somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খারাপ না

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিৎকার আর শব্দে ঘুম ভেংগে গেল রাফির।প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসল ও।পাশের রুম থেকে চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে আসছে।সবগুলা কাজিন আজ একসাথে হয়েছে।গল্প করছে,গান করছে।রাফি কিছুখন ওদের সাথে বসে থেকে উঠে এসেছে।মাথা ব্যাথা করছিলো ওর।হয়ত একটু ঘুমাতে পারলে ভালো হত।গত দুই রাত ঠিক মত ঘুম হয়নি।হবে কি করে,চারপাশে এত মানুষ,সব ওকে মৌমাছির মত ছেকে ধরেছে।.জার্মানি থেকে পরালেখা শেষ করে কিছুদিন আগে দেশে ফিরেছে ও।এরপর আর যায় কই,মামা চাচা,মামি ফুপু,মা বাপ সব উঠে পরে লেগেছে তার জন্যে পাত্রী খুজতে।রাফির এগুলা মটেও ভাললাগছেনা।এখনি বিয়ে কিসের!দেশে ফিরে একটা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানি তে যোগ দিয়েছে মাত্র ৩ মাস।এখনি বিয়ে করতে চায়নি ও।কিন্তু কেউ ওর নিষেধ শোনার পক্ষে নয়।তাই বাধ্য হয়ে মেনে নিতেই হয়েছে।

পাত্রী দেখা হয়েছে,একটা পাত্রী সবার পছন্দ হয়েছে,পাত্রীর দিকে ও ভালকরে তাকায়নি,তার আগেই বাবা মা পাত্রী কে পছন্দ করে ফেলেছে!এগুলা ভেবে মনে মনে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রাফি।ও ছেলেটা একটু খুতখুতে স্বভাবের।এভাবে হঠাত করেই বিয়ে ঠিক করে দিল সব।না জানি কেমন স্বভাব,চরিত্র মেয়েটার।ওর মন মত হবে কিনা জানেনা।মেয়েটার সাথে ও দেখা করবে ঠিক করল,ভালো মত মেয়েটাকে দেখবে।কথা বলবে,রাফি জানে খুত মেয়েটির ও পাবেই।কিন্তু নাহ,খুত পেয়ে লাভ কি,বিয়ে ত ওর এই মেয়েটিকেই করতএ হবে।আরেকটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো ও।

-কিরে,এত ঘন ঘন দীর্ঘনিশ্বাস ফেলছিস কেন?
-বিয়ে আমি এখনি করবনা আপু। তুই ত জানিস আমাকে।
-জানি বলেই ত জানতে এলাম,মেয়েটাকে আমরা সবাই পছন্দ করলাম। তোর ভাললাগছেনা কেন?পছন্দ করার মতই মেয়ে অনিমা।
-আমি জানিনা আপু।জাস্ট ভাললাগছেনা।
-আচ্ছা,মেয়েটার সাথে কথা বলবি একবার?
-কথা বলে আর কি করব।
-আহহা,বলনা একবার।যারে বিয়ে করবি তার সাথে কথা বলবিনা?নাম্বার দিচ্ছি,ফোন কর এখনি,আমি গেলাম। .

এই বলে হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হল রাফির বড় বন।

-হ্যালো?
-অনিমা?
-জি,আপনি কে?
-আমি কে সেটা এখনি বলব না।শুধু সতর্ক করতএ এই ফোন দিলাম আপনাকে।যেই ছেলের সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে,সেই ছেলেকে বিয়ে করবেন না।ছেলেটার চরিত্র ভালো না।অনেক বদনাম আছে।
-বুঝলাম।ঠিক আছে,বিয়ে করবো না আমি।আপনি যেই হওন,আপনাকে থ্যাঙ্ক ইউ,বাই। .

ফোন রেখে দিল অনিমা।ব্যাপার টা এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি রাফি।খুশিতে জোরে একটা চিৎকার দিতে ইচ্ছা করলও ওর।কিন্তু নাহ,বাসা ভর্তি মানুষ।জেনে যাবে সব। থাক,সেলিব্রেট পরে করা যাবে।গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে বাইরে গেলো ও। .

*
-এই রাফি,রাফি,ওঠ জলদি।আজকের দিনে এত বেলা করে কেউ ঘুমায়?তাড়াতাড়ি ওঠ।
-উফ মা!আজ কি এমন মহাভারত?ঘুমাতে দাও একটু।
-আজিব ছেলে তো!ওঠ বলছি।আজ তোর গায়ে হলুদ না?ভুলে গেছিস?পাত্রী পক্ষরা তোকে হলুদ লাগাতে এসে পরলো প্রায়।
-উফ যাও তো মা।আসবেনা কনো পাত্রী পক্ষ।
-কি প্রলাপ বকছিস,একটু আগে তারা ফোন দিয়ে বলল রওনা দিয়েছে সব।নে ওঠ।কনো কথা যদি শুনিস আজকাল আমার!

ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসল রাফি।ব্যাপার কি!পাত্রী পক্ষ আসছে মানে!স্বপ্ন দেখছেনা তো ও।পাত্রী কি মানা করেনি নাকি!ওকে তো বলল বিয়ে করবেনা। তাহলে,,,,

এর পরের তিনদিন কিভাবে গেল জানেনা ও।এত হৈ চৈ,মানুষ কোনো দিকেই নজর ছিলনা রাফির।কেমন জানি ঘোরলাগা অবস্থায় ছিল ও।বিয়ে কোনদিক দিয়ে হয়ে গেল জানেনা।ওর শুধু মনে হচ্ছিল,স্বাধীন জীবন এইবারের মত শেষ।এইবার শেষ হয়ে গেল। .

