somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমুসলিমের ইসলাম বিদ্বেষ এবং ইসলামের উদারতা

১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলাম কিভাবে সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছিল অমুসলিমদের সাথে এর সম্পর্কে লিখতে গেলে কালি শেষ হয়ে যাবে, পোষ্টে পোষ্টে গোটা সামু ভেসে যাবে কিন্তু কথা রয়ে যাবে। ইসলাম একদিকে স্বীয় মুসলিম গোত্র দ্বারা কটূক্তির স্বীকার হচ্ছে অন্যদিকে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে অমুসলিমরাও প্রতিনিয়ত বিদ্রূপ করে যাচ্ছে ইসলামকে। অমুসলিম ভাইদের ইসলাম বিদ্বেষের কারণ তারা কিছু নামধারী মুসলমানদের দেখে ভাবে ইসলাম তাদের মুল্য দেয় না, ইসলাম তাদের অস্বীকার করে, ইসলাম তাদের ন্যায্য বিচার করে না। মুসলমানরা খারাপ কাজ করছে তাহলে তাদের ধর্ম কি শিক্ষা দেয়।
অমুসলিম ভাইয়েরা কোন ব্যক্তি মুসলমানকে দেখে যদি আপনি ইসলামকে যাচাই করতে যান তাহলে আপনি হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় গাধা। কিছু অজ্ঞ মুসলমানরা আপনাদের বিশ্বাসে যদি আঘাত হানে, আপনার দেবদেবীদের নিয়ে ঠাট্টা করে তাহলে সেটা ঐ ব্যক্তির সমস্যা এবং এর দায়ভার সব ঐ ব্যক্তির, ইসলামের নয়।

কু'রআন আমাদের শিক্ষা দেয় আমরা যেন অন্য ধর্মের দেবদেবী এবং তাদের বিশ্বাস নিয়ে ঠাট্টা মশকরা কিংবা গালি-গালাজ না করি। কেননা, প্রত্যেক ধর্মের মানুষই তাদের নিজেদের ধর্ম এবং বেছে নেওয়া পথকে নিজের জন্যে শোভন মনে করে। আমরা যদি তাদের ধর্ম এবং ইলাহ নিয়ে গালি-গালাজ করি তবে, তারাও হয়ত নিজেদের শিরক থেকে আরেকটু অগ্রসর হয়ে আমাদের একমাত্র ইলাহ সর্বশক্তিমান আল্লাহকে নিয়ে গালি-গালাজ করবে। অন্যের ইলাহের প্রতি আমাদের গালি-গালাজ মূলত পরোক্ষভাবে আল্লাহকে গালি দেয়ার কারনে পরিণত হবে এবং এ গালির জন্য মূলত আমরা নিজেরাই দায়ী হব। তাই আমাদেরকে এমন আচরন থেকে বিরত থাকার জন্য কু'রআনে সূরা আনআমের ১০৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা'আলা বলেছেন-

"আর ( হে ঈমানদারগণ!) এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিয়ো না৷ কেননা, এরা শিরক থেকে আরো খানিকটা অগ্রসর হয়ে অজ্ঞতাবশত যেন আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে৷ তো এভাবে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের কার্যক্রমকে সুশোভন করে দিয়েছি৷ তারপর তাদের ফিরে আসতে হবে তাদের রবের দিকে৷ তখন তিনি তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে তাদেরকে জানিয়ে দেবেন৷"

অমুসলিম ব্রাদার ইসলাম আপনাকে কতটুকু মর্যাদা দিয়েছে একটু কষ্ট করে আপনার মুল্যবান সময়টুকু খরচ করে ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখুন তাহলেই আপনার সব ভ্রান্ত ধারণা মিটে যাবে।
একটা ছোট্ট ঘটনা উদাহরণ হিসেবে বলি তাহলে আরো ক্লিয়ার হবে।

খলীফা (নেতা, শাসক) হযরত আলী (রা) এর সময়কার ঘটনা। হযরত আলী (রা) তখন সমগ্র মুসলিম বিশ্বের খলীফা। শুরাইক একজন দেশের কাজী বা প্রধান বিচারপতি। হযরত আলী (রা) এর একটি ঢাল (সমরাস্ত্র) হারিয়ে যায় এবং এক ইহুদী জিম্মি সেটি কুড়িয়ে পায়। হযরত আলী (রা) সেটা ইহুদীকে ফেরত দিতে বললে সে সেটা ফেরত দিতে অস্বীকার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হযরত আলী (রা) বিচারকের কাছে বিচার দেন সেই ইহুদীর নামে। শুরাইক বা প্রধান বিচারপতি তখন হযরত আলী (রা) এবং ইহুদী দুজনকেই ডেকে পাঠান। এরপর তাদেরকে শুরু করা হয় জেরা।

বিচারক শুরাইক ইহুদিকে বললেন, এই ঢালটা কি আপনার ?
ইহুদীঃ ঢালটা যে আমার তার প্রমান হচ্ছে ঢালটা আমার হাতে।
বিচারক শুরাইক আলী (রা) কেঃ আপনার কি কোন সাক্ষী আছে যাতে প্রমানিত হয় ঢালটি আপনার ?
আলী (রা): হ্যা আছে। আমার ছেলে হাসান (রা) এবং পরিচারক কানবার।
বিচারক শুরাইকঃ আপনার পরিচারক কানবার এর সাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য কিন্তু আপনার ছেলে হাসান (রা) এর সাক্ষী গ্রহনযোগ্য নয়।
আলী (রা) তখন বললেন: আপনি কি এই হাদিস শোনেননি যে হাসান এবং হোসেন জান্নাতের যুবকদের সর্দার ? এরপরেও তার সাক্ষী গ্রহনযোগ্য নয় ?
বিচারক শুরাইক : হ্যা শুনেছি তবে পিতার ক্ষেত্রে পুত্রের সাক্ষ্য আমি গ্রহনযোগ্য মনে করি না তাই এই রায় আমি ইহুদীর পক্ষে দিলাম।
আলী (রা): আমি এই বিচার মেনে নিলাম।

আলী (রা) বিচার মেনে নেবার পর ঢালটি ইহুদিকে দিয়ে দেয়া হয়। ইহুদি এতে এত আশ্চর্য এবং মুগ্ধ হন যে উনি স্বীকার করেন যে ঢালটি আলি (রা) এর এবং ঢালটি ফেরত দিয়ে দেন। এরপর বলেন- আপনার দ্বীন-ধর্ম সত্য। মুসলমানদের বিচারক রায় দেন বর্তমানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি এদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে আর তিনি বিনা তর্কে মাথা নত করে সেটা মেনে নেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রসুল এবং তখনি ইহুদি ইসলাম গ্রহন করলেন। সুবহান'আল্লাহ। ইহুদীর এভাবে ইসলাম গ্রহন করায় আলী (রা) এতো খুশী হলেন যে তিনি তাকে ঢালটা উপহার হিসেবে দিয়ে দিলেন। উল্লেখ যে তখনকার দিনে ঢাল মুল্যবান সমরাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হত।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×