somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ঈদের আনন্দ

২৭ শে আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-ভাইজান ভাইজান, ঈদের তো আর তিনদিন আছে, আমারে কাপড় কিন্না দিবা না? কাল্লু মিয়া ফুটপাতের ঐ পশ্চিম পাশে একটা কাপড়ের দোকান দিছে। ঐখানে লাল একটা জামা দেখছি। দামও এতো বেশি না।কিন্না দিবা না ভাইজান?

-দিবো দিবো, তোর এই ভাই থাকতে এতো টেনশন লইছ না। এই ঈদে আমি ঐ লাল জামাটাই তোরে কিন্না দিমু।

বাপ-মা না থাকা ছোটবোনটাকে সান্ত্বনা দিলো সবির। ১০বছর বয়স সবিরের বোনের। রেলস্টেশনের দক্ষিণপাড়া নামক বস্তিতে থাকে ওরা।সবিরের বাপ মা কেউই নেই। বাপ আরেক জায়গায় বিয়া করে চলে গেছে। সেই দুঃখে মাও ট্রেনে নিচে ঝাঁপ দিয়া জীবন দিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকেই একা ওরা। ১৮ বছরের সবিরের উপরই ওর বোনের দেখাশুনা করার দায়িত্ব চলে আসে। ভালোই চলছিল ওদের। কিন্তু সেদিন যে রেস্টুরেন্টটায় সবির কাজ করতো সেখানে মিথ্যা চুরির দায়ে তাকে ফাসিয়ে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে। জরিমানাস্বরূপ তার ঐ মাসের বেতনটা কেটে নিয়েছে মালিক। ঈদের একটা সময় ভেবেছিল বেতনসহ বোনাস পেয়ে ভালো করেই ঈদটা পার করবে দু ভাইবোন মিলে। কিন্তু তা আর হলো না।

দুদিন থেকে চাকরী খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গিয়েছে কিন্তু একটাও চাকরীর দেখা এখন পর্যন্ত পায়নি। ওর জন্য বা নাই কিছু করলো কিন্তু বোনটার জন্য তো কিছু করতে হবে, অবুঝ শিশু ও, ঈদে কিছু না কিনে দিলে মনটাই খারাপ হয়ে যাবে তার।

বস্তি থেকে বেড়িয়ে এলো সবির। হেঁটে হেঁটে ওভারব্রিজটার ওপর উঠলো। পকেট থেকে একটা শেখ হোয়াইট সিগারেট বের করে ধরালো। ঈদের দিন বস্তির সব শিশুরা আনন্দ উৎসবে মত্ত থাকবে আর তার বোন আনন্দ করবে না। এটা সে হতে দিবে না। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে রাতে যা প্ল্যান করছিল তাই করার সিদ্ধান্ত নিল সে। চোর না হয়েও চুরির দায় বহন করে শাস্তি হয়েছে তার, এবার তাহলে সত্যি সত্যি চুরি করবে সে। কিভাবে চুরি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল তবু সে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলো। বোনটার মুখে হাসি ফোটাতে চুরি করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথও তার সামনে নেই।

রাতের নিস্তব্দতায় বোনকে ঘুমে রেখে বাইরে দিকে তালা দিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে এলো সবির। ওভারব্রিজটা পার হয়েই ঐ পাশে চৌধুরিপাড়া। ঐ এলাকাটায় চুরি করার জন্য সুবিধা তার। বস্তির কাছাকাছি হওয়ায় তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ঘরেও চলে আসতে পারবে।

