বেসিনে মুখ ধুয়ে কিছুখন সামনের আয়নার দিক এ তাকিয়ে থাকলো নিশা।জোরে জোরে নিশ্বাস পড়ছে।হাত পা কাঁপছে ওর।নিজের চেহারার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আয়নার ভেতরের এই মানুষটি যে ও নিজে এটা আর অর আর ধর্তব্যে নেই।পুরো দুনিয়াটা যেন অন্ধকার হয়ে আসছে ওর।এখন কি করবে,কোথায় যাবে,কাকে কি বলবে,কার সাথে শেয়ার করবে!কিছুই বুঝতে পারছেনা নিশা। .মনে হল পৃথিবীটা যেন দুলে উঠল.
-হ্যালো,আবির?
-হ্যাঁ বল।
-আজ আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে?
-ওকে,কখন?
-বিকেলে।ওইখানে চলে আইসো।রাখলাম
ফোন নামিয়ে রাখলো নিশা।আবির কে কথাটা কিভাবে বলবে বুঝতে পারছেনা ।কিভাবে শুরু করবে।আবির ও বা কি ভাববে!কিন্তু আবির ছাড়া এখন ওর আশে পাশে এমন কেউ নেই,যার সাথে এগুলো ও বলতে পারে।এই ব্যাপারটার সাথে আবির ই জড়িত। .কিন্তু নার্ভাস লাগছে কেন আমার!নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করলো নিশা।
একটা রেস্টুরেন্ট এ সামনা সামনি বসে আছে দুই জন।আবির খেয়াল করলো নিশা কিছুই খাচ্ছেনা।চামচ দিয়ে খাবার কেবল নাড়াচাড়া করছে।নিশার মুখটাও আজ বিষন্ন।
ওর হাতটা নিজের হাতের ভেতর নিয়ে আবির বলছে
-কি হয়েছে নিশু?আমাকে বল প্লিজ।
-আমাকে এখন বিয়ে কর্তে পারবে?
-হঠাৎ এখুনি বিয়ের কথা বলছো যে?বাসায় কোন প্রব্লেম হয়েছে?
-নাহ,কিন্তু এছাড়া আর উপায় নেই।
-কি হয়েছে খুলে বলো।
-আবির,আমি প্রেগনেন্ট!
স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো আবির।কি করবে ,কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা ও।
এটা কিভাবে, . .আমরা তো। ..
-চল বিয়ে করি আবির।
-এখন কিভাবে বিয়ে করবো?আমি এখনো স্টুডেন্ট।রোজগার করিনা।এখন বিয়ে করলে তোমাকে খাওয়াবো কি?আর যে এখনো আসেনি তাকে খাওয়াবো কি?
-আমি কিছু জানিনা আবির।আমাদের এখুনি বিয়ে কর্তে হবে।এছাড়া তো আর উপায় নেই।
-নিশা প্লিজ।ইমোশনাল না হয়ে একটু বাস্তব টা ভাবো।আমার নিজের পায়ে দাঁড়াতে আর মিনিমাম ৩ বছর লাগবে।এরপর আমরা বিয়ে করবো।আমি কথা দিলাম।.
***
বাসায় এসে চুপচাপ শুয়ে পড়লো নিশা।মনটা বিষন্ন হয়ে আছে।পেট এ হাল্কা ব্যাথা।মা এসে দরোজা ধরে দাঁড়ালো
-কিরে এই অবেলায় এসে শুয়ে পড়লি যে?
-এম্নি মা,তুমি যাও।
-কিছু খাবি?
-না,ভাললাগছেনা। তুমি যাও।
নিশার মা চলে গেলে নিশা বালিশে মুখ গুজে শুয়ে থাকলো।আজ বিকেলে ও আর আবির যেয়ে এবরশন করিয়ে আসছে একটা হসপিটাল থেকে।দুঃখ,কষ্ট,হতাশায় ছেয়ে আছে মন।আবির কে অনেক বোঝাতে চেষ্টা করেছিলো ও।কিন্তু আবিরের কথাগুলো ও যুক্তিহীন ছিলো না।আসলেই উপায় ছিলো না আর।৪ বছর ধরে ওদের সম্পর্ক।দুই জন ই দুই জন কে প্রচন্ড ভালোবাসে।আবিরের জন্যে আর ৩ বছর অপেক্ষা কি সে করতে পারবেনা?অবশ্যই পারবে।পারতে হবে। .কিন্তু ভেতরে ভেতরে খুব ভেঙ্গে পরেছে নিশা।একটা জীবন কে নিজ হাতে খুন করে আসলো আজ।সে চায়নি এমন কিছু হোক। তবুও উপায় ছিলো না।হঠাৎ ডুক্রে কেদে উঠলো নিশা।
পথের ধারে ইট এর উপর চুপচাপ বসে আছে আবির।ভেতর থেকে একটা তীব্র পাপবোধ ঘিরে ধরেছে ওকে।নিশা কে ভালোবাসে ও।হ্যাঁ,প্রচন্ড ভালোবাসে।আজ ওকে কষ্ট দিয়ে নিজেও খুব শান্তিতে নেই।এতদিন ভবঘুরে ছিল
।কিন্তু,আজ থেকে আর না,,,,,এইবার নিজেকে গুছাতে হবে।নিজের পায়ে দাড়াতে হবে।নিশাকে আর কষ্ট দিতে পারবেনা ও,,,
*****
দুই চোেখ পানি নিয়ে হাটছে আবির।নিশা ধোকা দিয়েছে।কিভাবে পারল এটা নিশা!আজ গিয়েছিলু নিশাকে বিয়ের কথা বলতে।কিন্তু নিশা ফিরিয়ে দেয়।সেই ঘটনার পরে দুইটি বছর ভালই তো ছিল ওরা।তাহলে আজ কেন চলে গেল নিশা!রাগের চোটে দেয়াল এ ঘুসি মারল আবির।
****
প্রাই ছয় মাস পর নিশার এক টি চিঠি পেল আবির।কাঁপা কাঁপা হাত এ চিঠি ধরে দাড়িয়ে আছে ও।.
