somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন উপন্যাস(১ম পর্ব)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাস্তার ফুটপাথ এর ধারে আইল্যান্ড এর উপর বসে আছে অনিত।প্রচন্ড ঠান্ডা,কুয়াশায় ঢাকা চারপাশ।রাত বোধই ১টা বাজে।ঘড়ি নেই সাথে যে সময় দেখবে।ফোন চালু করে কয়টা বাজে দেখতে ইচ্ছা করছেনা ওর।বাজুক যতো খুশি..

ঠান্ডা বাড়ছে,একটু একটু করে কাঁপছে অনিত।কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই ওর।ঠায় বসে আছে এভাবেই।সারারাত এভাবেই বসে থাকার ইচ্ছা।রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে ও.এখন আর বাসায় ফিরে যেতে ইচ্ছা করছেনা..রোজ রোজ এক ই জিনিস দেখতে কারর ই ভালো লাগেনা।অনিত ও তার ব্যাতিক্রম না। .

আজ অনিত এর বিয়ে।বিয়ে করার কোনো মন মানসিকতা ওর ছিলনা।কিন্তু ওর বাবা এক প্রকার জোর করেই বিয়ে দিচ্ছে।কার সাথে বিয়ে হচ্ছে সেটাও জানেনা।মেয়েটির চেহারাই দেখেনি অনিত।দেখবে কেন,ও তো বিয়েই করবেনা।.ওর মতো ভবঘুরে,বাউন্ডুলে ছেলে বিয়ে করে সংসারি হবে এটা ও নিজেই ভাবতে পারেনা।একটা মেয়েকে অনিত ওর সাথে জড়িয়ে সারাজীবন তার ভার বহন করা ওর পক্ষে সম্ভব না। তাই একপ্রকার জোর করেই বের হয়ে গেছে ও বাসা থেকে। .

ফুটপাথ দিয়ে একটা নেড়ি কুকুর হেটে যাচ্ছে।অনিত এখন কুকুরটার দিকে তাকিয়ে আছে।কুকুরটা যেন এই সময়ে একটা মানুষকে এভাবে একা বসে থাকতে দেখে থমকে দাঁড়ালো।আচ্ছা,কুকুরদের চেহারাতেও কি অনুভুতি প্রকাশ পায়?নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো ও।উত্তর জানেনা,জানার কথাও না..

কুকুরটা হেটে হেটে চলে যাচ্ছে..অনিত ঘাড় ঘুরিয়ে কুকুরটার চলে যাওয়া দেখছে। নির্জন রাস্তায় এই সময়টায় অনিত এর পরে এই কুকুরটাই একটা প্রানি ছিলো।এখন অনিত একা।কোথাও ও ছাড়া আর কোনো প্রানী নেই..বাসার সবাই এখন কি করছে ভাবার চেষ্টা করলও ও।,বাবা হয়ত বারান্দার এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত হাঁটাহাঁটি করছে আর রাগ এ ফেটে পড়ছে।বলছে "এই ছেলেকে আর ঘরে ঢুকতে দিবো না।এই ছেলে আমার মুখে চুনকালি মেখে পালিয়েছে,তোমারা কেউ ওর খোঁজ্‌ করবেনা"।মেয়েবাড়ির লোকেরা হয়ত ২ একটা কটু কথা শুনিয়ে চলে গেছে।বিয়ে বাড়ি থেকে মেয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা অনেক আছে,কিন্তু বিয়ের স্বয়ং বর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা সচরাচর ঘটেনা।আচ্ছা,মেয়েটা কি করছে?নিশ্চয় ওকে মনে মনে হাজারটা গাল'মন্দ করছে। .আপন মনেই হেসে উঠল অনিত। .

-অনিবাবু!

নিজের নাম শুনতে পেরে সংবিত ফিরে পেল অনিত।ওর সামনে বেলালচাচা দাড়িয়ে।বেলালচাচা ওদের বাসার মালী।ছোটবেলা থেকেই অনিত তাকে তাদের বাড়িতে দেখছে। এতবছরে চেহারার একটুও পরিবর্তন হয়নি তার।শক্তসমর্থ শরীর।গায়ে প্রচন্ড শক্তি রাখে বোঝাই যায়।ছোটবেলা বাবা যখন তার কাজে ব্যাস্ত থাকত,তখন এই বেলাল চাচাই অনিত কে দেখাশোনা করতো।সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান অনিত.বাবা ছেলেকে তেমন সময়ও দিতে পারেনা।ওর মা ওর বাবার সাথে ঝগড়া করে হঠাত করেই আত্ত হত্যা করে।অনিত তখন মাত্র ৪ বছরের শিশু


বাবা ব্যাস্ত থাকে সবসময়।বেলাল চাচাই বলতে গেলে ওকে মানুষ করেছে।লোকটার উপর অনিত এর একটা টান আছে..