চৌধুরিপাড়ায় ঢুকে সহজে চুরি করার জন্য ঘর খুঁজতে লাগলো সে। কমবেশি প্রায় সব কয়টা ঘরেই অনেক বেশি সিকিউরিটি আছে।কোনটাতেই ঢুকাটা এতো সহজ হবে না তার জন্য।
সামনের দিকটা ভালো করে দেখে চৌধুরিপাড়ার শেষ দিকে চলে এলো সবির। শেষ দিকে এসে পুরনো একটা টিনশেডের বাড়ি দেখতে পেল। সামনের দিকটা অন্ধকার। বাড়িতে ঢুকার মুখে মিটমিট করে লাল একটা বাতি জ্বলছে। চারদিকে দেয়াল ঘেরা। গেটটা তালা দেয়া। গেটের সামনেও কাউকে দেখা গেল না। স্থির করে ফেলল এই ঘরেই চুরি করবে সে। আস্তে আস্তে দেয়ালটা টপকে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল। টিনসেডের ঘরের কাছাকাছি এসে বাইরে থেকে পুরো ঘরটা একবার রাউন্ড মেরে ঘুরতে লাগলো। ঘরের জানালাগুলো কাঠের। পুরনো কাঠ হওয়ার কারনে পচে গেছে অনেক জায়গা। পচে যাওয়া থেকে সৃষ্ট ফাঁক ফোঁকরগুলোতে উপরি কাঠ দিয়ে পেরেক মেরে রাখা হয়েছে। সব কয়টা জানালাই লাগানো দেখলো। জানালাগুলোর পাশ দিয়ে হাঁটার সময় একটা জানালায় লাল রঙের মিটমিট আলো আসছে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। খেয়াল করে দেখলো জানালাটার কাঠ পচে যাওয়ার কারনে উপরি কাঠ মেরে রাখা হয়েছে। সেই কাঠ কিছুটা ফাঁক হয়ে যাওয়ার কারনে ভিতরের আলোটা আসছে। এক চোখ বন্ধ করে ফাঁকটা দিয়ে ভিতরটা দেখতে পেল সে।
ভিতরে একটা লাল রঙের বাতি জ্বলছে। ২ টা কম বয়সী মেয়েকে দেখলো একপাশের টেবিলে বসে আছে। টেবিলে পাশেই বিছানায় আর ২জনকে শুয়ে থাকতে দেখলো। তারা কেউই কোন কথা বলছে না। দেখে মনে হল সবাই যেন কিছু না কিছু চিন্তায় ব্যাস্ত। খানিকটা অবাক হল সবির।

হঠাৎ ভিতর থেকে দরজা খুলে একটা বড়সর দানবের মতো লোক রুমে প্রবেশ করলো।
রুমে এসেই খানিকটা ধমকের সুরে ২ই মেয়েকে বলল- তোরা এখনো ঘুমাস নাই ? কালকে অনেক দূর যেতে হবে, তাড়াতাড়ি ঘুমা।

ঠিক তখনই বিছানা থেকে প্রায় ওর বোনের বয়সী একটা মেয়েকে উঠতে দেখলো। শুয়ে থাকার জন্য ভালো করে আগে লক্ষ্য করেনি সে। ওর বোনের মতোই মায়াবী চেহারা আর নিস্পাপ লাগলো মেয়েটাকে দেখে।
মেয়েটা কান্নাভেজা কন্ঠে লোকটাকে বলল- আমি বাড়ি যাইতে চাই চাচা, আমাকে বাড়িতে পাঠাইয়া দেন। আমি মায়ের কাছে যামু।

লোকটা ধমক দিয়ে কিছু অশ্লীল কথা বলে রুম থেকে চলে গেল। নিস্পাপ মেয়েটা অনবরত কাঁদতেই ছিল। সবিরের আর বোঝার কিছু বাকি রইল না। তাড়াতাড়ি বাড়িটা থেকে বেড়িয়ে সোজা পুলিশ ষ্টেশনের দিকে রওনা দিল ।
_____________________________
আজ ঈদের দিন। চারদিকে ঈদের খুশির বন্যা বয়ে গেছে। সর্বত্র ঈদের আনন্দ বিরাজমান। সবিরদের ঘরেও ঈদের আনন্দ এসেছে। ওর বোন লাল রঙের ঐ জামাটা পরেছে। অনেক খুশি সে। বস্তির ছেলেমেয়েদের সাথে আনন্দে খেলা করছে সে। ঐ দিনের পর সবিরের খুশি আবার ফিরে এসেছে। তাকে আর চুরি করতে হয়নি। আর হবেও না।
পুলিশ ঐ দিন ১৩ জন মেয়েকে নারী পাচারকারীদের কবল থেকে উদ্ধার করেছে। জাতীয় পত্রিকা গুলোতে ছাপা হয়ছিল সবিরের বীরত্বের কাহিনি। তার রেস্টুরেন্টের মালিক তার এই কাহিনী দেখে তাকে আবার কাজে ফিরিয়ে নিয়েছে। ঈদ বোনাসসহ তাকে এক মাসের অগ্রিম বেতনটাও দিয়ে দিয়েছে।

সবির ওভারব্রিজটার উপরে দাঁড়িয়ে তার বোনের আনন্দ দেখছিল। পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরাল সে। ঐ কান্নাভেজা মেয়েটার নিস্পাপ চেহারাটি মুহূর্তের জন্য মনে হল তার। সবার এই আনন্দের বানের জোয়ারে ঐ মেয়েটিও মনে হয় ঈদের আনন্দে ভাসছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৩
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×