বিয়ের পর্ব শেষ করে যখন বাসরঘরে ঢুকলো রাফি।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে,সেই সাথে প্রচন্ড বিরক্তি..ওর নিজস্ব লাইফ এ এখন একটি অপরিচিত মেয়ে সবসময় ভাগ বসাতে আসবে।এটা মেনে নিয়ে সারাজীবন কেমনে থাকবে ও!আর মেয়েটাও বেহায়া।বিয়ে করবনা বলেও কেন করতে গেল।নাহ,এগুলা যতো ভাববে ততই মেজাজ খারাপ হবে ওর।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেঁড়ে সামনে তাকাল রাফি।মেয়েটা বসে আছে খাট এর উপরে।ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখার রেওয়াজ আজকাল আর নেই।মেয়েটি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হল যেন হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করছে ওকে দেখে।রাফি ভাবলো,আচ্ছা বেহায়া তো মেয়েটা!ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে,আবার মিটি মিটি হাসছে।লজ্জা শরম কি নাই নাকি ।ওর নিজেরই তো মেয়েটির দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে লজ্জা লাগছে।

-এভাবে কুম্ভকর্ণের মত দাড়িয়ে আছেন কেন?বসুন। .

কথাটা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকাল রাফি,ওর নিজের রুমে ওকে বসার আদেশ দিচ্ছে মেয়েটা!মনে হচ্ছে যে এটা ওর না,মেয়েটির রুম।ও এখানে একজন মেহমান।বিয়ের প্রথম রাত থেকেই মনে হচ্ছে ওর সবকিছুর উপর কব্জা করা শুরু করে দিয়েছে এই মেয়ে। . .

রাফি কে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে আবার মিটি মিটি হাসা শুরু করল অনিমা..হাসি চেপে রাখতে এবার রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে তার..

-তুমি এভাবে হাসছো কেন?
-আপনার চেহারার অবস্থা দেখে হাসছি।
-কেন?আমার চেহারায় কি হয়েছে?
-কিছুনা।আপনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে আপনাকে কেউ বাসর ঘরে না,জ্বলন্ত চুলার ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছে।

বলেই খিল খিল করে হাসতে শুরু করল অনিমা।রাগ লাগছে রাফির।কি বলবে ভেবে ফেলনা.. টেবিল এর উপর রাখা পানির গ্লাস থেকে পানি খেলো ও।

-আপনি এখানে এসে বসুন।আমি সরে বসছি।
-না ঠিক আছে।লাগবেনা। .
-আচ্ছা,তাহলে দাড়িয়ে থাকেন।

ভ্রু কুচকে অনিমার দিকে তাকাল রাফি।সারাদিনের ক্লান্তি এখন জেকে বসেছে পুরো শরীরে।খাট এর এক কোনায় যেয়ে বসল ও ।

-আমাকে ফোন দিয়ে নিজেই নিজের বদনাম করছিলেন কেন বলেন তো?

অবাক হয়ে তাকাল রাফি.জানল কি করে মেয়েটা!

-আ .আ .আমিই ফোন দিয়েছিলাম তুমি জানলে কিকরে?
-আপনি একটা মহাগাধা।আপনার নাম্বার সেভ ছিল আমার কাছে।গাধা না হলে কি নিজের নাম্বার থেকেই ফোন করে এই কথা বলতেন?

বলেই হাসা শুরু করল অনিমা।কট্মট করে মেয়েটির দিকে তাকাল রাফি।

-গাধা বল্লাম বলে রাগ করলেন না তো?
-নাহ।
-হুম,করার কথাও না।সবার কাছ থেকে গাধা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।

আবার হাসি।রাফি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা এত হাসে কেন!পাগল টাগল নয়ত!

-আমাকে পাগল ভাবছেন?এখন আর ভেবে লাভ নেই।কারন এখন আমি পাগল আই মিন পাগলি থেকে একটা গাধার বৌ তে পরিনত হয়ে গেছি।

এবার আর রাগ করে থাকতে পারলনা রাফিঁ।নিজেয় হেসে দিল।হাসতে হাসত্র ভেতরের রাগ অনেকটাই কমে গেল ওর।

-দেখলেন তো,আর রাগ করে থাকতে পারলেন না।আমার উপর কেউ ই রাগ করে থাকতে পারেনা বেশিখন।কারন আমি খুব হাসাতে পারি..
-তাই নাকি?বুঝলাম,এবার বলতো,আমি নিজে না হয়ে আর কেউ তোমাকে ফোন দিয়ে এই কথা বললে তখন কি রাজি হতে বিয়েতে?
-হু হতাম।কারন এক টা অপরিচিত মানুষ কে বিলিচ করার চাইতে মটামুটি পরিচিত মানুষ কে বিলিভ করাটা বোধয় বেশি ঠিক।কারন তখন তো আপনাকে চিনি অনেকটাই। .গাধার বৌ হতে আপত্তি আমার আগে থেকেই ছিল না।

হাসতে লাগলো রাফি।কি ব্যাপার!ভেতরে ভেতরে দুর্বল হয়া শুরু করল নাকি ও।প্র
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×