-এখানে কি করো চাচা?

-বাড়ি চলো।

-তুমি ভালো করেই জানো আজ আমি বাড়ি যাবনা। তবুও বলছো কেনো?

-আমার জানা লাগবেনা। তুমি চলো।মালিক বলেছেন তুমি যেতে না চাইলে জোর করে তোমাকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে।আর তুমি ভালো মতই জানো কাজটা আমি করবো। তাই কথা বাড়িও না।

হো হো হো করে হেসে উঠলো অনিত।হাসি যেন থামছেই না।বেলাল চাচার মুখে কোনো বিকার নেই।চুপচাপ ঠায় দাড়িয়ে আছে। নির্বিকার।মাঝে মাঝে অনিত এর তাকে অনুভুতি শুন্য মনে হয়।এমন একটা মানুষ যে কিনা কখনো চমকায় না,অবাক হয়না,রোবট এর মতো চলাফেরা করে।মুখে কোনো অনুভুতি প্রকাশ পায়না.তাকে অনেকবার রাগানোর,চমকানোর সবধরনের চেষ্টা করেছে অনিত।কিনত সফলও হয়ওনি একবারও।

-মেয়েবাড়ির লোকেরা চলে গেছে?

জবাব দিলোনা চাচা।অনিত জবাব এর আর অপেক্ষা না করেই উঠে দাঁড়ালো।মনে মনে তৈরি বাসায় যেয়ে গালি শোনার।হাটা শুরু করলো।আগে আগে চাচা হেটে যাচ্ছে।এই মানুষটার সাথে অনিত কখনই তাল মিলিয়ে হাটতে পারেনা।ওর কাছে মনে হয় বেলাল চাচা যেন বাতাসে উড়ে উড়ে চলে।হাঁটার সময় কোনও শব্দ হয়না। তাই মাঝে মাঝে অনিত এর বেড়াল এর কথা মনে পড়ে যায়।বেড়াল এরকম নিসশব্দে চলাফেরা করে। তাই ছোট বেলায় অনিত বেলাল চাচার নাম দিয়েছিলো "বেড়াল চাচা". কথাটা মনে পড়ে গেলো হঠাৎ.

অনিত যে ভেবেছিল বাসায় ঢুকে তার সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশ দেখবে ভাবেনি।অনিত এর বাবা আর কাজি সাহেব সোফায় বসে কথা বলছে।পাশেই এক হাত লম্বা ঘোমটা দেয়া লাল শাড়ি পড়া এক মেয়ে বসা।একটু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে অনিত।ও ভেবেছিল মেয়েবাড়ির লোকজন চলে যাবে।কিন্তু মেয়ে এখন আছে। তবে আশে পাশে আর কাউকে দেখা যাচ্ছেনা।হয়ত পাশের ঘরে আছে।মাথার ভেতর অনেকগুলো চিন্তা এসে ভর করলো।চাচার সাথে এতসহজে আসতে রাজি হয়ে ঠিক করেনি ও।বাবা ওকে দেখে কথা থামিয়ে দিলেন।

-অনিত,এদিকে এস।

-না।

-না মানে?আমাই আসতে বলেছি এস।আর একটাও কথা না।

-আমি বিয়ে করবো না বাবা।আপনারা আর জোর করবেন না।.
কথা শেষ হউয়ার আগেই বেলাল চাচা ওর পিছনে এসে দাঁড়ালো।এক হাত দিয়ে অর ঘার ধরে ধাক্কা দিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো।হতভম্ব হয়ে গেছে অনিত।কিছুই করার থাকলো না ওর আর। . .

খাট এর উপর মেয়েটা বসে আছে।মাথা নিচু।অনিত ঘরে ঢুকে একপলক তাকালো মেয়েটার দিকে।চেহারা দেখা যাচ্ছেনা এখনো..অনিত যেয়ে কাবার্ড খুলে মদ এর বোতল বের করলো।এই একটা জিনিস অর প্রিয়।আপন।প্রচুর পরিমানে মদ খায় অনিত।কিন্তু কখনো মাতাল হয়না..সর্বোচ্চ হাত পা কাপে।কিন্তু এর বেশি কিছু হয়না ওর।

-এম্মা!আপনি মদ খান!

পেছন থেকে হঠাৎ রিনরিনে গলার কথা শুনে একটু বিরক্ত হয়ে তাকালো অনিত।মেয়েটা ঘোমটা সরিয়ে ফেলে ওর দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে।.

(চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×