somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ভোরের সূচনা

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-কাল তাহলে আমাদের দেখা হচ্ছে তাইনা!

-বুঝতে পারছিনা।অফিস থেকে আগে আগে বের হতে পারবো কিনা জানিনা। কিন্তু আমি বের হবার চেষ্টা করবো। তুমি ওদের সাথে দেখা করো।একসাথে থাকো।যদি পারি আমি তো আসবই তোমাদের ওখানে।

-ঠিক আছে।যাই তাহলে।

অনিত কে বিদায় দিয়ে চ্যাট থেকে লগ আউট দিলো তন্নি।মনের ভেতর একরাশ ভালোলাগা। অনিত এর সাথে কাল দেখা হতে পারে ওর!

তন্বি আর অনিত দুই জন দুই জন কে চেনে মাত্র এক মাশ।সারাদিন দুই জন নেট এ চ্যাট করে। তন্বি জানেনা কেন অনিত এর প্রতি প্রচন্ড টান অনুভব করে।এত অল্প দিনের পরিচয়,কিন্তু অদ্ভুত একটা অনুভুতি আসে ওর।একদম মনের গভীর থেকে।যেটার সম্পর্কে ও নিজেও অবগত না!এরকম তো কখনো হয়নি এর আগে। চ্যাট তো তন্বি বহুত ছেলের সাথেই করে,কিন্তু অনিত এর প্রতি ওর এই ভালোলাগাটা এর আগে আর কারো প্রতি আসেনি। তাহলে ওর প্রতি কেন আসে?তন্বি ভাবে,আমার ভেতর হয়তো আরেকটা আমি বাস্‌ করে। যেটা কে এই আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা!যেটা তার নিজের ইচ্ছামত চলে। অথচ এই দুই জন মিলেই তো ও একজন!

অনিত আর tonnir পরিচয় শুধু চ্যাট থেকেই শুরু হয়নি। অনিত কে তন্নী প্রথম দেখে তন্নীর জন্মদিনে। তন্নীর বড় বোনের বন্ধু অনিত। তন্নীর জন্মদিন পার্টি তে ওর বড় বোন দাওয়াত দেয় অনিত কে। আরো ৩ ৪ জন বন্ধু কে। ওদিন অনিত কে দেখে তন্নি। কিন্তু খেয়াল করেনি। কথাও বলেনি।একদম অপরিচিত ওরা ২ জন।

কিন্তু এর পর ওদের নেট এ এড হয়,চ্যাট হয়।ভাললাগা গুলো যেন চাপা পড়ে ছিলো এতদিন।হুট করেই দরোজা খুলে একসাথে বের হয়ে আসে। তন্নি বোঝে অনিতও ওকে পছন্দ করে.

কাল আবারো দেখা হবে অনিত এর সাথে।বুক ভরা উত্তেজনা নিয়েই ঘুমাতে যায় তন্বি!অপেক্ষা করতে থাকে কালকের দিনের।দেখা হবে,কথা হবে। কিন্তু কি কথা বলবে ও!ওর তো কথা বলতেই লজ্জা লাগে!"দেখা যাক কাল" মনে মনে বলে ঘুমিয়ে পড়লো তন্বি।

সকালে তন্বি,ওর বোন আর আরো ২জন বন্ধু মিলে ঘুরতে বের হলোও।ঢাকা শহর এর এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে দুপুরের দিক ৪ জন লালবাগ কেল্লা যায়।ওখানে বসে আড্ডা দিতে থাকে। কিন্তু তন্বির চোখ্ শুধু অনিত কে খোঁজে। কখন আসবে অনিত,এখনো আসেনা কেন। একটা দিন অফিস থেকে আগে বের হলে কি আর এমন হয়!.মনে মনে শুধু ঘুরে ফিরে ওর এই কথাটাই মাথায় আসে।ওর বোন কে,বন্ধু দুইটা কেও কয়েকবার জিজ্ঞেস করা শেষ তন্বির।যে অনিত কখন আসবে। তাও মন মানেনা। আবার জিজ্ঞেস করবে কিনা ভাবে তন্বি।কিন্তু নাহ,এইবার শয়তান গুলা নিশ্চয় খেপাবে ওরে। তাই আর কিছু না বলে মনে মনেই অনিত এর অপেক্ষা কর তে থাকে ও.

