করছে। বাসের পিছন থেকে আওয়াজটা আসায় পরিবেশের মাঝে একটা ভূতুড়ে ভাব এসে গেছে......আরেকটু আসতো, যদি না ওপর থেকে ফ্লাডলাইটের নিভু নিভু হাল্কা আলো জায়গাটাতে না থাকতো। মাঠের একপাশে দুটো বিশাল বাস পার্ক করে রাখা। বাসের পেছনে জমাট বাঁধা অন্ধকার থেকে কুকুরটার গোঙানোর শব্দ ভেসে আসছে। যেন কাছের কোন আপনজনকে হারানোর বেদনায় সে চরমভাবে বেদনার্ত। বিকালের একপশলা বৃষ্টির কারনে মাঠের এখানে সেখানে কাদা পানি থকথক করছে। কাদা পানির ছোঁয়ায় সবুজ ঘাসগুলো হয়ে গেছে কালো।



একটু পর কুকুরটা তার আর্তনাদ থামালো। চারপায়ে গুটিগুটি করে সে এসে দাঁড়ালো একটি বাসের সামনে। দৃষ্টি দিল সামনের দিকে দাঁড়িয়ে থাকা একদল লোকের দিকে। পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে সবাই...সামনের জন বাদে।

"yes....why have you done this? Are you supposed to do this? Tell me!!" সামনেরজনের মুখ থেকে চিৎকার বের হল। পাথরের মূর্তিগুলো নিসচুপ...যেন এইমাত্র তাদের মানুষ থেকে সত্যিকারের পাথরের মূর্তিতে রূপান্তর ঘটেছে। "OK, go to pushup position.....fast...fast..." - সামনেরজনের আদেশের সাথে সাথে মূর্তিগুলোর মাঝে প্রানের সঞ্চার ঘটল যেন। চার হাত-পায়ের উপর ভর করে সামনেরজনের কাঙ্ক্ষিত "pushup position" এ চলে আসলো সবাই। সামনেরজন হেঁটে বেড়াচ্ছে বাকি সবার সামনে, তার মুখও যেন তখন পাথরে খোদাই করা। তার চোখ তখন ঘুরে বেড়াচ্ছে নতুন কিছু পাবার আশায়।



হঠাৎ তার চোখ যেন জ্বলে উঠলো...... "Oh you...Raihan, yes.....get up, get up..."

মূর্তিগুলোর মাঝ থেকে আরেকটি মূর্তি উঠে দাঁড়ালো; নিসচুপ, ভাবলেশহীন মুখের অধিকারি...যেন আরেকটি পাথরে গড়া মূর্তি, এইমাত্র কোন ভাস্কর তার ছেনির শেষ আঁচর দিয়ে মূর্তিটি গড়া শেষ করেছে।

পরের কিছু মুহূর্ত যেন হুট করে চলে গেল সামনেরজনের চিৎকারের সাথে সাথে। রায়হান নামে পাথরের মূর্তিটির মুখ তখনও ভাবলেশহীন, যেন সামনেরজনের কথা তার কানে কিছুই ঢুকছেনা। কিন্তু এতক্ষণের কথাগুলো যে তার উপর প্রভাব ফেলেছে, তা বোঝা গেলো কাদাপানির উপর তার ডিগবাজী দেওয়ার প্রস্তুতি দেখে।



ফ্লাডলাইটের আলোয় তখন পুরো মাঠটা দেখাচ্ছে কালচে রঙ্গের। মূর্তিটি আজ সকালেই নতুন সাদা শার্টটি পড়েছিলো; নীল দেওয়া, চকচকে সাদা রঙ্গের শার্ট। কিন্তু......আর কিছু মুহূর্ত পর, ডিগবাজী শেষ করার পর সেটা বোঝার আর কোন উপায় রইলনা। না চাইলেও মূর্তিটির চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো। নিজের মনে, আস্তে আস্তে কাদার উপর ডিগবাজী দিতে লাগলো সে।

সামনেরজনের চিৎকারে সে উঠে দাঁড়ালো......ততক্ষণে তার সাদা কালো জামা মোটামুটি কালচে রঙ্গে পরিণত হয়েছে। কয়েকটি সাদা কালো মূর্তির মাঝে একটা কালচে মূর্তি নিজের জায়গা করে নিল।

"OK, now everybody will go to class." - সামনেরজনের কথায় সবাই নিজ নিজ ক্লাসের দিকে হাল্কা তালে দৌড়াতে লাগলো। কালচে মূর্তিটি সাম্নেরজঙ্কে কিছু একটা বলতে গিয়েও ফিরে আসলো......



সবাই ক্লাসে চলে এলো, আর কালচে মূর্তিটি ঢুকল ক্লাসের বাথরুমে। এ কয়েকদিন তাকে এ জামা দিয়েই চালাতে হবে। বেসিনের পানি দিয়ে সে তার জামার কাদামাখা অংশটুকু আস্তে আস্তে ধুয়ে নিতে লাগলো। আজ ক্লাসে তার কিছু কাজ করা লাগবে। তার প্রেমিকার চিঠি আজ বিকালে পেলো সে...এখনও খুলে দেখা হয়নি। চিঠিটা পড়তে হবে......আর লিখতে হবে তার উত্তর।

জামার অবস্থা একটু ঠিক করে ভেজা শরীরে সে চলে এলো ক্লাসে। যে জার মত ব্যাস্ত...তার দিকে তাকানোর সময় কারো নেই। ক্লাসরুমের একদম শেষে তার বসার জায়গা। ডেস্কে বসে সে বের করল চিঠিটা। কিছুখনের জন্য সে হারিয়ে গেলো অন্য এক জগতে। চিঠি শেষ করে সে বসলো উত্তর লেখতে। অনেকক্ষণ ধরে চিঠি লেখার সাদা কাগজটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল সে। প্রথম লাইনটি লেখল সে, "আমি ভাল আছি"।



তার নিজের অজান্তেই এক ফোঁটা অশ্রু এসে পড়ল লাইনটির উপর। হ্যাঁ, সে আসলেই ভাল আছে!!!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×