জাতি আজ এক ক্রান্তিলগ্নে দাড়িয়ে। ব্লগাররা ইংরেজি নতুন বছরের শুরুতে দুই ভাগে বিভক্ত। এই বিভক্তির কারন জ্বীন-পরীতে বিশ্বাস ও অবিশ্বাস। একদল শুধু যে জ্বীন-পরী চোখের দেখায় দেখেছেন তা নয়, তাদের কেউ কেউ জ্বীনের বাদশা বা পরী-শেহজাদির দেওয়া মিষ্টি ফল পর্যন্ত খেয়েছেন। অন্যদিকে আরেকদল বহু সাধনাতেও কোন জ্বীন বা পরীর সান্নিধ্য লাভ করেন নি। দ্বিতীয় এই দলটিকে ঈর্ষাকাতর বলে মনে হচ্ছে। এত বয়স হল তবু কেন তাদের জ্বীন-পরী ফল খেতে দিলেন না? তাদের মনঃকষ্ট দেখে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "কেউ কথা রাখেনি" কবিতাটি মনে পরে। " নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় পরীস্থানের ফল খাওয়াবে (তিন প্রহরের বিল দেখাবে)?"
ব্লগ-আকাশে যখন এমন দুর্যোগের ঘনঘটা তখন মনে হলো, এই যে আমাদের চারপাশে এত জ্বীন-পরী ঘুরে বেড়াচ্ছে, এদের আমরা কোন কাজেই লাগাতে পারলাম না! শুধু মনে মনে বিশ্বাস করে গেলাম মাত্র! এই অব্যবহৃত শ্রমশক্তি দেশের কাজে না লেগে বিশ্বাসের বোঝা হয়ে রইলো। জাতি হিসেবে এত বড় লজ্জা কোথায় রাখি?
আমরা যদি আরেকটু সচেতন হতাম তাহলে জ্বীন-পরীদের কত ভাবেই না কাজে লাগাতে পারতাম। জ্বীন-ভাইদের এবং পরী-বোনদের শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা একটি নয়, দশটি নয়, একশোটি পদ্মাসেতু তৈরী করে ফেলতে পারতাম। শুধুমাত্র টেকনিক্যাল নলেজের অভাবে আমরা জ্বীন-পরীদের শ্রমশক্তিকে কাজে লাগাতে পারলাম না। এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায়না।
একথা সত্য যে আমরা মানি আর নাই মানি জ্বীন-পরীরা কিন্তু আমাদের চোখের আড়ালে তাদের কাজে মহিমার ছাপ রেখে যাচ্ছে। যেমন ধরুন সম্প্রতি একজন ব্লগার প্রশ্ন করেছেন দেশের রিজার্ভ কিভাবে ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২৮ বিলিয়নে চলে এসেছে? তার এই কঠিন প্রশ্নের উত্তর কিন্তু সোজা। দেশের মন্ত্রী-আমলা-রাজনীতিবিদ থেকে সবাই যেখানে তাদের কষ্টার্জিত ডলার বিদেশ থেকে দেশে নিয়ে আসছেন, এমন কী প্রয়োজনে তারা বিদেশে তাদের বাড়ি-ঘর সহায়-সম্পদ বেচে দিয়ে দেশে ডলার নিয়ে আসছেন, তারপরও রিজার্ভ কমে কিভাবে? এটা যে দুষ্ট জ্বীনদের কাজ, বিজ্ঞ ব্যাক্তি মাত্রই সেটা উপলব্ধি করে থাকবেন।
আর কয়দিন পরে দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অথচ তার ঠিক আগে আগে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) নামের একটা ভুয়া প্রতিষ্ঠান প্রেস ব্রিফিং করে ঘোষণা দিলো যে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে ব্যাংক থেকে নাকি ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। মাত্র ৯২ হাজার কোটি টাকা! এত টাকা কী মানুষের পক্ষে চুরি করা সম্ভব? কার এতবড় তোষক আছে যে এত টাকা লুকিয়ে রাখবে? এখানেও কিন্তু দুষ্ট জ্বীনদের কারসাজি।
