somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগুনে শুরু, ছাইয়ে শেষ

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মামা, দুটা গোল্ডলিফ......আর লাইটারটা দেন” – আমার মুখে এমন কথা শুনে বাড়ীর কাছের দোকানদার কাজল মামা বেশ অবাক হলেন। তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে রাত ৯ টার সময় আমার মত ছেলে [বাসার আশপাশের লোকজন আমাকে ‘ভাজা মাছটাও উলটে খেতে পারেনা’ টাইপ ছেলে হিসেবে জানে] এসে তার কাছে সিগারেট চাবে। আমার চোখের উপর হালকা দৃষ্টি বুলিয়ে, একটু দ্বিধান্বিত হয়ে আমার হাতে সিগারেট আর লাইটারটা দিলেন। আমার চোখ তখন টকটকে লাল......যেন এখুনি চোখ ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসবে।

সময়টা ১৪ আগস্ট, ২০১২ সাল।

কাজল মামার দোকানের পাশ দিয়ে যে পিচঢালা রাস্তাটি গেছে, সেটা শেষ হয়েছে একদম ঢাকা-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে গিয়ে। রাস্তার দুপাশে যতদূর চোখ যায়, শুধু ধানের মাঠ......রাতের বেলা জায়গাটা একদম নির্জন থাকে। একসময় সিগারেট জিনিসটাকে আমি খুব ঘৃণা করতাম......এমনকি সিগারেটের গন্ধ পর্যন্ত সহ্য করতে পারতাম না। কিন্তু আজ আমি, নিতান্তই জেদের বশে সিগারেট খাচ্ছি......নিজের উপর নয়, আরেকজনের উপর জেদ করে। বন্ধুরা বলতো, প্রথম প্রথম খেলে নাকি খুব কাশি আসে। তাই আমার মাঝে একটা মানসিক প্রস্তুতি ছিল এই যে, আমি জোর করে হলেও নিজের কাশি আটকে রাখবো। মানে সবার থেকে একটু আলাদা হওয়ার চিন্তা আর কি!!

লোকালয় শেষ করে যখন ধানের মাঠ শুরু হল, আমি সিগারেট ধরালাম। প্রথম টানেই মাথার মাঝে জোরেশোরে একটা ধাক্কা লাগলো......আর গলার কাছে কেমন যেন একটা জ্বলে যাওয়া স্বাদ পেতে লাগলাম। ভিতর থেকে কাশির প্রচণ্ড একটা দমক উঠে আসতে লাগলো, কিন্তু আমি একগুঁয়ের মত কাশিটা আটকে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করলাম......এবং সফল হলাম...। প্রথম টানের ধাক্কা সামলে পরের টানটা দিলাম, আগের মত অতটা অস্বস্তি লাগলোনা; কিন্তু মুখের মাঝে, গলার কাছে সেই জ্বলে যাওয়া স্বাদটা পেতেই লাগলাম। অর্ধেকটা টানা শেষ করে বুঝলাম, এখন যদি আমি হাঁটতে থাকি, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। ধপ করে বসে পড়লাম রাস্তার ধারে, ঘাসের উপর।

তখন পুরো আকাশ ভেসে যাচ্ছে জোছনার আলোয়। চাঁদের আলোয় চারপাশ কেমন যেন অদ্ভুত সুন্দর লাগছে......সাথে হালকা ভুতুড়ে ভাবও নেমে এসেছে পরিবেশটাতে। আমি কাঁপা হাতে সেলফোনটা বের করলাম। যার উপর জেদ করে এতকিছু করেছি, তাকে ফোন দিলাম

- [ও] হ্যালো।
- [হালকা জড়ানো কণ্ঠে] হুম, আছি।
- তোমাকে মনে হয় আমি কিছু বলেছিলাম, খেয়াল আছে?
- মনে হয়......ওই কথা যে আমার মনে থাকবে না, এটা তুমি ভালমতই জানো।
- দেখো, তোমাকে যে আমি দূরে সরিয়ে দিতে চাচ্ছি, এটা তুমি বুঝেও কেন এমন করছো?
- কই, কয়েকদিন আগেই তো এমন করতে না......এখন হঠাৎ কেন এমন করো?
- আসলে......আমার বাবা-মা চায় না তোমার সাথে আমার সম্পর্ক থাকুক...
- [এখানে আমার গলার স্বর একটু চড়া হয়ে গেল] তাহলে আমাকে এতদিন কেন এটা বললে না তুমি?
- জানি না, কিচ্ছু জানি না আমি......
- অই......... [তারপর কিছু অশ্রাব্য গালাগালি আমার মুখ দিয়ে নিজের অজান্তেই বের হয়ে গেল...নিজের উপর বেশ অবাক হয়ে গেছিলাম তখন]
- [ও, কিছুক্ষণ চুপ থেকে] তুমি আমাকে এগুলো বলতে পারলে...ছি ছি......।
- [আগের চেয়ে জড়ানো কণ্ঠে] হুম, বল্লাম......তো?
- এই তুমি কোথায় এখন?
- যেখানেই থাকি, তা দিয়ে তোমার কি? [এখানে এসে আমার মাথাটা কেমন যেন গুলিয়ে উঠলো, আমি রাস্তার পাশে বসেই হড়হড় করে বমি করে দিলাম]
- এই, তুমি...তুমি সত্যি করে বল...কিছু খেয়েছ তুমি?
- যা ইচ্ছা খেয়েছি...তাতে তোমার কি?
- তুমি...তুমি...শেষ পর্যন্ত......

তাকে হতভম্ব অবস্থায় রেখেই ফোনটা কেটে দিলাম। আর কথা বলতে ইচ্ছা করছিলোনা। মাথা ঘুরানো ভাবটা কেটে গিয়ে ভালই লাগছিলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দ্বিতীয় সিগারেটটা ধরালাম। দেখলাম, ফোনে একটা মেসেজ এসেছে।

“ তোমাকে হয়তো প্রচণ্ড ভালবাসি......কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে যে; যে ছেলেকে আমি ভালবেসেছিলাম, সে ছেলে তুমি নও......আমার সাথে আর কন্টাক্ট করো না প্লিজ...ভালো থেকো...”

মেসেজটা ডিলেট করে আমি সুখটান দিতে লাগলাম। চোখের কোণে হালকা পানি জমেছিলো...গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে ফেললাম। যা চলে গেছে, তা নিয়ে আফসোস করে লাভ কি আর...আর যত যাই হোক, ছেলেদের কখনও কাঁদতে নেই।

আর হ্যাঁ, সেদিন থেকেই শুরু আমার ধুম্র-ইতিহাসের!!!

পুনশ্চঃ কয়েকদিন আগে ওর খবর পেলাম ওর ছোট বোনের কাছ থেকে। ওর বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে নাকি ওর বিয়ে হয়েছে......ছেলে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে ভালো বেতনের চাকুরীজীবী। স্বামীর সাথে ও নাকি এখন চট্টগ্রাম থাকে। তার লেখা একটা চিঠিও পেলাম......আমাকে বলেছে সিগারেট আর অন্যসব ছাইপাশ খাওয়া ছেড়ে দিতে। ওই চিঠি আমি আবার আমার হাতের সিগারেটের আগুনেই পোড়ালাম!!! আহহহ......কি আনন্দ!!!
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×