এই ত,ফোন দিলো অনিত! বিট মনে হচ্ছে কয়েক গুন বেশি বেড়ে গেছে তন্বির। ফোন এর দিক তাকিয়ে আপন মনেই হেসে ওঠে ও।

-হেলো?

-হ্যাঁ শোনো,আমি আসছি,তোমরা কোথায়?

-আমরা লালবাগ কেল্লাতে। তুমি কোথায়?

-আমি তো অফিস থেকে বের হয়ে গেছি। আচ্ছা এক কাজ করো। তোমরা টি এস সি তে চলে আসো। ওখানেই দেখা হোক।

-ঠিক আছে।

এরপর ওরা ৪ জন টি এস সি যায়। গল্পও কর্তে থাকে। আর অনিত এর জন্যে অপেক্ষা কর্তে থাকে তন্বি।

এই তো,এসে গেছে ও। আড় চোখে দেখছে তন্বি,কোলাকুলি করছে সবগুলার সাথে দুষ্টু টা। কথা বলছে। এর পর তন্বির থেকে একটু দূরে বসে পড়লো সবার সাথে। .
গল্প করছে,হাসছে,ইশ!ওর দিকে সরাসরি থাকাকেও কেন যে লজ্জা লাগে আমার!একটা হাই পর্যন্ত বললাম না এখনো!এত লজ্জা পাচ্ছি কেন আমি!কি যে হলো আমার!

-এই দেখি দেখি,ক্যামেরা এনেছি আমি।ভিডিও করি তোদের সবগুলারে।দেখি দেখি তন্নিকেও ভিডিও করি। এইদিকে তাকাও। সুন্দর লাগছে তো তোমাকে!

লজ্জায় কান গরম হয়ে যাচ্ছে তন্বির। কি যে হলো ওর।অনিত তো স্বাভাবিক থাকতে পারছে ওকে দেখে।উফ!আমি কেন পারছিনা!

ভিডিও টা যদিও করা হয়নি,হাসাহাসি,ঠাট্টা,তামাশা তেই চাপা পড়ে যায় সব.

অনেক্ষণ ওঁরা গল্প করলো। তবে অনিত আর তন্বী কেউ কারো সাথে সরাসরি কথা বলেনি।লজ্জা পাচ্ছিল দুজনেই।আড় চোখে একটু একটু চাহুনি,এভাবেই চলছিলো।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আরো কিছুখন বসার ইচ্ছা ছিলো সবার। কিন্তু হঠাৎ বাতাস বইতে শুরু করলো,বৃষ্টি হবে বোঝা যাচ্ছে।উঠে গেলো সব।বাসায় চলে যাবে। .

তন্বি আর অনিত পাশাপাশি হাটছে।দুই জন ই চুপচাপ।সামনে কথা বলতে বলতে হাটছে ওরা।

ব্যাগ থেকে স্লিপ বের করে চুল বাঁধতে গেলো ও।অনিত বলে ওঠে,

-চুল বেধনা,খোলা থাক।এভাবেই ভাল দেখাচ্ছে তোমাকে।

-ঠিক আছে।

কিছুখন নিরবতা। .

-হাত ধরে হাতো।কি সুন্দর বাতাস হচ্ছে দেখেছো?

