somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)
পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, 'ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামিন।' (সূরা আম্বিয়া, ১০৭) অর্থাৎ আমি সমগ্র সৃষ্টির জন্য আপনাকে রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।
পৃথিবীতে হুজুরে পাক হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের-এর শুভ আগমন সব নিয়ামতের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট। রাসুলে পাক (দ.)কে দুনিয়াতে প্রেরণের শুকরিয়া আদায় হিসেবে আমরা সুন্নি মুসলমানরা প্রতি বছর পবিত্র ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করি। রাসূলে পাকের পবিত্র জন্মদিনে আমরা তাঁর পবিত্র জন্মবৃত্তান্ত, জীবনবৃত্তান্ত, নূরে মোহাম্মদির কেরামতের আলোচনা, শানে মোস্তফা ও প্রাসঙ্গিক শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জীবনকে আলোকিত ও গড়ে তোলার প্রয়াস পাই। শুকর আদায়ের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রেজামন্দি হাসিল করতে পারি। এরশাদ হয়েছে 'লা ইনশাকারতুম লা আজিদান্নাকুম'। অর্থাৎ তোমরা শুকর গুজার কর তবে আমি তা (রহমত) বৃদ্ধি করে দেব।
হজরত মূসা (আ.) বলেছেন, 'হে আল্লাহ আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি দস্তরখানা প্রেরণ করুন। যাতে এটা আমাদের আগে পরে সবার জন্য ঈদে পরিণত হয়।' সামান্য তুচ্ছ খানা প্রার্থনা ও প্রাপ্তি যদি ঈদ উদযাপনের উপলক্ষ হিসেবে আল্লাহ স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন তবে সমগ্র জগতের সৃষ্টির লক্ষ্য রাহমাতুল্লিল আলামিনের পৃথিবীতে প্রেরণ অবশ্যই তার থেকে উত্তম এবং বড় নেয়ামত। এজন্য তাঁর পবিত্র বেলাদতের দিনও ঈদের মতো। তাঁর শান এত ঊর্ধ্বে যে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন বলেছেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর নবীর ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাকুল আল্লাহর নবী ও রাসুলের উপরে দরূদ পড়েন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ এবং যথাযথভাবে সালাম পাঠ কর।' (সূরা আহ্যাব ৫৬)
হজরত ঈসা (আ.) বলেছেন, 'আমি এমন রাসূলের শুভ সংবাদদাতা, যিনি আমার পরে তশরীফ আনবেন, যার পবিত্র নাম আহমদ।' অর্থাৎ মিলাদে নবী মুস্তফা অন্যান্য নবীদের জন্যও সুন্নত। স্বয়ং হুজুর (সা.)ও মিম্বরে দাঁড়িয়ে সাহাবাগণের সমাবেশে নিজ বেলাদত ও গুণাবলী বর্ণনা করেছেন।
সাহাবায়ে কেরামগণ একে অপরের কাছে গিয়ে রাসূলে পাকের নাত শোনার আবদার করতেন এবং রাসূলে পাকের বেলাদত নিয়ে গবেষণা করে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতেন। আবু লাহাবও রাসূলে পাকের পবিত্র জন্মদিনে ভ্রাতুষ্পুত্রের জন্ম সংবাদ শুনে শুয়াইবা নামক দাসীকে আযাদ করায় প্রতি সোমবার তার কবর আজাব শিথিল করা হয়েছে। (বুখারি শরিফ ২য় খণ্ড, কিতাবুন নিকাহ)
তাহলে আমরা যদি এ মহান রবিউল আউয়ালে ঈমানদাররা একত্রিত হয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি তবে আল্লাহ কি পুরস্কার দেবেন তা সহজেই অনুমেয়। শায়খ মুহাম্মদ জাহির রবিউল আউয়াল প্রসঙ্গে বলেন- ‘নিশ্চয়ই এটি এমন একটি মাস, যে মাসে প্রতি বছর আনন্দ প্রকাশ করার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।' (মুজমাউল বিহার, পৃষ্ঠা ৫৫০)
