somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাচ্চা+আমি (১)

২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন বয়স আর কত হবে, মনে হয় ক্লাস ১ এর মাঝামাঝি টাইমের কথা এটা। আমি যেখানে থাকতাম, সেখান থেকে আমাদের থানা সদরের (মনোহরদীর) একমাত্র বাজারটির দূরত্ব ১ কিলোমিটারের কিছু কম। বাচ্চাকালে বাসার পাশে স্কুলে হেঁটে গেলেই অবস্থা খারাপ হয়ে যেত (লুতুপুতু বাচ্চা আছিলাম আর কি!!), আর ১ কিলোমিটারের মত হাঁটা তো অনেক কিছু। তখন আবার ঘুড়ি উড়ানোর সিজন চলছিলো। বাসার সামনের মাঠে, পাশের ধানক্ষেতের উপরের আকাশ বিকালবেলা ভরে যেত নানা রঙ-বেরঙয়ের, নানা আকারের ঘুড়িতে। একেকটার আবার বিভিন্ন লোকাল নাম ছিলো..... “তেলেঙ্গা” (যেটাকে নরমালি শহরবাসীরা ঘুড়ি বলে জানে), “ডাহুক>ডাউড” (পাখি শেপের বড় সাইজের ঘুড়ি), সাপ ঘুড়ি, ঝাড় ঘুড়ি...নামের সাথে সাথে তাদের আকারও নানা রকম।

একদিন বন্ধু টুটুল বললো, সে নাকি তার কোন মামাকে দিয়ে একটা বড় “ডাউড” ঘুড়ি বানিয়েছে; কিন্তু সেটা উড়ানোর জন্য যে নাইলনের সুতা লাগে, সেটা তার কাছে নেই। সেটা কিনতে হলে যাওয়া লাগবে ঐ বাজারে। মোটামুটি জোর করেই আমাকে সে নিয়ে গেলো তার সাথে। আমি এমনেই তখন অত হাঁটতে পারি না, মোটামুটি অর্ধেক পথ গিয়েই আমার অবস্থা কাহিল। টুটুল আমাকে মোটামুটি তাড়া দিয়ে বাজারের দিকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো।

বাজারে ঢুকতে নিবো, এমন সময়ে মনে হল আমার পেটের মাঝে কি যেন গুড়গুড় করে উঠলো, সাথে পেট ব্যাথা। বুঝলাম, এমন সময়ে প্রকৃতি আমাকে স্মরণ করেছে। পাশে হাঁটতে থাকা টুটুলকে বললাম, “দোস্ত, অবস্থা তো ভালো না।”
- ক্যান, হইছে কি?
- খুব বাথরুমে পাইছে রে!
- কয় নং? ১ না ২?
- ২ নং দোস্ত (ততক্ষণে আমার মুখ লাল হওয়া শুরু হয়ে গেছে চাপ আটকাতে গিয়ে)
- আরে ব্যাপার না, আয় আগে কাম শেষ কইরা লই।
বলে আমাকে আর সুযোগ দিলো না ও, টেনে নিয়ে গেলো বাজারের ভিতর।

এত্ত দোকান ঘুরছে, অথচ তার মনমতো সূতা পাচ্ছে না সে। আমার অবস্থা খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে আরো। তাকে যে বলবো, ঐ সাহসও পাচ্ছি না......পাছে আবার ধমক মেরে বসে আমাকে। শেষে যখন একদমই পারছি না, তখন তার পিঠে কিল মারলাম, “দোস্ত, আর কতক্ষণ?” আমার কণ্ঠের অস্বাভাবিক অবস্থার জন্যই সে আমার দিকে তাকালো; তার উপর যখন দেখলো আমার মুখ পুরা লাল, পুরা ঘেমে গেছি আমি......সে বলে, “চল আগে, তোর ব্যবস্থা করি।”

বাজারের বাইরে এক পাশে তখন একটা পাবলিক টয়লেট ছিলো, কিন্তু নানারকম পাবলিকদের জন্য সে টয়লেটের অবস্থা ছিলো খুবই খারাপ। মোটামুটি দৌড়িয়েই আমি ঢুকতে গেলাম ১ নং টয়লেটে; কিন্তু বসতে গিয়েই খেয়াল হল, বদনা নেই। ৪ টা টয়লেট পাশাপাশি, আমি মোটামুটি ঝড়ের বেগে বের হলাম, ২ নং টয়লেটের দরজা খুললাম। আমার অবস্থা দেখে টুটুল বুঝে ফেলেছে যে ১ নং এ বদনা নেই, সে ও আমার পিছুপিছু আসলো। ২ ৩ নং এ বদনা পেলাম না......৪ নং দরজাটা খুললাম, আর সঙ্গে সঙ্গে একগাদা গালিগালাজ শুনতে হল আমাদের দুইজনকে। জনৈক ব্যক্তি পাবলিক টয়লেটের একমাত্র বদনা দখল করে আরামে ২ নং কাজ সারছিলেন, আর ঐ জায়গার কোন টয়লেটেই ছিটকিনি নেই। উনি ভাবতেও পারেননি যে তার আরামের কাজে আমরা দুই বিটলা গিয়ে বাধা দিবো! গালিগালাজ শুনতে যা দেরি, সঙ্গে সঙ্গে উনার মুখের উপর দরজায় ধাক্কা মেরে আমরা দুইজন দৌড়......দৌড়াতে দৌড়াতে একদম আমাদের বাসার সামনে। ঐ লোকের ধমক খেয়ে প্রকৃতিও ভয় পেয়ে আমাকে ডাকা বন্ধ করে দিয়েছিলো হয়ত!

ঐ ঘটনার পর স্কুলে আমার একটা নতুন নাম হয়ে গিয়েছিলো......আর বললাম না নামটা।



০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×