somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতসীর সতীন

০৩ রা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এর আগের পর্বটি পড়তে এইখানে ক্লিক করুন


অতসী এখন অনেক বড় হয়েছে। সে এখন একটা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী......সারাদিন বিজি থাকে। যখন তাকে ফোন দেই, “আমি তো পড়ছি, পরে কথা বলি?” বা “ক্লাসে এখন......পরে ফোন দেই?” টাইপ কথা শুনতে হয় আমার। আমি এইদিকে আমার স্টুডেন্ট নিয়ে বিজি, সন্ধ্যাবেলা আমার নিজেরই ক্লাস ৯ এর বাচ্চাগুলোকে সময় দেয়া লাগে। না চাইলেও ওর সাথে দূরত্ব এমনেই বেড়ে যাচ্ছিলো আমার । সৌভাগ্যক্রমে তার মেডিকেল কলেজ আমার বাসা থেকে বেশী দূরে না। কয়েকবার গাড়ি চেঞ্জ করা লাগলেও যেতে ১ ঘণ্টার বেশী লাগে না।

হঠাৎ তাকে একদিন সারপ্রাইজ দিতে ইচ্ছা করলো। যেই ভাবা সেই কাজ, আমি বেরিয়ে পড়লাম তার কলেজের দিকে। সকাল বেলা ফ্রেশ মুডে যাওয়ার জন্য রেডী হচ্ছি, এমন সময় অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসলো। রিসিভ করে মোটামুটি ধাক্কার মত খেলাম।
- (মেয়ে কণ্ঠ) কেমন আছো তুমি? আমাকে ভুলে গেছো মনে হয়???
- (তোমারে ভুলুম কেমনে......এমন পিসরে মানুষ ভুলে?) না, ভুলিনাই তো, মানে......কিভাবে বুঝাবো তোমাকে, আমি খুব বিজি থাকি এখন।
- (একটু আশাহত কণ্ঠে) নাহ, তুমি আসলেই আমাকে ভুলে গেছো......আমার জন্য তোমার একটুও সময় নেই!!!???
- (পড়লাম মাইনকার চিপায়) দেখো, ব্যাপারটা সেটা না......আচ্ছা আমি তোমাকে রাতে এক্সপ্লেইন করবো সব......আমি একটু বিজি, পরে কথা হবে।
তাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে লাইন কাটলাম ফোনের।

মেয়েটার নাম সোনিয়া। আরো আগেই তার সাথে আমার পরিচয়। আগে কথা নিয়মিতই হত......অতসীর সাথে সম্পর্কের পর থেকে আমিই তাকে এভয়েড করে চলি। আমার অনেক বন্ধুই তাকে চিনতো, এবং তারা কেউই সোনিয়া সম্পর্কে ভালো কথা বলতো না আমাকে। মেয়েটা নাকি একসাথে অনেকগুলা রিলেশন রাখতো, এটা জানার পর তার সাথে আমি একরকম যোগাযোগ বন্ধই করে দেই; আজ যদি সে অচেনা নম্বর থেকে ফোন না দিতো, তাহলে আমি তার ফোন ভুলেও রিসিভ করতাম না।

যাক, কোনভাবে ফোনটা রেখে অতসীর কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সিএনজিতে বসে সারা রাস্তা গান শুনতে শুনতে আর সুখের কল্পনা করতে করতে এলাম। কলেজের সামনে এসে তাকে ফোন দিলাম, কিন্তু ফোন আর কেউ ধরে না। ভাবলাম এমনেই সারপ্রাইজ ভিজিট, তার উপর আজ আবার শুক্রবার; মেয়ে বোধহয় ঘুমাচ্ছে। যখন বিরক্তির শেষ সীমায় পৌছে গেছি আমি কল দিতে দিতে, তখন সে ফোন ধরলো। আমি তার কলেজের সামনে- এই কথা শুনেই তার ঘুম ছুটে গেল, আর সাথে সাথে আমার সব বিরক্তিও এক নিমিষে উধাও হয়ে গেলো। আধা ঘণ্টা পর কলেজের গেটের সামনের রাস্তায় তাকে দেখা গেলো। ঠোঁটে সেই ট্রেডমার্ক দুস্টু হাসি, চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক......সেই চিরপরিচিত অতসী। মাঝে মাঝে আমি চিন্তায় পড়ে যাই, এই মেয়েকে বিয়ে করলে আমার বিশাল সমস্যা হয়ে যাবে......আমার সাথে সে যত যা-ই করুকনা কেন, তার উপরে রাগ ধরে রাখতে পারবোনা আমি!!!