ইমাম জালালুদ্দিন সয়ুতী (রা.) বলেছেন, 'হুজুর আলাইহিস সালামের বেলাদতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা আমাদের জন্য মুস্তাহাব।' (তাফসিরে রুহুল বয়ান ৫ম খণ্ড, ৬৬১ পৃষ্ঠা)
আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রা.) তাঁর রচিত মাসাবাত মিনাচ্ছুন্নাহ গ্রন্থে লিখেছেন, 'হাজার মাসের চেয়ে উত্তম লাইলাতুল ক্বদর, ফজিলতের রাত্রি শবে বরাত, শবে মেরাজ, দুই ঈদের রাত। এসবই রাসূলে খোদাকে দান করা হয়েছে। যাকে দান করা রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম স্বয়ং তার আগমন দিবস যে কত লক্ষ কোটি দিবস রজনীর চেয়ে উত্তম তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।'
হজরত শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দেস দেহলভী (র.) বলেন, 'রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে পূর্ব নিয়ম অনুযায়ী সব লোকজন সমবেত হয়ে দরূদ পাঠে মনোনিবেশ করে। এরপর এই ফকির নিজে উক্ত মজলিশে উপস্থিত হই।'
হজরত হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজেরে মক্কী (র.) তাঁর রচিত হাফত মাসয়েলে লেখেন, 'এ ফকিরের নিয়ম হল আমি মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করে থাকি বরং মিলাদ অনুষ্ঠানকে বরকত লাভের উপায় বিবেচনা করে আমি প্রতি বছর মিলাদের আয়োজন করে থাকি এবং এ অনুষ্ঠানে কিয়ামের সময় অশেষ আনন্দ ও আরাম উপভোগ করে থাকি।'
আল্লামা ইবনুল জায়রী (র.) বলেন, 'মিলাদ অনুষ্ঠান হলে শয়তানের পিঠে কষাঘাত পড়ে, আর ঈমানদারদের হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়।' (সীরাতে শামীয়া)
বিশ্ববিখ্যাত আলেম মোল্লা আলী কারী (র.) ইমাম সাখাবী (র.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, 'যারা কয়েক বছরব্যাপী মক্কা শরিফে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মিলাদ ও বরকতের পরিচয় লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন আমি তাদের মধ্যে অন্যতম।' (রেসালাতুল মাওরেদ)
হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, 'হুজুরে পাক হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর দরূদ পড়ার ফলে গুনাহ এমনভাবে মিটিয়ে দেয়া হয়; যেভাবে ঠাণ্ডা পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। তার প্রতি সালাত সালাম পেশ করা দাসদাসী মুক্ত করার চেয়েও উত্তম।' (শেফাশরিফ- ২/৬১)
তাই আল্লাহতাআলা যথার্থ ইরশাদ করেছেন, 'ক্কুল বি ফাদলিল্লাহে ওয়া বিরাহমাতিহী ফাবিজ্বালিকা ফালয়াফরাহু।' অর্থাৎ 'আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের ব্যাপারে বেশি করে আনন্দ ও উল্লাস প্রকাশ কর।' (সূরা ইউনুছ আয়াত ৫৮)
হুজুর পাক আল্লাহর অনুগ্রহ এবং রহমতও। সেজন্য তার পবিত্র বেলাদতের জন্য আনন্দ প্রকাশ করা এ আয়াত অনুযায়ী আমল হিসেবে প্রকাশ পায়। এখানে আনন্দ উল্লাস বলতে সর্বপ্রকার সুশৃঙ্খল জামাতবদ্ধ বৈধ আনন্দ; যেমন মিলাদ মাহফিল, কেয়াম, জুলুস, হামদ-নাত, তবারক বিতরণ, দান খয়রাত ইত্যাদি সব কিছুকেই বুঝিয়েছে।
পবিত্র ঈদ-ই মিলাদুন্নবী উদ্যাপনই দিতে পারে মুসলিম উম্মাহর সৌভ্রাতৃত্ব ও একত্বের সন্ধান; যার মাধ্যমে আমরা দীন ইসলামকে নিয়ে যেতে পারব সর্বোচ্চ অবস্থানে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×