বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন থেকে নারী-পুরুষের বৈষম্য চলে আসছে এবং বর্তমানেও তা অব্যাহত আছে। সামাজিক প্রথা অনুযায়ী পারিবারিকভাবে খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও ছেলেদের পরে মেয়েদের অবস্থান। পরিবারে মেয়েরাই খাবার তৈরি করে এবং পরিবেশন করে। মজার ব্যাপার হলো, সামাজিক ও পারিবারিক রীতি অনুযায়ী সমাজের সর্বত্র পুরুষকে আগে খাইয়ে দিয়ে তার পর অবশিষ্ট থাকলে মেয়েরা ভাগ পায়। কিন্তু ভালো ও মজাদার খাবার ফুরিয়ে গেলে উচ্ছিষ্টটুকুই তাদের ভাগ্যে জোটে। পরিবারে ছেলে এবং মেয়েরা একসঙ্গে খেতে বসলে দাদিরা, মায়েরা ছেলেটিকে বেশি খাবার দেয়, ভালো ভালো খাবার দেয়। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেন_ ছেলে মানুষকে তাড়াতাড়ি বড় হতে হবে, তাকে বেশি লেখাপড়া করতে হবে ইত্যাদি।
একইভাবে কোনো পরিবারে যদি একটি ছেলে ও একটি মেয়ে স্কুলে বা কলেজে পড়ে এবং সে পরিবারে কোনো কারণে আর্থিক টানাপড়েন দেখা দিলে প্রথমেই মেয়েটিকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেয়া হয়। মনে করা হয়, মেয়েটি বড় হলে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে। কিন্তু ছেলেটি বড় হলে, শিক্ষিত হলে চাকরি করবে এবং পরিবারকে সাহায্য করবে। তাই মেয়ের চেয়ে ছেলেকে স্কুলে পাঠানোই জরুরি। অথচ সমাজের বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো। একটি ছেলে শিক্ষিত হলে, ভালো চাকরি করলে বাবা-মায়ের কপাল ভালো হলে ছেলেটি বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকবে, পরিবারকে সাহায্য করবে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাবা-মায়ের এমন ভাগ্য কমই জোটে। অন্যদিকে একটি মেয়ে শিক্ষিত হয়ে চাকরি করলে সে নিশ্চিতভাবে বাবা-মাকে সাহায্য করবে, এমনকি শ্বশুরবাড়ি গেলেও সে উভয় পরিবারকেই সাহায্য করে।
আমাদের সমাজে যে নারী বৈষম্য তথা লিঙ্গ বৈষম্য চলে আসছে তার জন্য পারিবারিক ও সামাজিক রীতিনীতি বা দৃষ্টিভঙ্গি প্রধানত দায়ী। দেশে নারীদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান বাড়লেও সামাজিক কুপ্রথা, পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পুরুষের অসহযোগিতা ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন আঙ্গিকে সমাজে নারী বৈষম্য থেকেই যাচ্ছে। ফলে বলতেই হয় সমাজ থেকে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে হলে পুরুষকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে এবং একইভাবে নারীদেরও সব ক্ষেত্রে তাদের অধিকার আদায়ে সচেতন হতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৯:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