দুজনে রিকশায় উঠলাম, গন্তব্যস্থল শহরের মাথায় যে নিরিবিলি পার্কটা আছে, ওখানে। আমার সাথে থাকলে অতসীর বকবক কখনোই থামেনা। এতো কথা যে মেয়েটা কিভাবে বলে, আল্লাহই জানেন। তার বকবকের মাঝে বাধা দিলো আমার সেলফোনের বেরসিক টোন। সঙ্গে সঙ্গে তার ধমক, “তোমাকে কতবার বলেছি এই রিংটোনটা চেঞ্জ করতে......আই হেট দিস......”। ফোন হাতে নিয়ে চমকে উঠলাম; সোনিয়ার সেই নম্বর থেকে ফোন এসেছে। আমি আস্তে করে ফোন কেটে দিলাম। ফোন পকেটে রাখতে যাবো, এমন সময়ে অতসীর সন্দেহমাখা প্রশ্ন, “ফোন কাটলা কেন? কে ফোন দিয়েছিলো?”
- না মানে, এক পুরোনো বন্ধু......এখন ফোন রিসিভ করলে আর ছাড়তে চাইবেনা তো, তাই ফোন কেটে দিলাম।
- উহু, আমার জন্য তুমি তোমার পুরোনো বন্ধুদের এভয়েড করবা, এটা তো ঠিক না। এখনই উনাকে ফোন দাও।
আমি তাকে বুঝানোর জন্য একটা গ্যাঁজ মারতে যাবো, এমন সময় ঐ নম্বর থেকে আবার ফোন আসলো। “ঐতো, তোমার বন্ধু আবার ফোন দিলো বোধহয়......কথা বলো”। আমি ফোন ধরেই টানা বলে গেলাম, “দোস্ত আমি বাইরে আছি এখন, পরে আমাকে ফোন দিস......এখন রাখি, বাই”! ফোন রেখে দেখি অতসী আমার দিকে হাঁ করে চেয়ে আছে।

- বললাম না, ভালোমত কথা বলো?!? এখন উনি কি মনে করবে???
- না, আসলে এখন আমার কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।
- কেন কথা বলবা না???......আচ্ছা এবার ফোন দিলে আমিই......
বলতে বলতে আবার ফোন দিলো ফাজিলটা। অমনি অতসী আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নিলো। নিয়েই কিছুক্ষণ ভুরূ কুঁচকে চেয়ে রইলো ফোনের দিকে, “ডু নট রিসিভ......কলিং” লেখাটার দিকে। তারপর ফোন রিসিভ করে কানে ঠেকালো সে।

(সৌভাগ্যক্রমে আমার ফোনের স্পিকার অত্যাধিক শক্তিশালী হওয়ায় দুজনের আলাপটা পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম আমি!!!)
- (অতসী) হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম......কে?
- (অপর পাশ থেকে) আপনি কে?
- ওমা, আপনিই তো ফোন দিলেন; আবার আপনিই জিজ্ঞেস করছেন আমি কে?!?
- না, ফোনটা তো আপনার রিসিভ করার কথা না। (কি কয় মাইয়া???)
- আজিব, আমি ওর ফোন রিসিভ করতে পারবোনা?
- আগে বলুন, আপনি কে?
- আমি রায়হানের বউ!!! (আহহা......দিলখানি জুড়ায়া গেলগা রেএএএএএ...!!!)
- তাহলে আমি কে? (মারছে আমারে এইবার!!!)
- আপনি কে সেটা আমি কিভাবে জানবো?
- (কিছুক্ষণ বিরতি)......আচ্ছা, আপনার জামাই কোথায়?
- ওকে দিয়ে আপনার কি দরকার?
- বলুন যে......(একটু বিরতি)......ওর দ্বিতীয় বিবি ফোন দিয়েছে!!!
- কিইইইইইইইইইইইইই!!!!! (......টুট টুট টুট......ফোনের লাইন কাটার শব্দ)
প্রায় আল্ট্রাসোনিক লেভেলের যে চিল্লানিটা অতসী দিলো, রিক্সার পাইলট মামা ভয়ে রিক্সাই থামিয়ে দিলেন। আমার ফোনটা আমার কোলে একরম ঢিল মেরে সে রিক্সা থেকে নেমে উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করলো। আমি শুরু করলাম তার পিছুপিছু হাঁটা।
- অতসী, ব্যাপারটা আমাকে বুঝাতে দাও প্লিজ!
- আমাকে কিচ্ছু বুঝানো লাগবে না; তুমি শুধু বলো মেয়েটা যা বলেছে, তা কতটুকু সত্য?
- একটুও সত্য না......দেখো, মেয়েটা আমাকে ঠিকমতো......
বলতে বলতে আবার বেরসিক ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো......রিংটোনের শব্দ ছাপিয়ে অতসীর কণ্ঠ কানে ঢুকলো আমার, “ফোনটা দাও!!!”