হাত ধরে হাটছে দুইজন। বাতাসে চুল উড়ছে তন্বির।চারপাশে লোক জনের ঘরে ফেরার তাড়া।আর সামনে শয়তান গুলা তো আছেই।একটু পর পর পিছনে তাকাচ্ছে আর দুই জন কে নিয়ে খেপাচ্ছে।"রাস্তা টা নির্জন হলে ভাল হোতো" ভাবল তন্বি।

হঠাৎ ঝম ঝম করে বৃষ্টি পরা শুরু করলো।.ছুটছে সব।কিনতু অনিত আর তন্বি নিরবিকার।ওদের ভাললাগার পরিমাণ টা যেন বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। .হাত ধরে হাটতে হাটতে অন্য দুনিয়া তে চলে গেছে দুইজন।ভিজে চুপসে গেছে।মেইন রোড এ গাড়ি চলছে,সবকিছু উপেক্ষা করেই হাটছে দুইজন।সাথে হাটছে ওদের একরাশ ভাললাগা!যার সাথে এর আগে কখনো পরিচয় ঘটেনি তন্বির..

-তুমি একটু পর পর হাত ছেড়ে দিচ্ছো তন্বি।লজ্জা লাগছে নাকি?

-কিছুটা। .

-আর ছাড়া লাগবেনা।চলো চলো।

-ওরা অনেক সামনে চলে গেছে . .

-যাক,আমরা পিছনেই থাকি।কি বলো। .

বৃষ্টি যেন বেড়েই যাচ্ছে। তন্নী আর নিজের ভেতরে নেই!ও কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে জানেনা।এই যে ঝুম বৃষ্টি তে দুই জন হাত ধরে হাটা,মাঝে মাঝে অনিত এর কাধে হাত রাখা,এগুলো কি ভুলতে পারবে তন্বি?এগুলা ভোলা যায়না!কখনই না.. .

হাটতে হাটতে ওরা এক যাত্রি ছাউনি তে এসে থামলো।এখান থেকেই বাস্ এ উঠবে তন্বি।বৃষ্টি তখনো হয়েই চলছে..অনিত ঠিক সামনে দাড়িয়ে আছে।ওর ঠোট এর কাছেই তন্বির কপাল। .

"একটু কি ছুয়ে দেবে ওর ঠোঁট দিয়ে আমার কপালে!একটু কি পরশ বোলাবে ঐ স্নিগ্ধ ঠোঁট এর উষ্ণ স্পর্শে। ."ধ্যেত্,কি যে ভাবি আমি!আপন মনেই বলে ওঠে তন্বি..

আবার হাটছে ওঁরা..চুপচাপ,হাত ধরে,পাশাপাশি।কি হচ্ছে দুনিয়ার চারপাশে।খেয়াল নেই কারো,অন্ধকার রাস্তায় বৃষ্টির পানি শরীরের প্রতিটা কোনায় কোনায় ছুয়ে গেছে।ওরা হাটছে,সব ভুলে,শুধু ভাললাগা নিয়ে।ভালবাসা নিয়ে।যেই ভালবাসা সম্পর্কে এখনও অবগতি নয় ওরা।ওরা চুপচাপ দু জনেই।কিন্তু ওদের নীরবতাই অনেক কথা বলে যাচ্ছে।ছুয়ে যাচ্ছে,পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে অসিম ভালবাসার...

ধড়মড় করে ঘুম থেকে বিছানায় উঠে বসল তন্বি।আচ্ছন্ন ভাব তা এখনো কাটেনি।আবার সপ্ন দেখলl!

শোয়া থেকে উঠে জানালার পাশে যেয়ে দাঁড়ালো তন্বী।আবছা ভোরের আকাশ দেখা যাচ্ছে।চোখ্ থেকে বোধই পানি পড়লো একফোঁটা..আবার দুসশপ্ন দেখলো!ও আর চায়না এই সপ্ন দেখতে চায়না,যার কাছে ওর চোখের পানি মুল্যহীন,যে হাজারও অনুরোধ এর পরেও চলে যায়,যে ওরে এতটা নিচে নামায়,তাকে নিয়ে তন্বী আর সপ্ন দেখতে চায়না। . .
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×