যতই যৌতুকবিরোধী আন্দোলন হোক আর যতই যৌতুকের বিরদ্ধে আইন হোক, যৌতুক ঠিকঠাক মতোই তার আসনে বসে আছে এবং এ প্রথা কখনো বিলুপ্ত হবে বলে মনে হয় না। অশিক্ষিতদের কথা না হয় বাদ দিলাম, শিক্ষিত এমন কি উচ্চশিক্ষিত সমাজের সম্মানিত যারা অন্যদের বিচার-আচার করেন তারাও যৌতুককে খারাপ দৃষ্টিতে তো দেখেনই না বরং এটাকে সম্মানের জিনিস মনে করেন। কন্যাপক্ষ থেকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যেকোনভাবে দেয়া, কোন জিনিসকেই যৌতুক বলা হয়। দেখা যায় বিয়ের সময় পাত্রপক্ষ বলে, আমরা কখনো যৌতুক চাই না, নেবোও না। শুধু মেয়েটাকেই চাই। কিন্তু বিয়ের পর অন্যদের উদাহরণ টেনে বলা হয়, ‘এ বউ বাপের বাড়ি থেকে এটা এনেছে, ঐ বউ ঐটা এনেছে, এগুলো আনা এক ধরনের সম্মান। না চাইলেও মেয়ের সুখের জন্য এগুলো দিতে হয়, ঐ বউটার কেমন বাপ-মা কিছুই দেই নি মেয়াটাকে।’
সারাক্ষণই মেয়েটার সামনে যখন শ্বশুরবাড়ির লোকজন এরকম ঘ্যানর ঘ্যানর করতে থাকে তখন বাধ্য হয়েই মেয়ের বাবা-মা কষ্ট করে হলেও অন্যায় জেনেও তা দেয়। তবে মেয়েটি যদি শিক্ষিত হয় তবে এই যৌতুক এনে বিবেকের দংশনে ধ্বংমিত হতে থাকে। ঘৃণা জন্মে তার স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ি এমনটি নিজের ওপর মেয়ে হয়ে জন্মেছে বলে। একটা প্রকৃত শিক্ষিত মেয়ের এই ভাবনাটা স্বাভাবিকভাবেই আসে যে, ছেলেকে যে ভাবে বাবা-মা লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছে মেয়েকেও ঠিক সেভাবেই লেখাপড়া শেখানো হয়েছে। তাহলে কেন ছেলের জন্য বাবা-মা যৌতুক নেবে আর মেয়ের বাবা-মা তার মেয়েকে দিয়ে দেবে অন্যকে, দামি জিনিসপত্রও দেবে, মেয়ের প্রতি কোন অধিকারই বাবা-মার থাকবে না, আবার মেয়ে যদি চাকরি করে তার বেতনের ওপরও তাদের কোন অধিকার থাকবে না, থাকলে এর জন্য তাদের লোভী বলে গণ্য করা হবে, এটাকে লজ্জিত মনে করা হবে! অথচ এই বেতন স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ি নির্বিগ্নে তাদের নিজের অধিকার বলে ভোগ করবে! এজন্যই বুঝি মানুষ পুত্র-সন্তান কামনা করে।
আমার এক কলিগ বান্ধবীর বাবা তার মেয়ের শাশুড়িকে বলেছিলেন, বেয়াইন আমার সম্পদ আমার মেয়েগুলো। তাদের সব চাওয়া আমি পূরণ করার চেষ্টা করেছি, যা চেয়েছে দিয়েছি। খুব আদর করে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছি। কোন ব্যাংক ব্যালেন্স করতে পারিনি। শাশুড়ির জবাব ছিল, ‘এটা ঠিক হয় না। মেয়েদের এত আদর ভালো না। মেয়েদের বিয়ের জন্য কষ্ট করে হলেও কিছু জমানো উচিত ছিল। আপনার যদি ছেলে থাকতো তাহলে সে অভিশাপ দিতো আপনি তার জন্য কিছুই রেখে যাননি বলে।’ যৌতুক- সেই শাশুড়ির কথা- আমরা কখনো যৌতুক চাই না। কিন্তু মেয়ের মুখের জন্য সব বাবাই কিছু আসবাবপত্র দেয়। আমার এক ইঞ্জিনিয়ার ভাইপো তার বিয়ের সময় কিছুই চায় নি। তারপরও ঘরভর্তি করে মালামাল দিয়েছে তার শ্বশুর।
এটা হচ্ছে মেয়ে জামাইকে মূল্যায়ন করা। আর কিছুই নয়। আশ্চর্য আমরা। এ কোন্ যুগে বাস করছি? মেয়ে যেমনই হোক শিক্ষিত, অশিক্ষিত, বোকা, বুদ্ধিমতী, গৃহিণী, চাকরিজীবী সবার কষ্ট একই। সীমাহীন কষ্টের জ্বালা বুকে নিয়ে বেঁচে থাকে তারা। যারা এ কষ্ট মেনে তিতে পারে না তারা মৃত্যুকে আপন করে নেয়। বাকিরা মৃত্যুকেই মেনে মনে কামনা করতে থাকে। তাদের কোন স্বপ্ন নেই, কোন আশা নেই। একটা পুরুষ যেমন স্বপ্ন অনুযায়ী সামনে এগিয়ে যায়, মেয়েরা তা কখনো পারে না। একেই কি বলে সমান অধিকার।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৯:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