পরের দুই মিনিট অতসীর কথা শুনে আমি রীতিমত টাশকিত হয়ে গেলাম। হা করে খালি তার কথাগুলো গিলছিলাম। কে জানতো, এই মেয়ে এভাবে কথা বলতে পারে!!! দুই মিনিট পর যখন সে আমার হাতে ফোন ধরিয়ে দিলো, তখনও আমি হা করে চেয়ে আছি।
- হা করে চেয়ে কি দেখছো?
- না, মানে.........
- আমার সতীনকে যা বলেছি, তা ভুল নাকি??
- দেখো, ডোন্ট কল হার ‘সতীন’!!!
- আচ্ছা যাও, বলবো না...(খিলখিল হাসি)... তা, এর সাথে পরিচয় কিভাবে?
- বলছি...আগে পার্কে গিয়ে বসি, তারপর।
- আচ্ছা চল (বলে সে আলতো করে আমার হাতটা ধরলো......আমি আবার তার দিকে তাকালাম)
- অতসী!!!
- বল
- (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) না, কিচ্ছু না......তাড়াতাড়ি চল, রোদ খুব বেশী এইদিকে।
- (সে......একটু চুপ থেকে) আমি জানি কি বলতে চাচ্ছো তুমি......ঠিক আছে!
বলে সে তার চিরপরিচিত হাসি দিলো......আর আমি আবারো তার দিকে হা করে চেয়ে রইলাম!!!

তার সাথে সময় কাটিয়ে বাসায় আসতে আসতে বিকাল হয়ে গেলো। বাসায় এসে কাপড়চোপড় না খুলেই কোনমতে বিছানায় দেহখানি রাখলাম। কোন ফাঁকে যে ঘুমিয়ে গেলাম, নিজেই জানি না। ঘুম থেকে উঠে দেখি মা আর ছোট ভাই গম্ভীরমুখে আমার বিছানার পাশে বসে আছে। মা’র হাতে আমার ফোন, আর ছোট ভাই মুচকি হাসছে। কিছুক্ষণ আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো মা।
- “ডু নট রিসিভ” দিয়ে কার নম্বর সেভ করা?
- ঐতো, একটা মেয়ের।
- (ধমক দিয়ে) সেটা তো আমিও জানি......মেয়েটা কে?
- চিনবানা তুমি......কি হইছে?
তারপর একনাগাড়ে মা আমাকে কোন ঘটনা না বলে ধমকে গেলো, এবং আমি আবারো হা হয়ে গেলাম। ভাবলাম, আজ সারাটাদিন আমার হা হয়েই গেলো; অতসীকে দেখেও হা হই, মায়ের ধমক খেয়েও হা হই!!!

তারপর ছোট ভাই যে কাহিনী বললো, সেটা শুনে আমি আবারো হা হয়ে গেলাম। ঐ বজ্জাত মেয়ে নাকি বারেবারে ফোন দিচ্ছিলো, তারপর না পেরে মা নাকি তার ফোন রিসিভ করে......আর মা কিছু বলার আগেই মেয়ে নাকি ইচ্ছামত মাকে ধমক দেয় (মনে হয় ও মা’কে অতসী মনে করেছিলো)। মা যখন জিজ্ঞেস করে যে সে কে, তখন মেয়ে নাকি বলেছিলো, “...আমি তোর নানী...(!!!)”।

কাহিনী শুনে হাসবো না কাঁদবো, বুঝছিলাম না! যাইহোক, অতসী আর মা – কেউ-ই পরে ঐ “ডু নট রিসিভ”কে নিয়ে মাথা ঘামায়নাই। ভালোয় ভালোয় বাঁচলাম আর কি!!!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×