প্রিয় ....
কেমন আছো?তোমার আদরের ডাকনাম টি আজ আর ডাকলাম না।এখন তো ডাকার অধিকার শেষ।জানি তুমি ভালো নেই।আমার উপরে খুব রাগ জমে আছে তাইনা?আমি তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। তোমার সব সপ্ন কে ভেঙ্গে দিয়েছি।কতো স্বপ্নই তো দেখেছিলে আমাকে নিয়ে।এই আমাকে প্রচন্ড ভালবেসেছিলে একটা সময়।এখনও কি বাসো?নাহ্,একটা বিশ্বাসঘাতক কে ভালোবাসা যায়না।যে তোমার হাত ধরে তোমাকে ওয়াদা দিয়েছিল কখনই তোমার হাত ছেড়ে যাবেনা,সবসময় তোমার পাশে থাকবে,সেই নিষ্ঠুর মেয়েটা আজ সহজেই অন্যের হয়ে গেছে।.কিন্তু জানো,মেয়েটা অন্যের হাত ধরতে চায়নি।সে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেছে নিজের সাথে।জানো?যখন বাবা ,মা এসে সামনে দাড়িয়েছে,তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আর যুদ্ধ কর্তে পারেনি।জান,পৃথিবীর একপাশে বাবা মা,আরেকপাশে শুধু তুমি ছিলে।আমাকে যেকোন একটি অপশন বেছে নিতে হবে তখন।জানি,তুমি ভেবেছো তোমাকে আমি কখনই ভালোবাসিনি।হয়ত খেলেছি,হয়ত আমার লোভ।আরো হয়ত অনেক কিছু,অনেক কিছু ভাবো তুমি।কারন আমি তোমাকে বেছে নেইনি যে।খুব কষ্ট পেয়েছো তুমি জানি।কিন্তু কি করব বলো,যারা আমাকে নিজের সপ্ন,সাধ বিসর্জন দিয়ে অতি কষ্টে মানুষ করেছে,তাদের কষ্ট দিতে পারলাম না।তাই আমাকে আমার মা বাবার অপশন টাই বেছে নিতে হয়েছে।আমি তোমার সাথে বিষাসঘাতকতা করিনি।আমি ছিলাম নিরুপায়। .
জানো,আমি প্রতিরাতে নিরবে ধরষিত হই।আমার স্বামী নামের এই মানুষটা যখন আমাকে টেনে হিচরে শোষন করে,আমি তখন নিরবে কাঁদি।তাকে দেখতে দেইনা।গলা দিয়ে উঠে আসা চিৎকারটা আটকে যায় গলাতেই।আমার কনো অনুভুতি হয়না জানো?আমি নিরবে আর্তনাদ করি।আমার নিজের শরীর কে তখন আর আমার নিজের মনে হয়না।এখন এই শরীরটা আমার না।মনটা আমার না।মন কবেই মরে গেছে। .শরীর আর মনের সাথে একে অপরের কি যে গভির সম্পর্ক আছে,তা আমি খুব বুঝতে পাই।
জানো,যখন তোমার আর আমার ভালবাসার নিদর্শন আমার দেহে এসেছিল,আমি এক ই সাথে ভয়ে এবং খুশিতে আত্তহারা হয়ে পড়েছিলাম।সে আমার দেহে খুব অল্প কিছুখন ছিলো,কিন্তু সেই অল্প সময়ে আমাকে সে অনেক বড় সুখানুভুতি দিয়ে গেছে।আমার অসহায়ত্ত তাকে এই পৃথিবীর বুকে আনতে দেয়নি।
আমাকে তুমি আজ হয়ত আর ভালবাসো না।আমি তোমাকে আমার ভালোবাসা দেখাতে পারিনি।এই সমাজ খুব নিষ্ঠুর।এই সমাজে মেয়েরা প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হয়,কেউ নিরবে,কেউ নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে,কেউ শরীরে!,কেউ মনে..আমার সামনে দুইটা অপশন ছিলো।কিন্তু দুইটাই বেছে নেয়ার পথ ছিলো না।আমি মা বাবাকে কষ্ট দিয়ে তোমাকে পেতে চাইনি।জানো তো,কাউকে কষ্ট দিয়ে কিছু হাসিল করা যায়না।জানি তোমার খুব অভিমান হয় আমার উপর।খুব খোভ,কিন্তু তবু বলি,আমি নিরুপায় ছিলাম।আমার নিজের মনকে মেরে ফেলতে হয়েছে।নিজেকে প্রতিদিন নিরব ধর্সিতা বানিয়ে সমাজের মুখ রক্ষা করতে হয়েছে।এবং করতে হবে। .হয়ত এভাবেই চলবে বাকিটা সময়। .
ইতি . .