
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যে কত শক্তিশালী, আর কীভাবে যে এগুলো আমাদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে খেলা করে, ট্রাম্প-মামদানি বৈঠক তার বড় উদাহরণ।
নিউ ইয়র্ক মেয়র নির্বাচনের দুদিন আগেও ট্রাম্প মামদানিকে উন্মাদ ও কমিউনিস্ট বলে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল করে তাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক রাখা হবে এবং ঘাড় ধরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে শাসিয়েছেন। এমনকি মেয়র নির্বাচনে যেসকল ইহুদি ভোটার মামদানিকে সমর্থন দিয়েছেন, তাদেরকেও তিনি নির্বোধ বলে উপহাস করেছেন। কাজেই সবাই যখন ধারণা করছিল যে, মামদানির সাথে আজকের বৈঠকে হয়তো সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটবে,তখন বৈঠক শেষ করে, ট্রাম্প মানুষের মনের টানটান উদ্বেগের জায়গায় আচমকাই প্রশান্তির সতেজ হাওয়া ছড়িয়ে দিলেন।
সাংবাদিকদের ট্রাম্প জানালেন, আসাধারন ছেলে মামদানির সাথে বহু বিষয়ে তাঁর মতের মিল রয়েছে, যা তিনি ভাবতেও পারেননি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সামর্থ্যের মধ্যে রাখা - ইতাদি সব বিষয়ে নাকি দুজনের চিন্তা খুব কাছাকাছি। একজন সাংবাদিক মামদানিকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি তো কদিন আগেও ট্রাম্পকে ফ্যাসিস্ট বলেছেন, এখনও কি তা-ই মনে করেন? বিব্রত মামদানি উত্তরে বলতে শুরু করলেন, না, মানে আমি…; ট্রাম্প তার হাত চাপড়ে বললেন, ঠিক আছে, ঠিক আছে, তুমি হ্যাঁ বলতে পারো। কারণ ব্যাখ্যা করার চেয়ে হ্যাঁ বলাটা অনেক সহজ।
এই শান্তির পায়রা উড়িয়ে এবং মামদানিকে হাত চাপড়ে দিয়ে ট্রাম্প আসলে কোন ঘটনাগুলো আড়াল করলেন, সেটাই প্রশ্ন!
সবচেয়ে বড় খবর হল, দীর্ঘদিন আটকে থাকা এপস্টিন ফাইল প্রকাশের অনুমোদন দিয়েছে কংগ্রেস। সেই ইস্যুতে ট্রাম্পের সঙ্গে সংঘাতের পর রিপাবলিকান এমপি মার্জোরি টেলর গ্রিন বিষাক্ত রাজনীতির কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। গত সপ্তাহ পর্যন্ত আমেরিকা ভেনেজুয়েলার ২২টি জেলে-নৌকায় হামলা চালিয়ে ৮৩ জন মানুষকে হত্যা করেছে। মার্কিন পক্ষ বলছে নৌকাগুলো মাদক পাচারে যুক্ত। কিন্তু অনেকে মনে করেন নিহতদের অধিকাংশই সাধারণ জেলে, যা আন্তর্জাতিক আইনের বড় লঙ্ঘন। কয়েকজন ডেমোক্র্যাট এমপি যখন প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, সামরিক বাহিনী কি ট্রাম্পের সব আদেশ মানতে বাধ্য, জবাবে ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তোলেন এবং সর্বোচ্চ শাস্তির হুমকি দেন। এরপর আছে হোয়াইট হাউসে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে অভ্যর্থনা এবং সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে এই নৃশংস হত্যাকারীর পক্ষে সাফাই গাওয়া।
যে ট্রাম্প শুরু থেকেই কর্পোরেট মুনাফালোভীদের পক্ষে কথা বলেছেন আর আমেরিকার দেওয়া অস্ত্রগুলো ইসরায়েল খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছে বলে গণহত্যাকারী শক্তিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন, আজ তিনিই মুহূর্তে রূপ নিলেন মামদানির গুণমুগ্ধ, স্নেহশীল পিতার চরিত্রে। নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া শান্তির পায়রাগুলো দেখে আমাদের মনও যেন হঠাৎ শান্ত হয়ে গেল। ভুলে গেলাম যে আপাত নগণ্য এই বৈঠকের ঘটনাটিকে কাশফুলের নরম ছোঁয়ায় এমনভাবে সাজানো হলো যে এর আড়ালে বহু ঘটনাই চাপা পড়ে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