সব কাজে শুধু যে দুষ্ট জ্বীনদের দুষ্টামি, মহৎপ্রাণ জ্বীনরা যে দিবা নিদ্রায় ব্যস্ত তা কিন্তু নয়। যেমন ধরুন ইসলামী ব্যাংকের ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনাটি। এত বড় ঋণ জালিয়াতির পরেও নাকি ইসলামী ব্যাংক বছরে বছরে মুনাফা করছে এবং তাদের বাৎসরিক অশোধ্য বা কু-ঋণ (Bad debt) নাকি ৫% এরও কম। এই ধরনের হিসাব নিকাশ কোন মানুষের পক্ষে করা কঠিন হলেও কিন্তু এ ধরনের কাজে আপনি হিসাব বিশেষজ্ঞ এবং গণিতজ্ঞ জ্বীন নিয়োগ দিতে পারেন।
জ্বীন-পরীদের অব্যবহৃত শ্রমশক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে দেশ অচিরেই প্রভূত উন্নতি করবে। যেমন ধরুন অনেকেই জ্বীন-পরীদের দেওয়া ফলমূলের খুব প্রশংসা করেন। জ্বীনস্থান এবং পরীস্থান উভয় জায়গা থেকে বিনা খরচে আমরা ফলমূল আমদানী করতে পারি। এই কাজে জ্বীন-পরীদের পরিবহনের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। আবার জমি চাষের ঝামেলা নেই বলে উৎপাদন খরচ একেবারে শুন্য। দেশের চাহিদা পূরণ হয়ে গেলে এই ফলমূল বিদেশে রপ্তানী করা যেতে পারে।
আমরা জানি যে অনেক জ্বীন-পরীরা মানুষের রূপ ধরে বিভিন্ন মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছেন। জ্বীন-পরীদের উপর শীঘ্রই টিউশন ফি ধার্য করা জরুরী। জ্বীনদের দেশে ডলারের প্রচলন যদি নাও থাকে, তারা স্বর্ণমূদ্রায় তাদের টিউশন ফি পরিশোধ করতে পারবে বলে আশা করা যায়। তবে মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি জ্বীন-পরীদের কুস্তি-বিদ্যা এবং মল্ল-বিদ্যায় পারদর্শী করতে পারলে রাজস্ব আদায় বেশি হবে।
অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জ্বীন-পরীদের শ্রমশক্তিকে বিদেশে কাজে লাগাতে হবে। যেমন ধরা যাক বৈদেশিক চুক্তির আলোচনায় শক্ত সামর্থ দেখে জ্বীন-পরীদের রাখা যেতে পারে। যেহেতু তারা অদৃশ্য তাই বিদেশি প্রতিনিধি তাদের দেখবেন না। যেসব দেশ আমাদের সাথে দাদাগিরি করে তাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই জ্বীন-পরীরা গোপনে উপস্থিত থাকবে। যখনই কোন দেশের প্রতিনিধি আমাদের দেশের প্রতিনিধির সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করবে তখন এই জ্বীন-পরীর কাজ হবে তাদের কান মলে দেওয়া।
বিশেষ করে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে খুব দশাসই দেখে একজন জ্বীনকে নিয়োগ দিতে হবে। কুস্তি-বিদ্যায় এই জ্বীন বিশেষ পারদর্শী হলে ভালো হয়। যদিও বাংলাদেশ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নয়, কিন্তু জ্বীন অশরীরী বলে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও কোন সমস্যা হবে না। যখনই কোন যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে বিশ্ব মোড়ল দেশের প্রতিনিধি ভেটো দেবার জন্য হাত ওঠাবে, আমাদের এই জ্বীনের কাজ হবে ঐ প্রতিনিধির হাত টেনে নামিয়ে, গালে কষে একটি চপেটাঘাত করা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৫:৩৬